মার্চ ১১, ২০২২, ১০:২২ পিএম
আত্মহত্যার আগে স্থানীয় চেয়ারম্যানের ভাতিজা সম্পর্কে চিরকূট লিখে গেল নিরুপায় মেয়েটি (১৬)। সেই চিরকূটে তার মৃত্যুর জন্য কেন দায়ী সেই চেয়ারম্যানের ভাতিজা তা-ও উল্লেখ করেছে সে।
জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার পৌর এলাকায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঘটেছে ঘটনাটি। এ নিয়ে উপজেলায় তোলপাড় চলছে।
মেয়েটি চিরকুটে লিখেছে, ‘মা, আমারে ওয়াহাব চেয়ারম্যানের ভাতিজা আজকের দিনে এক রুমে কাটাইছে। পারলে ক্ষমা করো। যদি কোনো বিচার করো ছেলেটার নাম তামিম আহমেদ শপন খান। মা-বাবা তোমরা ভালো থেকো। আমারে ভুলে যেও। আমি বেঁচে থাকলে তোমাদের সম্মান শেষ হয়ে যেত। বাবা-মা আবার বলতাছি, ভালো থেকো। বাবা-মা ভালো থেকো। গুড বাই, সোনা বাবা-মা।’
এ ঘটনায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। মামলায় তামিম আহম্মেদ স্বপনকে (২৫) আসামি করা হয়েছে। স্বপন উপজেলার সাধুপুর কান্দাপাড়া এলাকার মো. খোকার ছেলে।
পরিবারের সদস্য ও স্থানীয়দের ধারণা, নগ্ন ছবি ও ভিডিও মোবাইলে ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল করার কারণে মেয়েটি আত্মহত্যা করেছে।
আত্মহত্যার আগে দুটি চিরকুট লিখে গেছে মেয়েটি। দ্বিতীয় চিরকুটে সে লিখেছে, ‘মা-বাবা ওয়াহাব চেয়ারম্যানের ভাতিজা আজকে সারা দিন এক রুমে কাটাইছে। ও আমাকে খুব ডিস্টার্ব করত। ও আমারে বলছে, ওর সাথে দেখা করলে ও আমার জীবন থেকে চলে যাবে। কিন্তু ও আমার সাথে খুব খারাপ কিছু করছে, বলার মতো না। বাবা-মা তোমরা ভালো থেকো। আর ছেলেটির নাম, তামিম আহমেদ শপন খান। ইতি তোমার আদরের আশামনি।’
পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে খাওয়া শেষে স্কুলে চলে যায় মেয়েটি। বেলা সাড়ে ৩টার দিকে স্কুল থেকে বাড়িতে এসে দুপুরে খাবার খেয়ে ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ে। ঘুম থেকে না ওঠায় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে মা তাকে ডাকতে গিয়ে দেখেন, ঘরের বাঁশের আড়ার সঙ্গে সে ঝুলছে। মায়ের চিৎকারে লোকজন এসে তাকে মেলান্দহ হাসপাতালে নিয়ে যায়। চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দিলে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়।
শুক্রবার সকালে নিহতের পরিবার ও এলাকার লোকজন তামিম আহমেদ স্বপনকে দ্রুত গ্রেপ্তার ও ফাঁসির দাবিতে মেলান্দহ থানার সামনে মানববন্ধন করে।
মেয়েটির বাবা বলেন, ‘আমার মেয়ের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে তামিম রাস্তাঘাটে খারাপ ব্যবহার করত। শারীরিক সম্পর্ক করার চেষ্টা করত। আমি মান-সম্মানের ভয়ে তাকে কিছু বলিনি। বান্ধবীর সঙ্গে সকালে স্কুলে যায়। স্কুল থেকে ফিরে এসে এ ঘটনা ঘটে। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।’
মেলান্দহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ময়নুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে সুরতহাল রিপোর্ট করে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছে। মেয়েটির বাবা থানায় একটি মামলা করেছেন। আসামি তামিম আহমেদ স্বপনকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। আশা করা যাচ্ছে, অল্প সময়ের মধ্যেই আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারব।’