ফেনীতে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতচিহ্ন স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। পানির নিচ থেকে ভেসে উঠছে হলুদ, আদা, আউশ, আমন ও শরৎকালীন বিভিন্ন সবজির ক্ষেত। দেড় মাসের ব্যবধানে তৃতীয় দফায় ভয়াবহ বন্যায় জেলার ৬ উপজেলায় শুধু কৃষিতেই ৪৫১ কোটি ২০ লাখ টাকারও বেশি ক্ষতি হয়েছে। এ-অবস্থায় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন দুই লাখেরও বেশি কৃষক।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, বন্যায় জেলার ৩০ হাজার ৩৫২ হেক্টর ফসলি জমির ক্ষতি হয়েছে। যা মোট ফসলি জমির ৭৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ। এর মধ্যে ১ হাজার ৮৬৫ হেক্টর আমন বীজতলা, ২৬ হাজার হেক্টর আমন, ১ হাজার ৮৫৪ হেক্টর আউশ, আবাদকৃত ৫২৫ হেক্টর শরৎকালীন সবজির পুরো অংশ, ৬৯ হেক্টর ফলবাগান, ৭ হেক্টর আদা, ১৬ হেক্টর হলুদ ও ১৬ হেক্টর আখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বন্যায় ক্ষতির সম্মুখীন হওয়া কৃষকরা জানান, ভয়াবহ খাদ্য সংকটের সম্মুখীন হতে যাচ্ছেন তারা। কৃষক সাইদুল ইসলাম বলেন, জমির ফসল নষ্টের পাশাপাশি ঘরে থাকা ধান-চালও পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। নতুন করে আবাদের মতো কোনও পরিস্থিতি নেই। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আমাদের পাশে না দাঁড়ালে ভবিষ্যতের পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেবে।
ফেনীর পরশুরামের কাউতলী গ্রামের কৃষক আলী আহম্মদ বলেন, বছরের প্রথম দফায় বন্যায় আমন বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারপর আবার বীজ বপন করে আমন আবাদের কিছুদিন পর বন্যার পানিতে সব ভেসে যায়। দেড় মাসের মধ্যে তৃতীয় দফার এই বন্যায় সবগুলো ফসলি জমি এখন বালুর স্তূপ হয়ে আছে। আবাদ করে খাওয়ার মতো অবস্থা আর নেই।
দেড় মাসের ব্যবধানে তৃতীয় দফার এই বন্যায় কৃষিতে বড় ধরনের ক্ষতির কথা জানিয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. একরাম উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, “বন্যায় কৃষিতে বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। আমাদের জেলা কার্যালয়ও বুক পানিতে নিমজ্জিত ছিল। এরপরও আমরা মাঠ-পর্যায়ে কৃষকদের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ ও তাদের নানা পরামর্শের মধ্য দিয়ে পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। ক্ষয়ক্ষতির তালিকা করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। কৃষকদের আমনের চারা দেওয়ার ব্যাপারে দাপ্তরিকভাবে আলোচনা উঠে এসেছে। এ ছাড়া এই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে আগাম জাতের কিছু ফসল আবাদের বিষয়েও কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।”