রাজধানীর বারিধারার বাসা থেকে রবিবার (১ আগস্ট) দিবাগত রাতে মাদকদ্রব্যসহ মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা ও মোহাম্মদপুরের একটি বাসা থেকে ইয়াবাসহ আরেক মডেল মৌ আক্তারকে গ্রেপ্তার করার পর জিজ্ঞাসাবাদে অনেক ভয়ঙ্কর তথ্য জানতে পেরেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
ডিবি পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মডেল পিয়াসা ও মৌ ব্লাকমেইল করা সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য। ওই চক্রের সদস্যরা রাতের রাণী বলেই সংশ্লিষ্টদের কাছে পরিচিত। মডেল হিসেবে পরিচয় দিয়ে রাতের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তারা উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানদের সঙ্গে প্রেমের ভাব জমাতেন। এক পর্যায়ে ভাবটা একটু জমে উঠলে ছলে বলে কৌশলে বাসায় নিয়ে আসতেন। পরে আপ্যায়নে নেশাদ্রব্য জাতীয় কিছু খাইয়ে দিয়ে আপত্তিকর ছবি তুলে রাখতেন। পরবর্তীতে ওই আপত্তিকর ছবিগুলো হয়ে ওঠে উঠতো তাদের কাড়ি কাড়ি টাকা কামানোর হাতিয়ার। তাদের সাথে তোলা আপত্তিকর ছবি বাবা-মা বা পরিবারের সদস্যদের দেখানোর ভয় দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করতেন। হাতিয়ে নিতেন মোটা অংকের অর্থ কিংবা আদায় করে নিতেন নামি-দামিসব পণ্য।
ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা ও মরিয়ম আক্তার মৌকে আটকের পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশিদ গণমাধ্যমে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন ‘গ্রেপ্তারকৃত মৌ ও পিয়াসা তাদের বাসায় মদের আসর বসাতো মূলত উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানদের ব্ল্যাকমেইল করার জন্য। আমরা পিয়াসা ও মৌয়ের বিরুদ্ধে ব্ল্যাকমেইল করার অনেকগুলো অভিযোগ তদন্ত করছিলাম। সেই তদন্তের অংশ হিসেবে ফারিয়া ও মৌয়ের বাসায় অভিযান চালানো হয়।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন,‘তাদের বাসা থেকে বিদেশি মদ ও ইয়াবা পাওয়া গেছে। যেহেতু মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে, এজন্য গুলশান ও মোহাম্মদপুর থানায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হবে।’
রবিবার (১ আগস্ট) দিবাগত রাতে রাজধানীর বারিধারার ৯ নম্বর রোডের ৩ নম্বর বাসা থেকে মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসাকে ডিবি পুলিশ গ্রেপ্তার করে। ডিবি পুলিশের সদস্যরা পিয়াসার রান্নাঘরের ক্যাবিনেট থেকে ৯ বোতল বিদেশি মদ এবং পিয়াসার ফ্রিজ খুলে একটি আইসক্রিমের বাক্স থেকে সিসা তৈরির কাঁচামাল এবং বেশ কয়েকটি ই-সিগারেট পান পুলিশ সদস্যরা। পিয়াসার কাছ থেকে ৪টি স্মার্টফোনও জব্দ করে পুলিশ।একই রাতে মোহাম্মদপুরে একটি বাসা থেকে ইয়াবাসহ মডেল মৌ আক্তারকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
মডেল মৌ আক্তার। ছবি: সংগৃহীত
ডিএমপির সিরিয়াস ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মহিদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট কিছু অভিযোগের ভিত্তিতে পিয়াসার বাসায় অভিযান চালানো হয়। পিয়াসাকে আটক করা হয়েছে।’
কে এই মডেল পিয়াসা?
২০১৭ সালে মডেল পিয়াসার নাম আলোচনায় আসে। তিনি দেশের শীর্ষস্থানীয় জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদ সেলিমের ছেলে সাফাত হোসেনের স্ত্রী। তবে উচ্ছৃঙ্খল জীবন যাপন করায় ওই বছর পিয়াসের সঙ্গে সাফাত হোসেনের ডিভোর্স হয়ে যায়। এ নিয়ে সামাজিক মহলে আলোচিত হন তিনি।
স্বামী সাফাতের সঙ্গে পিয়াসা। ছবি: সংগৃহীত
পিয়াসার সঙ্গে সাফাত হোসের ছাড়াছড়ি হওয়ার ২০ দিনের মাথায় রাজধানীর বনানীতে রেইনিট্রি হোটেলে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় পিয়াসার সদ্য সাবেক হওয়া স্বামী সাফাত জড়িত ছিলেন। তখন আবার ঘুরে ফিরে পিয়াসার নামটি আলোচিত হয় সামাজিক মহলে।
স্বামী সাফাতের সঙ্গে পিয়াসা। ছবি: সংগৃহীত
২০১৯ সালে ব্যাপক আলোচনায় আসেন মডেল পিয়াসা। ওই বছরে শীর্ষস্থানীয় জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদ সেলিম তার সাবেক পুত্রবধূর বিরুদ্ধে মামলা করেন। চাঁদা দাবির অভিযোগে ২০১৯ সালের ৫ মার্চ পিয়াসার বিরুদ্ধে মামলা করেন তিনি।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, পিয়াসা দিলদারপুত্র সাফাতকে ফাঁদে ফেলে ২০১৫ সালের ১ জানুয়ারি বিয়ে করেন। পরে তারা জানতে পারেন যে পিয়াসা মাদকাসক্ত এবং উচ্ছৃঙ্খল জীবন-যাপনে অভ্যস্ত। তাই ২০১৭ সালের ৮ মার্চ পিয়াসাকে তালাক দেন সাফাত।
পিয়াসার পাল্টা মামলা: ২০১৯ সালের ১১ মার্চ সাবেক শ্বশুর দিলদারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন পিয়াসা। মামলায় অভিযোগ আনা হয়, দিলদার আহমেদ পিয়াসাকে গর্ভপাতের চেষ্টা, নির্যাতন, হত্যার হুমকি দিয়েছেন। তবে সে বছরের ১৭ জুলাই পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক মো. মজিবুর রহমান আদালতে দেয়া প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, পিয়াসার অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি।
সম্প্রতি রাজধানীর গুলশানের একটি ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয় মোসারাত জাহান (মুনিয়া) নামে এক তরুণীর মরদেহ। ঘুরে ফিরে এখানেও আলোচনায় আসে পিয়াসার নাম। মৃত ওই তরুণীর বোন নুসরাত জাহান বাদী হয়ে মামলা করেছেন। মামলার এজাহারে উঠে এসেছে পিয়াসার নাম। এর রেশ কাটতে না কাটতেই আবার আলোচনায় সেই পিয়াসা।