ডিসেম্বর ২১, ২০২৩, ০৮:৫৬ এএম
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি বলেছেন, ‘সারাদেশের ন্যায় আমার নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা হচ্ছে। নির্বাচনের সাড়া পড়ে গেছে। মানুষ বিশ্বাস করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে স্বপ্নের জায়গায় নিয়ে যাবেন।’
প্রতিমন্ত্রী বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) ঢাকায় হোটেল সোনারগাঁয়ে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে জেটি ও টার্মিনাল ভবন নির্মাণের লক্ষ্যে বিআইডব্লিউটিএ এবং ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ই-ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড এর মধ্যে একটি চুক্তিপত্র স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘একটি জাগরণ তৈরি হয়েছে। মুখরিত প্রচারণা চলছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার সুসমন্বিত উন্নয়নে বিশ্বাসী। ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানী ঢাকার সাথে সারাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের জেলা সদরের সড়ক পথে যোগাযোগের সময় কমিয়ে ৫/৬ ঘন্টার মধ্যে করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেটা বাস্তবায়ন করতে পারেননি। কারণ ২০০১ সালে দেশে ভয়াবহ দুঃশাসন এসেছিল। যোগাযোগ তো দূরের কথা, মানুষের নিরাপত্তা ছিল না। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, বিভীষিকাময় অবস্থা তৈরি করেছিল। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস গ্রুপের সহায়তায় সারাদেশে ৫০০ স্থানে সিরিজ বোমা করেছিল। দেশের অর্থনীতি লুটেরাদের হাতে চলে গিয়েছিল। দেশের মানুষের কোন উন্নয়ন হয়নি। কিছু ব্যক্তির উন্নয়ন হয়েছিল । চরাঞ্চলের মানুষের কোন আলো ছিল না।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এখন সন্দ্বীপসহ বিভিন্ন চরাঞ্চলে ক্যাবল এর মাধ্যমে নদীর তলদেশ দিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সহায়তায় সন্দ্বীপের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হচ্ছে। সন্দ্বীপে অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে। সন্দ্বীপে ৭০০ মিটার দৈর্ঘ্যের জেটি আছে। সন্দ্বীপের মানুষের চাহিদা অনুযায়ী রাতে চলাচলের জন্য বিআইডব্লিউটিএ এর পক্ষ থেকে সন্দ্বীপ চ্যানেলে `বয়া` বসানো হয়েছে। নতুন জেটি ও টার্মিনাল ভবনের মাধ্যমে সন্দ্বীপের মানুষের দীর্ঘদিনের দুঃখ-কষ্ট ঘুচে যাবে। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নতুন এ জেটি নির্মাণ দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। এটি বাস্তবায়িত হলে এ অঞ্চলের অভূতপূর্ব পরিবর্তন আসবে। পর্যটন ও অর্থনীতিতে ব্যাপক গতি সঞ্চারিত হবে।’
সন্দ্বীপ অংশে আরসিসি জেটি নির্মাণসহ আনুষঙ্গিক কাজটি করবে ই-ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। এ লক্ষ্যে আজ ঢাকায় হোটেল সোনারগাঁয়ে বিআইডব্লিউটিএ এবং ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ই-ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড এর মধ্যে একটি চুক্তিপত্র স্বাক্ষরিত হয়। নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রীর উপস্থিতিতে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেন বিআইডব্লিউটিএ`র তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক এ এস এম আশরাফুজ্জামান এবং ই-ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের পরিচালক তরফদার মো. রুহুল সাইফ। এসময় অন্যান্যের মধ্যে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোস্তফা কামাল, বিআইডব্লিউটিএ`র চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফা, ই-ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের চেয়ারম্যান তরফদার মো. রুহুল আমিন উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, সরকার দেশের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের যাত্রী সাধারণের সুষ্ঠু ও নিরাপদ চলাচল নিশ্চিতকরণ, নৌ-পর্যটন সুবিধাসহ আধুনিক ল্যান্ডিং সুবিধা প্রদান, ক্রমবর্ধমান বাল্ক কার্গো এবং পণ্য ও মালামাল লোডিং-আনলোডিং এর লক্ষ্যে চট্টগ্রামের মিরসরাই ও সন্দ্বীপ, কক্সবাজারের সোনাদিয়া দ্বীপ ও টেকনাফ (সাবরাং ও জালিয়ার দ্বীপ) অংশের জেটিসহ আনুষঙ্গিক স্থাপনা নির্মাণের জন্য প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এসব কাজ বাস্তবায়ন করবে। ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। উক্ত প্রকল্পের চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ অংশে আরসিসি জেটি ও টার্মিনাল ভবনসহ আনুষঙ্গিক সুবিধা নির্মাণ করা হবে। সন্দ্বীপ অংশে আরসিসি জেটিসহ ও টার্মিনাল ভবনসহ আনুষঙ্গিক সুবিধা নির্মাণে ৩৫৬ কোটি টাকা ব্যয় হবে। ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে আরসিসি জেটি ও টার্মিনাল ভবন এর পাশাপাশি বাউন্ডারি ওয়াল, পার্কিং ইয়ার্ড, তীররক্ষাসহ অন্যান্য কাজ সম্পন্ন হবে। ৩.৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৯.৫ মিটার প্রস্থ এর জেটি নির্মিত হবে। সন্দ্বীপ অংশে জেটিসহ আনুষঙ্গিক সুবিধাদি নির্মাণের জন্য ২৫. ৮৬ একর ভূমি অধিগ্রহণের সংস্থান রয়েছে। দোতলা বিশিষ্ট একটি টার্মিনাল ভবন নির্মাণ করা হবে। ভবনের প্রতিটি ফ্লোর হবে ২৭৭৭২ বর্গমিটারের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৪ ডিসেম্বর ২০২২ চট্টগ্রামের মিরসরাই ও সন্দ্বীপ অংশের জেটিসহ আনুষঙ্গিক স্থাপনাদি নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।