রাজধানীর ৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর চিত্ত রঞ্জন দাসের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। তিনি জমি দখল, চাঁদাবাজি, উচ্ছেদ এমনকি খুনখারাবিও করেন। ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে। সম্প্রতি সমস্যার সমাধানপ্রার্থী এক নারীকে তিনি তার কার্যালয়ে ডেকে এনে অশ্লীল প্রস্তাব করেন এবং লাঞ্ছিত করেন। পরে সেই ঘটনার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। ওই নারী এরপর কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে শনিবার নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে একটি মামলাও দায়ের করেন।
কিন্তু তিনি দুদিন পালিয়ে থেকে সোমবার আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন এবং মুচলেকায় জামিন পান।
অভিযোগের ব্যাপারে সোমবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় কাউন্সিলর চিত্ত রঞ্জন দাসের সাথে মোবাইল ফোনে কথা হয় দ্য রিপোর্ট ডট লাইভের। তিনি এ সময় দাবি করেন তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার। তিনি খুব দ্রুতই ওই ষড়যন্ত্রের পেছনে থাকা মুখগুলোর মুখোশ উম্মোচন করবেন।
সরিজমিনে এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায় কাউন্সিলর চিত্ত রঞ্জনের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনসহ আরো নানা ধরনের অভিযোগের কথা। বাসাবোর স্থানীয় কালীমন্দির দখল, নামে বেনামে বিভিন্ন জনের জমি দখল, দোকানে দোকানে চাঁদা উত্তোলনসহ খুনের অভিযোগও। ২০০০ সালে তার বিরুদ্ধে একটি খুনের মামলাও রয়েছে। এখন আওয়ামী লীগের রাজনীতি করলেও আগে তিনি বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন।
এলাকাবাসীর ভাষ্যমতে, চিত্ত রঞ্জন শুধু বিএনপিই নয়, নানা সময়ে সব দলের সাথেই সখ্যতা বজায় রেখে চলেছেন। এভাবে ক্ষমতার সাথে থেকে তিনি বিভিন্ন সময় নারী নির্যাতন, জমি দখল, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করেছেন। এখনও সেটা তিনি অব্যাহত রেখেছেন। তিনি টাকার মাধ্যমে তার অপকর্ম ধামাচাপা দিয়ে থাকেন। তিনি সন্ত্রাসবাহিনী পোষেন এবং প্রশাসনকে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করেন। এ কারণে এলাকায় তার ভয়ে কেউ মুখ খোলে না। এলাকায় কেউ দোকান সংস্কার বা নতুন দোকান খুলতে গেলেই তাকে বড় অংকের চাঁদা দিতে হয়।
সবুজবাগ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আশ্রাফুজ্জামান ফরিদ দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, বিএনপি আমলে বাসাবো শ্রী শ্রী কালীমন্দির দখল করে নেন চিত্ত রঞ্জন দাস। পরে সেখান থেকে পুরোহিতদের তিনি বের করে দেন। সেখানে এখন তিনি নিজের কার্যালয় তৈরি করেছেন। শুধু এই জায়গা নয়, রাজারবাগ ও সবুজবাগের বিভিন্ন জায়গাতেই তিনি নামে বেনামে দখল করে সেখানকার মানুষজনকে হটিয়ে দিয়েছেন। ২০০০ সালে তিনি একটা খুনের মামলার আসামী হন। ওই মামলা থেকে রেহাই পেতে তিনি ‘নাগরিক ঐক্য ফোরাম’ তৈরি করেন। যেই ফোরাম দিয়ে তিনি আমাদের দলের সাথে যুক্ত হন।
দলের পক্ষ থেকে এখন কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে—জানতে চাইলে ফরিদ বলেন, চিত্ত রঞ্জন সামাজিক অবক্ষয় করেছেন। আমাদের দল কখনো এই সামাজিক অবক্ষয়কারীদের প্রশ্রয় দেয়নি, ভবিষ্যতেও দেবে না। ওই ভিডিওটি দেখার পর আমি আমার দলের হাইকমান্ডকে বিষয়টি জানাই। পুরো বিষয়টি এখন পর্যন্ত বিচারাধীন প্রক্রিয়ায় অছে, যাচাই বাছাই চলছে। কোন মতেই আমরা দলের ভাবমুর্তি নষ্ট হতে দেবো না, তার জন্য যে পদক্ষেপ নিতে হয় তাই আমরা নেবো।
এদিকে পলাতক থাকার পর চিত্ত রঞ্জন দাস সোমবার ঢাকা মহানগর হাকিম বেগম মাহমুদা আক্তারের আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক ৫ হাজার টাকা মুচলেকায় তার জামিন মঞ্জুর করেন।
জামিন পাওয়ার পর সাথে সাথেই তার সাথে যোগাযোগ করে দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ। তিনি এ সময় দাবি করেন, তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন। দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, আমি পুরোপুরি ষড়যন্ত্রের শিকার। আমি খুব দ্রুতই এই ষড়যন্ত্রের পেছনে থাকা লোকদের মুখোশ উম্মোচন করবোই।
চিত্ত রঞ্জন দাসের বিরুদ্ধে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে কিনা তা জানার জন্য বিকেলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র মো. শহীদুল্লাহের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে আগেরদিন তিনি দ্য রিপোর্ট ডট লাইভের সাথে আলাপকালে বলেছিলেন, এখন পর্যন্ত মামলা হয়েছে, সে গ্রেফতার ও দোষী সাব্যস্ত হলে তখন আমরা সিটি করপোরেশন থেকে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি। তার আগ পর্যন্ত কোন ধরনের ব্যবস্থাই গ্রহণ করা সম্ভব হবে না।