আগস্ট ২৪, ২০২৪, ০৫:০২ এএম
ফেনী-কুমিল্লার পানি নামা সময়সাপেক্ষ। প্রায় সাড়ে ১১ হাজার দখলদারের হাতে গোমতী, ফেনী, মুহুরি, সিলোনীয়া নদীর প্লাবন ভূমি। আর একেই মূল সংকট বলছেন নদী ও জলবায়ু গবেষকেরা। এসব নদী দখলমুক্ত না হলে আগামীতে ছোট বন্যায়ও হবে বড় ভোগান্তি।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যার মাত্র দুই মাস পরই আবার দেশের দক্ষিণাঞ্চলে নতুন করে দেখা দিয়েছ বন্যা। ২১ আগস্ট মধ্যরাত থেকে হঠাৎ বন্যার পানি আসতে শুরু করে। ফেনী, নোয়াখালী এবং কুমিল্লায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়ে ফেনীর সীমান্তবর্তী উপজেলা পরশুরাম ও ফুলগাজী। মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে তলিয়েছে লোকালয়।
জলবায়ু গবেষকরা বলছেন, এইসব জেলার বন্যার পানি সিলোনীয়া, মুহুরি, কহুয়া, ডাকাতিয়া নদী হয়ে বঙ্গোপসাগরে মেশে। এর মধ্যে সিলোনীয়া, মুহুরি, কহুয়া নদীর পানি মুহুরি প্রজেক্ট দিয়ে ভাটিতে নামে। এই বাঁধটি ত্রুটিপূর্ণভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। যার প্রভাবে এই এলাকার পানি নামতে সময় নেয়।
বন্যা ও বাঁধ গবেষক ড. আমীর হোসাইন বলেন, “মুহুরী ও কহুয়া নদীতে বাঁধ নির্মাণই ছিল ত্রুটিপূর্ণ। বাঁধটিকে ঠেলতে ঠেলতে নদীর তীরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। যেখানে নদী ৩০ থেকে ৪০ মিটারের বেশি চওড়া নয়। ফলে ওই নদী ভারী ফ্ল্যাশ ফ্লাড ফেস করার ক্ষমতা রাখে না।”
জলবায়ু গবেষকরা বলছেন, প্রায় তিন দশক পর কুমিল্লার গোমতী নদীর বাঁধ ভেঙে বন্যা দেখা দিয়েছে। গেল কয়েক দশকে কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষীপুরে সাড়ে এগার হাজার দখলদার নদী ও খাল ভরাট করেছে।
রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ এজাজ বলেন, “কুমিল্লা, নোয়াখালী ও ফেনীর নদীগুলোতে সরকারি হিসাব অনুযায়ী প্রায় ১১ হাজার ৫৩৭ জন দখলদার রয়েছে। এই অঞ্চলের বাজার-ঘাট, রাস্তার পাশে এখন আর খাল নেই। অধিকাংশ খাল ভরাট হয়ে গিয়েছে। এসব খালের পাড়ে বাড়ি-ঘর, দোকান-পাট ইত্যাদি নির্মাণ হচ্ছে বা হয়েছে। স্থানীয়দের মধ্যে যারা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী তারাই এসব নদী-খাল দখলে নিয়েছে। ফলে ঢলের পানি নামার কোনো জায়গা নেই। এ কারণেই বন্যার পানি নামতে লম্বা সময় লাগবে।”
গবেষকেরা বলছেন, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের ২০২০ সালের তথ্য বলছে, দেশে ৬০ হাজারেরও বেশি নদী ও জলাশয় দখলদার রয়েছে। ফলে নদী হারিয়েছে স্বাভাবিক প্লাবন এলাকা, এ কারণেই তীব্র হয় বন্যা।