নির্বাচন কমিশনের এনআইডি সার্ভার ‘সুরক্ষিত আছে’ জানিয়ে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ কে এম হুমায়ূন কবীর বলেছেন, সাইবার হামলার আশঙ্কায় ১৪ আগস্ট রাত ১২টা থেকে বন্ধ রাখা হয়েছিল এনআইডি সার্ভার। সংশ্লিষ্ট ১৭১টি প্রতিষ্ঠানকে আগেই জানিয়ে দেয়া হয়েছিল। আপাতত সার্ভার নিরাপদ, ভবিষ্যতে কোনো শঙ্কা তৈরি হলে আবারও ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বুধবার (১৬ আগস্ট) দুপুরে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রকল্প পরিচালক জানান, `আমাদের সিকিউরিটি অপারেশন সেন্টার আছে, যেটা সব সময় কাজ করে। কিছু মাইনর থ্রেট আমরা দেখেছি। এগুলো যে কোনো সময়ই আসতে পারে। যে থ্রেট দেখেছি, সেগুলো নেগোশিয়েট করার মতো। আজকে আমরা সবগুলো থ্রেট ইভালুয়েট করলাম। নেগোশিয়েট করা হয়েছে। এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি, সার্ভার চালু করা নিরাপদ। দুপুর ২টার আগে থেকেই চালু করা হয়েছে।`
ইসির সার্ভার থেকে কোনো তথ্য ফাঁস হয়নি দাবি করে এনআইডি ডিজি বলেন, ‘এনআইডি সার্ভারের তথ্যাবলীর ওপরে কোনো রকমের থ্রেট আসেনি। আমাদের সার্ভার থেকে কোনো রকম তথ্য যায়নি। তারপরেও এই বিষয়ে কোনো ত্রুটি বিচ্যুতি পেলে, চুক্তিপত্র বরখেলাপ হলে তা বাতিল করব।’
বেলা ১১টার দিকে নির্বাচন কমিশনের এনআইডি অনুবিভাগের সিস্টেম ম্যানেজার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন বলেন, রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এনআইডি সেবা কিছু সময়ের জন্য বন্ধ আছে।
এনআইডির এক সূত্র বলেন, এটি হ্যাক হয়েছে এমন কোনো আলামত ওয়েবসাইটে নেই। সবদিক খতিয়ে দেখতে মহাপরিচালকের নির্দেশে কারিগরি দল কাজ করছে। তবে হ্যাক হওয়ার আশঙ্কা কম।
কিছুদিন আগে বাংলাদেশে সরকারি একটি ওয়েবসাইট থেকে নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁসের খবর দেয় আমেরিকান ওয়েবসাইট টেকক্রাঞ্চের ওই খবরে বলা হয়, বাংলাদেশি নাগরিকদের সম্পূর্ণ নাম, ফোন নম্বর, ইমেইল ঠিকানা এবং জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বরসহ ব্যক্তিগত তথ্য উন্মুক্ত হয়ে আছে ইন্টারনেটে।ঘ
টনাচক্রে ২৭ জুন লাখ লাখ বাংলাদেশির তথ্য ইন্টারনেটে উন্মুক্ত হওয়ার বিষয়টি ধরতে পারেন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান ‘বিটক্র্যাক সাইবার সিকিউরিটি’র গবেষক ভিক্টর মার্কোপোলোস হয়ে কাজ করেন। ‘বাংলাদেশ ই-গভর্নমেন্ট কম্পিউটার ইন্সিডেন্ট রেসপন্স টিমের (বিজিডি ই-গভ সার্ট) সঙ্গে যোগাযোগও করেন।
বাংলাদেশ সরকারের কোনো ওয়েবসাইট থেকে তথ্যগুলো উন্মুক্ত হয়েছে, তা প্রকাশ করেনি টেকক্রাঞ্চ। তবে তারা যাচাই করে দেখেছে, উন্মুক্ত হওয়া তথ্যগুলো ভুয়া নয়।
ইসির সিস্টেম ম্যানেজার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “এনআইডির সার্ভার হ্যাক হয়নি। সেবা নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর সার্ভার হ্যাক হতে পারে। এনআইডি সার্ভারে কোনো থ্রেট নেই।”
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, “এনআইডি সার্ভার কোনো থ্রেটের মধ্যে নেই। ১৭১টি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা তথ্য নিয়ে থাকে। এসব প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার সঙ্গে চুক্তি রয়েছে, তারা কোনো তথ্য সংরক্ষণ করে রাখতে পারবেন না। কাজেই তাদের কোটি কোটি ডাটা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।”
সম্প্রতি রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ের জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধনের ওয়েবসাইট থেকে সম্প্রতি লাখ লাখ মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হয়। এরপর দেশে ডিজিটাল তথ্য ব্যবস্থাপনায় নিরাপত্তা ও সুরক্ষার বিষয়টি আলোচনায় আসে।
বাংলাদেশে ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী প্রত্যেক নাগরিককে একটি জাতীয় পরিচয়পত্র দেয় সরকার। প্রতিটি পরিচয়পত্রই অনন্য (ইউনিক)। এই পরিচয়পত্র দিয়ে নাগরিকরা ড্রাইভিং লাইসেন্স, পাসপোর্ট, জমি কেনা-বেচা, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা এবং অন্যান্য পরিষেবাগুলো পেয়ে থাকেন।
বাংলাদেশের প্রায় ১২ কোটি নাগরিকের ব্যক্তিগত বিভিন্ন তথ্য রয়েছে এনআইডি সার্ভারে। ইসিতে ভোটারদের ছবি, আঙুলের ছাপসহ অন্তত ৪০টির তথ্য সম্বলিত তথ্যভাণ্ডার সংরক্ষিত রয়েছে। নানা ধরনের নাগরিক সেবা দিতে অর্ধ শতাধিক সংস্থার সঙ্গে ইসির চুক্তি অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট কয়েকটি তথ্যের ‘ভেরিফিকেশন সার্ভিস’ চালু রয়েছে।