সেপ্টেম্বর ৭, ২০২৫, ০৭:০৭ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে কয়েকদিন ধরে কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগের মিছিল করার প্রেক্ষাপটে ঝটিকা মিছিলসহ বেআইনি সমাবেশ মোকাবিলায় কঠোর বার্তা দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
যারা বেআইনি তৎপরতার সঙ্গে যুক্ত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠক থেকে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম রোববার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলন করে বিষয়টি জানিয়েছেন।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সেই বৈঠকের বিষয়বস্তু জানাতেই এদিন সংবাদ সম্মেলনে আসেন প্রেস সচিব।
গত কিছুদিন, কিছু ঘটনা হয়েছে, সেটার আলোকেই এই বৈঠক হয়েছে বলে জানান প্রেস সচিব।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফজলুল কবির খান, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, নৌপরিবহন ও শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় উপদেষ্টা এম. সাখাওয়াত হোসেন, অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান।
এছাড়া ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) খোদা বকশ চৌধুরী, আইজিপি বাহারুল আলম, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়া এবং উর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা।
প্রেস সচিব শফিকুল বলেন, “প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ঝটিকা মিছিলসহ বেআইনি সমাবেশের বিষয়ে মনিটরিং জোরদার করতে হবে। এর নেপথ্যে যারা সক্রিয় রয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তিনি বলেন, “মিটিংয়ে নির্দেশ দেওয়া হয় যে স্থানীয় প্রশাসন আরো সক্রিয়ভাবে যাতে যেসব ঘটনা ঘটছে, সেগুলো মোকাবিলা করে। সে বিষয়ে আজকের বৈঠকে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়।”
প্রেস সচিব বলেন, “জুলাইকে (অভ্যুত্থান) সামনে রেখে আমাদের রাজনৈতিক ঐক্য ধরে রাখার বিষয়ে জোর দেওয়া হয় এবং বলা হয় রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতে এবং সবাই মিলে, সামনের নির্বাচনকে ঘিরে কোনো ধরনের নিরাপত্তাজনিত ঘটনা না ঘটে সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হয়।”
“রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে এ বিষয়ে আরো নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলার ব্যাপারে জোর দেওয়া হয়।”
শফিকুল বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন যে আসন্ন দুর্গা পূজায় অস্থির পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে নানান ষড়যন্ত্রমূলক চেষ্টা হতে পারে।
তিনি বলেন, “গত বছর দুর্গাপূজার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ভালো অভিজ্ঞতা ছিল। গত বছরের অভিজ্ঞতাকে এ বছরও কাজে লাগাতে পারি এবং তিনি জোর দিয়েছেন যাতে এবার নিরাপত্তা সব ধরনের আগে থেকেই নেওয়া হয়, যাতে কোনো বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়।
“সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য দেশের সকল ধর্মভিত্তিক সংগঠনের সাথে বৈঠকের জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জানিয়ে প্রেস সচিব বলেন, ধর্ম উপদেষ্টা অতি শিগগির বিভিন্ন গ্রুপের সাথে কথা বলবেন।”
তিনি বলেন, বৈঠকের সিদ্ধান্ত হয়েছে ক্রমাগতভাবে নিরাপত্তা পরিস্থিতি মনিটর করার জন্য, নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসনকে আগাম প্রস্তুতি রাখার বিষয়ে কথা হয়েছে।
এর পাশাপাশি ডাকসু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে হয় সে জন্য প্রধান উপদেষ্টা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন বলেন জানান প্রধান উপদেষ্টা প্রেস সচিব।
তিনি বলেন, “বৈঠকে আলোচনায় আসে যে পতিত পরাজিত ফ্যাসিবাদী শক্তি যখনই দেখছে দেশ নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছে এবং জুলাইয়ের হত্যাযজ্ঞের সাথে জড়িতদের বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত এগোচ্ছে, তখনই তারা মরিয়া ও বেপরোয়া হয়ে পড়ছে।
“এর ফলে তারা দেশের সার্বিক শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্ট করতে এবং গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে সব শক্তি নিয়ে মাঠে নামছে। এটা এখন আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নয়, এটা জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে।
“বৈঠকে বলা হয়, দেশের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে কাউকে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। সরকার মনে করে দেশের স্বার্থে জনগণের সাথে সকল রাজনৈতিক দলের ঐক্যবদ্ধ থাকা প্রয়োজন।”
সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার দুই উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ও অপূর্ব জাহাঙ্গীরও উপস্থিত ছিলেন।
গণ আন্দোলনে ক্ষমতা হারিয়ে ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট দেশে ছেড়ে ভারতে চলে যান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিন দিন পর ৮ অগাস্ট গঠন করা হয় অন্তর্বর্তী সরকার।
এরপর একে একে গ্রেপ্তার হতে থাকেন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ শীর্ষ পর্যায়ের নেতা ও প্রভাবশালী সংসদ সদস্যরা। আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটে থাকা অন্যদলগুলোর কয়েকজন নেতাকেও গ্রেপ্তার করা হয়।
আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের অধিকাংশই রয়েছেন আত্মগোপনে। ফলে নিয়মিত রাজনৈতিক কর্মসূচিতেও তারা নেই।
আন্দোলন দমাতে শত শত মানুষকে হত্যার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ আওয়াম লীগ নেতাদের বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। আর সেই বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত দলটির সব ধরনের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
তবে মাঝেমধ্যে ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ কর্মীদের ঝটিকা মিছিলের খবর আসে। কখনো কখনো মিছিল থেকে ধরপাকড়ও করা হয়।
রোববার দুপুরে সংসদ ভবন এলাকায় মিছিল করেছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। তার আগে শুক্রবার তেজগাঁও এলাকায় তারা মিছিল করেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের ব্যাপারে।
তার আগে ৩১ আগস্ট ধানমন্ডির ২৭ নম্বর রোডে রাফা প্লাজা সংলগ্ন রাস্তা থেকে শংকরের বাংলাদেশ আই হসপিটালের সামনের সড়ক পর্যন্ত মিছিল করতে দেখা যায় তাদের।
এর সপ্তাহখানেক আগেও গুলিস্তানের বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেইটে আওয়ামী লীগের কয়েকশ নেতাকর্মীকে বিক্ষোভ করতে দেখা যায়।