দেশের প্রখ্যাত সাংবাদিক, গবেষক ও কলাম লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদ আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তিনি রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন।
সৈয়দ আবুল মকসুদের ছেলে সৈয়দ নাসিফ মকসুদ গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। পরিবারের সদস্যরা জানান, বিকেলে হঠাৎ করে শ্বাসকষ্টে ভুগলে তখনই আবুল মকসুদকে স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সন্ধ্যায় তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।
সৈয়দ আবুল মকসুদ ১৯৪৬ সালের ২৩ অক্টোবর ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির (বর্তমান বাংলাদেশ) মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় উপজেলার এলাচিপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা সৈয়দ আবুল মাহমুদ ও মা সালেহা বেগম। শৈশব থেকে আবুল মকসুদ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন পত্রিকা পড়ায় মনযোগী ছিলেন। পরবর্তীতে তার লেখনীর মধ্যেও এ প্রতিভা প্রকাশিত হয়।
সৈয়দ আবুল মকসুদ প্রথম জীবনে সরকারের তথ্য কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করলেও পরবর্তীতে তিনি সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে নেন। ১৯৬৪ সালে এম আনিসুজ্জামান সম্পাদিত সাপ্তাহিক নবযুগ পত্রিকার মাধ্যমে সাংবাদিকতা পেশা শুরু করেন। এটি ছিল পাকিস্তান সোশ্যালিস্ট পার্টির মুখপত্র। পরে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি সমর্থিত সাপ্তাহিক ‘জনতা’য় কাজ করেন কিছুদিন।
চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশ-এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন তিনি। সৈয়দ আবুল মকসুদ বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ঋষিজ পুরস্কারসহ বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
১৯৭১ সালে তিনি বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থায় (বাসস) যোগ দেন। দীর্ঘদিন সেখানে বার্তা বিভাগে কাজ করার পর ২০০৮ সালের ২ মার্চ তিনি এ চাকরি থেকে অব্যাহতি নেন। এরপরও তিনি পত্রিকা ও সাহিত্যে লেখালেখিতে মনোযোগ বাদ দেননি। তিনি দৈনিক প্রথম আলো-তে 'সহজিয়া কড়চা' এবং 'বাঘা তেঁতুল' শিরোনামে সমকালীন সমাজ, রাজনীতি, সাহিত্য-সংস্কৃতি নিয়ে নিয়মিত কলাম লিখতেন।
তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে: কবিতা- বিকেলবেলা, দারা শিকোহ ও অন্যান্য কবিতা; প্রবন্ধ- যুদ্ধ ও মানুষের মূর্খতা, বাঙালির সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার, পূর্ববঙ্গে রবীন্দ্রনাথ, রবীন্দ্রনাথের ধর্মতত্ত্ব ও দর্শন, ঢাকায় বুদ্ধদেব বসু প্রভৃতি; জীবনী- সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর জীবন ও সাহিত্য, মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, গোবিন্দচন্দ্র দাসের ঘর-গেরস্থালি এবং ভ্রমণকাহিনি বিষয়ক গ্রন্থ- জার্মানির জার্নাল, পারস্যের পত্রাবলি।