সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৫, ০৩:১০ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
আফগানিস্তান সফরে তালবান সরকারে শ্রম ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক মন্ত্রী মোল্লা আবদুল মানান ওমারির সঙ্গে বৈঠক করেছেন খেলাফত মজলিশের আমির মামুনুল হকের নেতৃত্বে সাতজনের একটি প্রতিনিধি দল।
মোল্লা আবদুল মানান ওমারি হলেন প্রয়াত তালেবান প্রধান মোল্লা ওমরের ভাই। তালেবানের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও আধ্যাত্মিক নেতা ছিলেন মোল্লা মোহাম্মদ ওমর। তিনি ১৯৯৬ সালে গঠিত তালেবান সরকারের প্রধানও ছিলেন।
বৃহস্পতিবার রাতে আফগানিস্তান থেকে ফেইসবুকে লাইভে আসেন মামুনুল হক। কাবুলে মোল্লা আবদুল মানান ওমারির সাথে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করার কথা তিনি বলেন।
বৈঠকে ‘যথাযথ কূটনৈতিক’ সম্পর্কের মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্কোন্নয়নে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে মামুনুল বলেন, চিকিৎসা, শ্রম বাজার ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে আমদানির-রপ্তানির জন্য আফগানিস্তান হতে পারে ‘একটি সম্ভাবনাময় দেশ’।
বিশেষ করে যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে চিকিৎসা খাতে বাংলাদেশ ‘জনশক্তি রপ্তানি করতে পারে’ বলে তিনি মত দেন।
এছাড়া গাজায় হামলা থামাতে মুসলিম উম্মাহর নেতৃত্বের তাগিদ দিয়েছেন মামুনুল হক।
বাংলাদেশ থেকে যাওয়া ওলামা প্রতিনিধি দলটি বর্তমানে ‘কাবুল স্টার হোটেলে’ আছেন।
মামুনুল হকের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে রয়েছেন হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির আব্দুল হামিদ (মধুপুরের পীর), আব্দুল আউয়াল, আব্দুল হক, হাবিবুল্লাহ মাহমুদ কাসেমী, মনির হোসাইন কাসেমী ও মাহবুবুর রহমান।
ফেইসবুক লাইভে মামুনুল হক বলেন, “ইতোমধ্যে আপনারা বিভিন্ন গণমাধ্যমসূত্রে জানতে পেরেছেন, যে আমরা বাংলাদেশ থেকে শীর্ষ আলেমদের একটি প্রতিনিধি দল, বিভিন্ন উপলক্ষে পবিত্র বায়তুল্লাহ শরীফে (মক্কা) ওমরাহ শেষে দুবাই হয়ে ইমরাতে ইসলামিয়ার রাজধানী কাবুলে আগমন করেছি।”
তিনি বলেন, “আজকে (বৃহস্পতিবার) গুরুত্বপূর্ণ একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে আমরা মিলিত হয়েছি। ইমারাতে ইসলামিয়ার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়, শ্রম ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মোল্লা আবদুল মানান; যার পরিচয় হয়ত ইতিমধ্যে আপনারা অনেকে শুনেছেন। ইমরাতে ইসলামিয়ার প্রথম আমিরুল মোমেনিন মোল্লা মোহাম্মদ ওমরের ছোট ভ্রাতা তিনি।
“তিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন। অত্যন্ত বিনয়ী, সজ্জন এবং একজন প্রজ্ঞাবান আলেম ব্যক্তিত্ব। বিনয়ের চরম পরাকাষ্ঠা প্রদর্শিত হতে দেখেছি আমরা তার আচরণে।”
মন্ত্রী আবদুল মানানের সাথে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক হয়েছে জানিয়ে মামুনুল বলেন, “দুই রাষ্ট্রের আলেম সমাজের মধ্যে যে পারস্পরিক এলমি মত বিনিময়, সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয় আলোচনা করেছি। সেই সাথে মুসলিম উম্মাহর বৃহত্তর স্বার্থে কীভাবে আমাদের মধ্যে উম্মাহকেন্দ্রিক সম্পর্ক উন্নয়ন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
“মুসলিম উম্মাহর আজকের যে সংকটগুলো তা নিয়েও আন্তরিক পরিবেশে আলোচনা করেছি।”
বৈঠকে আফগানিস্তানের শ্রম ও সমাজ কল্যাণ বিভাগের মহাপরিচালকও উপস্থিত ছিলেন বলে মামুনুল হক জানিয়েছেন।
আফগান সরকার শিক্ষার বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ করে প্রকৌশল, প্রযুক্তি ও চিকিৎসা বিজ্ঞানে দক্ষ জনশক্তি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আনার উদ্যোগ নিয়েছে জানিয়ে মামুনুল হক বলেন, “সে জায়গা থেকে ইমারাতে ইসলামিয়ার মন্ত্রীর আশা হল, একটি মুসলিম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এ সকল ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে।
“চিকিৎসা ক্ষেত্রে, শ্রম বাজারে ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে আমদানির-রপ্তানির জন্য একটি সম্ভাবনাময় দেশ হতে পারে ইমারাতে ইসলামিয়া।”
এই সফরে আফগানিস্তানের একাধিক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীলদের সাথে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন মামুনুল হক।
যুদ্ধবিধস্ত আফগানিস্তানে পুর্ননির্মাণ ও পুনর্গঠনের যে কার্যক্রম চলছে, সেটাও দেখার কথা জানিয়ে মামুনুল বলেন, “সেখানে আমাদের কোনো পরামর্শ থাকলে সেগুলো আমরা কর্তৃপক্ষকে দেব।”
তিনি বলেন, প্রায় অর্ধ শতাব্দী ধরে ‘যুদ্ধবিধস্ত বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসিলম দেশ’ আফগানিস্তানে মুসলিম উম্মাহর সদস্য এবং ‘মুসলিম জাতি’ হিসেবে বাংলাদেশ রাষ্ট্র ও বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের বিশেষ করে আলেম সমাজের অনেক দায়িত্ব, কর্তব্য ও সুযোগ রয়েছে।
“আফগানিস্তানের বর্তমান সরকার এদেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন সেক্টরের উন্নয়নের জন্য আন্তর্জাতিক বহু অঙ্গন থেকে সহযোগিতা নিচ্ছেন। আমরা জানি, ইতোমধ্যে পৃথিবীর অন্যতম শক্তিধর রাষ্ট্র রাশিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে তাদেরকে স্বীকৃতি প্রদান করেছে। এবং অসংখ্য দেশের সাথে তাদের বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নত হয়েছে।
“এমনকি আশ্চর্যজনক বিষয় হল, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সাথেও ইমারাতে ইসলামিয়ার যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, সে তুলনায় আমাদের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশের সাথে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের হার হতাশাজনক।”
গত অর্থ বছরে বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের মধ্যে ৫০ মিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হওয়ার তথ্য তুলে ধরে মামুনুল হক বলেন, “অথচ বাংলাদেশের বাণিজ্যের জন্য এটি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় একটি জায়গা।”
বাংলাদেশ চিকিৎসা খাতে ‘অভূতপূর্ব উন্নতি সাধন করেছে’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “যুদ্ধবিধস্ত পিছিয়ে পড়া এই আফগানিস্তানের মানুষের বিপুল পরিমাণ চিকিৎসা সেবা প্রয়োজন। তারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে চিকিৎসকদেরকে এখানে আনছে।
“যথাযথ কূটনৈতিক সম্পর্কের মাধ্যমে চিকিৎসা ক্ষেত্রে আমাদের জনশক্তি রপ্তানি করতে পারি। তাহলে একদিকে বাংলাদেশ বৈদেশিক মুদ্রায় সমৃদ্ধ হবে। তারচেয়ে বড় কথা হল, আমরা আফগানিস্তানের বিপুল পরিমাণ চিকিৎসা বঞ্চিত মানুষের চিকিৎসা সহায়তা দিতে পারব।”
ভিডিও বক্তব্যে সৌদি আরব ও পাকিস্তানের মধ্যে হওয়া প্রতিরক্ষা চুক্তির বিষয়টি তুলে ধরে মামুনুল হক বলেন, “এই প্রতিরক্ষা চুক্তি সমস্ত মুসলিম উম্মাহকে আন্দোলিত করেছে। মুসলিম উম্মাহর এখন ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সময়। ফিলিস্তিনের গাজায় যেভাবে পশ্চিমা বিশ্বের সহায়তা নিয়ে নির্মম নির্যাতন, আক্রমণ ও বর্বরতা পরিচালনা করা হচ্ছে তার পাশে উম্মাহর মুসলিম নেতৃত্বকে দাঁড়াতে হবে।
“সেই জায়গা থেকেও আমরা উম্মাহর ঐক্য ও যাবতীয় সংকট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারি।”
বৃহস্পতিবার ওয়াজির আকবর খান পাহাড়ের শীর্ষে মসজিদে আল আকসার আদলে নির্মিত মোল্লা ওমর জামে মসজিদ এবং মসজিদটির পাশে সুবিশাল মিনারে আফগানিস্তানের সর্ববৃহৎ কালেমা খচিত ৪০ মিটার দৈর্ঘ্যের জাতীয় পতাকা দেখার কথাও মামুনুল হক জানান।
আফগানিস্তানে সাম্প্রতিক ভূমিকম্প বিধস্ত এলাকা পরিদর্শনের পরিকল্পনার কথাও তিনি বলেছেন।
আয়োজক ইউকে ভিত্তিক সংগঠন
মামুনুল হকদের এই আফগানিস্তান সফরের মূল আয়োজক যুক্তরাজ্য ভিত্তিক সংগঠন ‘প্রসপার আফগানিস্তান’। আমন্ত্রণ জানিয়েছে আফগানিস্তানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আফগানিস্তান সরকারের রাষ্ট্রীয় আমন্ত্রণে প্রতিনিধি দলটি ওই সফরে গেছে।
ফেইসবুক লাইভে যখন মামুনুল হক কথা বলছিলেন তখন তার পিছনে ‘প্রসপার আফগানিস্তান’ লেখা একটি প্ল্যাকার্ড দেখা যাচ্ছিল।
ভিডিওতে মামুনুল হক বলেন, “আমাদের এই সফরের মূল আয়োজক প্রতিষ্ঠান ইউকে ভিত্তিক একটি বেসরকারি সংস্থা ‘প্রসপার আফগানিস্তান’। সংগঠনটি মুসলিম উম্মাহর বিভিন্ন সমস্যাগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর কল্যাণে বিশেষ করে আফগানিস্তানের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন ধরণের সহযোগিতার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
“তাদের সহযোগিতায় আফগান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে আমাদের সপ্তাহকালব্যাপী এই সফর চলছে।”