মার্চ ১৪, ২০২৩, ০২:৩৩ পিএম
বিদ্যুৎ সেক্টরকে বর্তমান সরকার দুর্নীতির প্রধান খাত হিসেবে বেছে নিয়েছে মন্তব্য করে আদানি গ্রুপের সাথে জনস্বার্থবিরোধী বিদ্যুৎ আমদানি ও সব রেন্টাল চুক্তি বাতিলের দাবি জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি জানান।
রেন্টাল ও কুইক রেন্টালের মাধ্যমে সরকার দেশকে অর্থনৈতিক ও সামাজিক বির্পযের মধ্যে ফেলে দিয়েছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরও বলেন, “ এরইমধ্যে উন্মোচিত হল আরও এক বিপর্যয় সৃষ্টিকারী আদানি- বিপিডিবি চুক্তি। সরকার ৫ নভেম্বর ২০১৭ সালে ভারতের আদানি পাওয়ার (ঝাড়খন্ড) লিমিটেডের সাথে ২৫ বছর মেয়াদি ১,৪৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ (কয়লা ভিত্তিক) ক্রয়ের একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। এই চুক্তির আওতায় আদানি পাওয়ারকে ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে দিতে হবে ১,১৭,০৫৮ কোটি টাকা (১ ডলার = ১০৬.৩২ টাকা), যা দেশের কয়লাচালিত অন্য বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর ক্যাপাসিটি চার্জের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি।”
তিনি আরও বলেন, শুধু তাই নয়, ক্রয়মূল্যের আরেক উপাদান- জ্বালানির জন্য দেশের অন্যান্য কয়লাভিত্তিক জ্বালানি মূল্যের তুলনায় ৪৫ শতাংশ বেশি মূল্য দিতে হবে আদানি পাওয়ার থেকে বিদ্যুৎ ক্রয় করতে।
সব খরচসহ আদানি পাওয়ারে ব্যবহৃত প্রতি টন কয়লার মূল্য ধরা হয়েছে ২০০ ডলারের মত উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “অথচ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড আদানি পাওয়ারকে টন প্রতি মূল্য দিতে হবে ৪০০ ডলার অর্থাৎ দ্বিগুন। আদানি পাওয়ার চুক্তির দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে কয়লার এই চড়া দাম আদায় করতে চায়। আর এই সব মূল্যই দিতে হবে মার্কিন ডলারে, যা বর্তমান নিম্নমুখী বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে আরও তলানিতে নিয়ে ঠেকাবে।”
সরকারের সমালোচনা করে বিএনপির এই অন্যতম শীর্ষ নেতা বলেন,“বর্তমান ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার অপরিণামদর্শী ভ্রান্ত নীতি, অব্যবস্থাপনা ও নানাবিধ দুর্নীতির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে যে মহাবিপর্যয়ের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে তা কাটিয়ে ওঠা পরবর্তী যে কোনো সরকারের পক্ষেই হবে এক বড় চ্যালেঞ্জ “
ক্ষমতায় গেলে জনস্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিল করা হবে জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “দেশবাসীকে জানাতে চাই বিএনপি সরকার গঠন করলে দেশের স্বার্থ বিনষ্টকারী এ ধরনের সব চুক্তি এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দ্রুত বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইনসহ সব কালো আইন বাতিল করা হবে।” এসময় তিনি বিদ্যুৎ উৎপাদনে নবায়নযোগ্য, বিকল্প ও মিশ্র-জ্বালানির সংস্থান করা হবে এবং স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার মাধ্যমে দেশের বিদ্যুৎ খাতকে পুনর্গঠন ও টেকসই করে গড়ে তোলা হবে বলেও জানান।
দলমত সবাইকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়ার আহবান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, “গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে হবে। দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত বর্তমান অবৈধ ফ্যাসিস্ট সরকারকে দুর্বার গণআন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করে একটি নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পরিচালনায় অবাধ ও গ্রহণযোগ্য সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে প্রকৃত অর্থে জনগণের একটি সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সে জন্য দলমত জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রত্যেককে চলমান গণআন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি।”
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাঈল জবিউল্যাহ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন উপস্থিত ছিলেন।