দলীয় বোঝাপড়া ও সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপের অভাবে বিএনপিতে দেখা দিয়েছে ভাঙন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দিচ্ছেন বলে জোর গুঞ্জন পাওয়া যায়। বুধবার এক অনুষ্ঠানের মধ্যে যোগদান কর্মসূচি হবে। এদিকে বিএনপি থেকে বহিস্কার হলেও কুমিল্লার সাবেক মেয়র মনিরুল ইসলাম সাক্কু আপাতত নতুন কোনো দল নিয়ে ভাবছেন না বলে জানান।
বুধবার বেলা ১১টায় তৃণমূল বিএনপির উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাব অডিটোরিয়ামে দলে যোগদান অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।
এ অবস্থায় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের এক ঝাঁক সাবেক ও বর্তমান নেতা তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দিচ্ছেন বলে খবর চাউড় হয়েছে।
সারাদেশ থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অসংখ্য নেতাকর্মী, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা, সাংবাদিক, আইনজীবী আনুষ্ঠানিকভাবে তৃণমূল বিএনপিতে যোগদান করবেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন দলের চেয়ারপারসন শমশের মুবিন চৌধুরী। বিশেষ অতিথি থাকবেন তৃণমূল বিএনপির নির্বাহী চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট অন্তরা সেলিমা হুদা, তৃণমূল বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারপারসন মেজর (অব.) ডা. শেখ হাবিবুর রহমান। এতে প্রধান বক্তা থাকবেন তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার।
তবে মেজর হাফিজের যোগদানের বিষয়ে দুই পক্ষই বিষয়টি এড়িয়ে যান।
তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম বলেন, কাল (বুধবার) চমক দেখতে পারবেন । কোন একক ব্যক্তি নির্ভর হবে না এই দল। এরই ধারাবাহিকতায় অনেকেই দলে আসবেন। কোনো লুটপাট এবং মানুষের ওপর নির্যাতনের ইতিহাস নেই, এমন যে কাউকে আমরা দলে নেব। তবে শর্ত হলো জনগণের জন্য কাজ করতে হবে।
এদিকে যোগদানের বিষয়ে জানতে চাইলে মেজর হাফিজও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
দল থেকে মূল্যায়ন না হওয়ার দাবি করা হাফিজ এর আগে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে দল থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পেয়েছিলেন। সাবেক পানিসম্পদ মন্ত্রী ১৯৯১ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হন। এর পর বিগত ২২ বছর ধরে দলের অন্যতম ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন হাফিজ। ৬ বার সংসদ সদস্য হয়েছেন তিনি।
এদিকে কুমিল্লার সাবেক মেয়র বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত মনিরুল ইসলাম সাক্কু তৃণমূল বিএনপিতে যোগদান করবেন না বলে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, বহিষ্কার করার পর আমি কারণ দর্শানের চিঠিতে উত্তর দিয়েছি। তবে এরপর কোনো বিস্তারিত বলতে পারছি না। সব মিলিয়ে এখন আমি স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সাথে যোগাযোগ রাখছি। আপাতত কোথাও যেতে চাচ্ছি না।
অন্যদিকে আগস্টে নিবন্ধন পাওয়া ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন’ নামে নতুন আরেকটি দলেও ভিড়ছেন বিএনপির সাবেক নেতারা। বিষয়গুলোকে বিএনপি নেতারা প্রকাশ্যে গুরুত্ব না দিলেও ভেতরে ভেতরে সতর্ক নজর রাখছেন বলে শোনা যাচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপির ভেতরের সিদ্ধান্তহীনতা, ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে দল ছাড়ছেন অনেকে।
এদিকে রিমান্ডে যাবার আগে বিএনপির এক শীর্ষ নেতৃত্ব দ্য রিপোর্টকে জানায়, বিভিন্ন সময়ে বহিষ্কৃত নেতৃবৃন্দ যারা রয়েছে তাদের ফিরিয়ে আনার কথা কয়েক দফা করা হয়েছিল। কিন্তু ইতিবাচক কোনো সিদ্ধান্ত এখনও নেয়া হয়নি।
তবে বিএনপির অনেক নেতাকর্মী আটক ও গ্রেফতার হতে পারে। তাই দলীয় শক্তি বাড়াতে তাদের নেয়ার পক্ষে রয়েছে অনেকে বলে জানান তিনি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন অর রশিদ বলেন, নির্বাচনের আগে রাজনীতিতে নানা সমীকরণ আসবে। অনেকেই দলীয় মূল্যায়ন না পাওয়ায় ভিন্ন পথে যাবে। তারা হয়ত পরবর্তীতে জোটে গিয়ে তাদের আসন নিশ্চিত করতে পারে।
নির্বাচনী রাজনীতিতে ছোট দল ও জোট প্রভাব রাখলেও সামগ্রিক রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ছাড়া কেউ খুব একটা তাৎপর্য বহন করে না বলেও জানান তিনি।
অবরোধে নিষ্ক্রিয় হাই কমান্ড
বিএনপির অবরোধে শীর্ষ নেতৃবৃন্দের অবস্থানও নড়বড়ে। অধিকাংশ রিমান্ডে কারাগারে রয়েছে। কিন্তু যেসব নেতৃবৃন্দ এখনও কারাগারের বাহিরে তারা অনেকটাই দূরত্ব বজায় রাখছেন। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তালা না ঝুললেও গুলশানের চেয়ারপার্সনের কার্যালয়েও এখন তালা ঝুলছে। বিভিন্ন নেতাকর্মীরা এসে কোথায় দেখা করবে সে বিষয়ে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের লুকোচুরি। মিরপুর কালশীতে কয়েকটি স্থানে ভিন্ন ভিন্ন আকারে নেতাকর্মীদের সাক্ষাৎ হয়ে থাকে। তবে অবরোধ কিংবা কর্মসূচিতে কী ধরনের পরিকল্পনা হবে সেগুলোর বিস্তারিত জানতে পারছে না কর্মীরা।
এদিকে আগামী ১২ নভেম্বর থেকে বিএনপির কর্মসূচিতে পরিবর্তন আসতে পারে। তবে অবরোধের পাশাপাশি ঠিক কী ধরনের পরিবর্তন আসবে সে বিষয়ে এখনও জানা যায়নি।