জানুয়ারি ২৮, ২০২৪, ০৪:০৭ পিএম
শ্রীমতি কামবালা। দিনাজপুরের বিরল উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নের গোদাবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা তিনি। বয়স পেরিয়েছে নব্বইয়ের ঘর। কমে এসেছে শ্রবণ শক্তি। আধো আধো বোলে প্রকাশ করেন মনের ভাষা। লাঠি ধরে হেঁটে বেড়ান তিনি।
গেল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দিনাজপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য খালিদ মাহমুদ চৌধুরী যখন প্রচারণা চালাচ্ছিলেন, তখন শ্রীমতি কামবালা এসেছিলেন তাঁর কাছে।
বিরল উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নের কালিয়াগঞ্জ বাজারে নির্বাচনি পথসভায় শতশত মানুষের বাধা উপেক্ষা করে প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন তিনি। হাতে তুলে দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর ছবি সম্বলিত একটি পাঁচ টাকার নোট। বলেছিলেন নির্বাচনে ব্যয় করতে আর নৌকা মার্কায় ভোট দিতে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে প্রথমবারের মত বাড়িতে গিয়েই শ্রীমতি কামবালার সাথে দেখা করতে গেলেন দ্বিতীয়বারের মতো নৌপ্রতিমন্ত্রী হওয়া খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। উপহার হিসেবে নিয়ে গিয়েছিলেন সেই পাঁচ টাকা দেয়ার সময়কার বাঁধাই করা ছবি, চাদর ও শাড়ি।
প্রতিমন্ত্রীকে দেখতে পেয়ে কামবালা বলেন, “মুই খুব খুশি হইচো, মোর বেটা মোক দেখিবার আইচ্চে।”
এ সময় কামবালা খালিদ মাহমুদ চৌধুরীকে বলেন, “বেটা তুই মোর বাড়িত আইচ্চি, মুই খুব খুশি হইচু, মোর ঘড়ত বসিবার জায়গা নাই, আগিনাত বস। মোড়তায় এত কিছু আনিবার কি দরকার ছিল।”
উত্তরে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “আমি তো ছেলের মতই, তাই দেখিবা আইচ্চু।”
এই নির্বাচনে শ্রীমতি কামবালা তাঁর জন্য পবিত্র ও সবচেয়ে দামি ভোটার উল্লেখ করে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ভোটাধিকারের যে গুরুত্ব সেটি এই নব্বই ঊর্ধ্ব মানুষ বুঝিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, সত্য ও সুন্দরের জন্য কোনোকিছু আটকায় না কামবালা সেটি বুঝিয়ে দিয়েছেন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে।
এ সময় নৌপ্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, শেখ হাসিনা মানুষের জন্য যে কাজ করছেন এটা নব্বই উর্ধ্ব একজন মানুষের মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু যে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করেছেন এর স্বাক্ষী হয়ে আছেন কামবালা। সেই যে বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসেছেন, নৌকাকে ভালোবেসেছেন, আজকে নব্বই বছরেও বার্ধক্য উনাকে হার মানাতে পারেনি, বার্ধক্য উপেক্ষা করে নৌকা মার্কার প্রচারণা সভায় অংশ নিয়েছেন। এটা আমাদের জন্য একটা শিক্ষা।
দিনাজপুরের বিরলের এক পাড়া গাঁয়ে থাকেন শ্রীমতি কামবালা। যেখানে বেশির ভাগ বাড়িতেই ছনের ঘর, যেগুলোর একটির সাথে আরেকটির গা লাগানো। কোনো বাড়িতে নেই উঠোনও।
তবুও খালিদ মাহমুদ চৌধুরীকে কাছে পেয়ে যেন ছেলে মায়ের কাছে এসেছে এমন আনন্দ প্রকাশ করলেন শ্রীমতি কামবালা। বাড়ির সামনে এক টুকরো খালি জায়গায় বসানোর ব্যবস্থা করলেন। আপ্যায়ন করলেন ঘরে বানানো পিঠা ও মিষ্টি দিয়ে।
শুধু তাই নয়, নির্বাচনে জয় লাভ করে তাঁর সাথে দেখা করতে আসা খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর হাতে তুলে দিলেন পঞ্চাশ টাকার একটি নোট।
শ্রীমতি কামবালার হাত ধরে ছেলের মতোই তার পাশে পুরোটা সময় ছিলেন নৌপ্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। শ্রীমতিও পরিচয় দেন তার ছেলে হিসেবে। বলেন ছেলে এসেছে মায়ের কাছে।