প্রতিবাদের মুখে টিএসসি থেকে দণ্ডিত যুদ্ধাপরাধীদের ছবি সরাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি

আগস্ট ৫, ২০২৫, ১০:৩৩ পিএম

প্রতিবাদের মুখে টিএসসি থেকে দণ্ডিত যুদ্ধাপরাধীদের ছবি সরাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি প্রাঙ্গণে ইসলামী ছাত্রশিবিরের আয়োজিত প্রদর্শনী থেকে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় যুদ্ধাপরাধের দায়ে দণ্ডিত ব্যক্তিদের ছবি সরিয়ে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বামপন্থী বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের তীব্র প্রতিবাদের মুখে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এসব ছবি নামানো হয়।

৩৬ জুলাই: আমরা থামব না শীর্ষক তিন দিনব্যাপী এ আয়োজনের মধ্যে ছিল আলোচনা সভা, প্রদর্শনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, যা জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবির আয়োজন করে। তবে প্রদর্শনীতে যুদ্ধাপরাধীদের ছবি স্থান পাওয়ার পর তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি হয়।

রাত ৯টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত টিএসসি এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করে। বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতাকর্মী এবং ছাত্রশিবিরের সমর্থকেরা পাল্টাপাল্টি স্লোগান দিতে থাকেন।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ দ্যা রিপোর্ট লাইভকে বলেন, “আমি বিষয়টি জানার পরপরই আমার সহকারী প্রক্টরকে পাঠিয়ে ছবিগুলো নামিয়ে ফেলি। আমরা চাই ৫ আগস্ট একটি আনন্দঘন পরিবেশে উদযাপিত হোক। কোনো ধরনের বিতর্ক বা বিশৃঙ্খলা যেন সৃষ্টি না হয়, সে কারণেই ছবিগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে, আয়োজকদের একজন ও ছাত্রশিবিরের বিজ্ঞান বিষয়ক সম্পাদক ইকবাল হায়দার দাবি করেন, “গত ১৬ বছরে হাসিনার সরকারের সময় যে বিচারিক হত্যাকাণ্ড ও রাজনৈতিক প্রতিশোধের শিকার হয়েছেন, তাদের স্মরণেই ছবিগুলো রাখা হয়েছিল।

ছবি সরিয়ে নেওয়ার পর এক ফেসবুক পোস্টে ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এস এম ফরহাদ জানান, তাদের প্রদর্শনীর একটি অংশ নিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কুৎসা রটানো ও উত্তেজনা সৃষ্টি করা হয়েছে। তিনি লেখেন, “১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ আমাদের ইতিহাসের গৌরবময় অধ্যায়, তবে বাকশাল ও শাহবাগ আন্দোলনের মাধ্যমে সেই ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে। এই ইতিহাস বিকৃতির বিরুদ্ধে আমাদের রাজনৈতিক অবস্থান আগেও ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে।

এদিকে বিভিন্ন বামপন্থী ছাত্রনেতারা প্রদর্শনীতে যুদ্ধাপরাধীদের ছবি স্থান পাওয়াকে ‘জুলাই অভ্যুত্থানের গৌরবময় ইতিহাসকে ১৯৭১ সালের বিপরীতে দাঁড় করানোর ঘৃণ্য অপচেষ্টা বলে আখ্যা দেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক উমামা ফাতেমা বলেন, “প্রদর্শনীতে এ ধরনের ছবি প্রদর্শন ৫ আগস্টের গুরুত্বকে ক্ষুণ্ণ করার অপচেষ্টা।

গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আব্দুল কাদের বলেন, “ছাত্রশিবির ১৯৭১-এর ইতিহাস মুছে ফেলতে চায়, এটি তারই সুপরিকল্পিত প্রয়াস।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি নূজিয়া হাসিন রাশা বলেন, “আজ স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের এক বছর পূর্তি হলেও প্রশাসনের প্রশ্রয়ে ইসলামী ছাত্রশিবির একাত্তরের স্বীকৃত রাজাকার ও ধর্ষকদের ছবি প্রদর্শন করে দিনটিকে বিতর্কিত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।”

এছাড়া, প্রদর্শনীতে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীসহ যুদ্ধাপরাধে দণ্ডিতদের ছবি প্রদর্শনের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিএনপির ছাত্রসংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।

Link copied!