কাঁচাবাজারের আগুনে জ্বলছে মধ্যবিত্তের ঘর

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

অক্টোবর ২৯, ২০২১, ০৪:৫৮ পিএম

কাঁচাবাজারের আগুনে জ্বলছে মধ্যবিত্তের ঘর

না পারে কাউকে বলতে, না পারে সইতে, ঠিক সেই অবস্থা মধ্যবিত্তের। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়ায় অসহায় হয়ে পড়েছে মানুষগুলো। ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে শাকসবজি, মাছ-মাংসসহ সকল পন্যের দাম। আয়-রোজগার বৃদ্ধি না হলেও প্রাত্যহিক খরচ যেকোনো ভাবেই হোক চালিয়ে নিতে হচ্ছে মধ্যবিত্তদের বলে জানান প্রতিদিনের বাজার করতে আসা এক ক্রেতা।

বাজারে এসেই বিরক্ত ক্রেতারা

সরেজমিনে দেখা যায় বাজারে আসা ক্রেতারা চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনতে না পারায় একধরনের বিরক্তি।  রাজধানীর বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, সবগুলো নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম মাস ব্যবধানে বেড়েছে দ্বিগুন তিনগুন।

রামপুরা বাজারে নিত্যপ্রয়োজনী জিনিস ক্রয় করতে এসে  গৃহবধূ তাসনোভা বেগম দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে জানান, সংসারে উপার্জন করার মত ব্যক্তি একজন। কিন্তু প্রতি মুহুর্তে যেভাবে সব জিনিসের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে এতে বাচ্চাদের নিয়ে এই শহরে টিকে থাকা মুশকিল হয়ে পড়ছে। স্বামীর আয় তো প্রতি মাসে বৃদ্ধি পায়না। এমন দাম বৃদ্ধি পেতে থাকলে না খেয়ে দিন পার করতে হবে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে এক বিক্রেতা জানান, গত সপ্তাহে খুচরা বাজারে কাঁচা মরিচ ছিল প্রতি কেজি ৪০ টাকা, সেখানে এক সপ্তাহে দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮০-৯০ টাকা। শুধু যে কাঁচা মরিচের দাম বেড়েছে, তা–ই নয়; সেই সঙ্গে বেড়েছে পেঁয়াজ, মাছ, মাংস, ডাল, তেল, চিনি, ডিম ও এলপি গ্যাসের দাম। ফলে লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধিতে সাধারন মানুষের নাভিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিদিনই বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয়সহ সকল ধরনের দ্রব্যের দাম।

আমিষের দাম বাড়ছেই

সরেজমিনে রাজধানীর কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা যায়, পেঁয়াজের ঝাঁজ কিছুটা কমলেও বেড়েছে মাছ ও ব্রয়লার মুরগির দাম। ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের কেজি বিক্রি করছেন ৫০ থেকে ৬০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা।

ব্যবসায়ীরা ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি করছেন ১৮০ থেকে ১৮৫ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে কমেছে ৫ টাকা।

ব্রয়লার মুরগির দাম কমলেও পাকিস্তানি কক বা সোনালি মুরগি এবং লাল লেয়ার মুরগির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৩০ থেকে ৩৫০ টাকা। আর লাল লেয়ার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকা। ব্রয়লার মুরগির দাম কমার বিষয়ে খিলগাঁওয়ের ব্যবসায়ী কিরণ হাসান বলেন, মাঝে বাজারে ব্রয়লার মুরগির সরবরাহ কিছুটা কমে গিয়েছিল। এখন আবার বাড়ছে। এ কারণে দামও কমতে শুরু করেছে। আমাদের ধারণা সামনে ব্রয়লার মুরগির দাম আরও কমবে। পেঁয়াজ ও ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা কমলেও বেড়েছে ডিমের দাম। গত সপ্তাহে ১১০ টাকা ডজনের ডিম কিনতে এখন ক্রেতাকে ১১৫ থেকে ১২০ টাকা গুনতে হচ্ছে।

হঠাৎ ডিমের দাম বাড়ার বিষয়ে হাজীপাড়া বৌ বাজারের ব্যবসায়ী মো. আলম বলেন, প্রতিবছর এ সময় ডিমের দাম বাড়ে। এবারও সেই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। তাছাড়া মুরগির দাম বেশি হওয়ায় ডিমের চাহিদা কিছুটা বেড়েছে। এটাও দাম বাড়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে।

নিয়মিত হারে বাড়ছে পণ্যের দাম

তালতলা বাজারের কামাল হোসেন বলেন, প্রতিদিন কোন না কোন না পন্যর দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাসের ব্যবধানে দেশী মসুর ডাল কেজি প্রতি ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১২০টাকা করে। গতকাল পর্যন্ত সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে ১৫৩ টাকা লিটার। আজকে বিক্রি হচ্ছে ১৬০টাকা লিটার। তিনি বলেন, প্রতিদিন দাম বাড়ায় কাস্টমারদের সাথে আমাদের ঝগড়া হচ্ছে । তারা ভাবছে আমরা দাম বৃদ্ধি করছি। জিনিস পত্রের লাগামহীন দাম বাড়ায় আমাদের কেনা বেচা অনেক কমে গেছে।

বাজার করতে আসা ডাক্তার সাইফুদ্দোলা বলেন, জিনিস পত্রের দাম বাড়ায় আমরা এখন খাওয়া দাওয়া অর্ধেক করে ফেলছি। প্রতিদিন দাম বাড়ছে ,এই ব্যাপারে সরকারের কোন মাথা ব্যাথা নাই। আক্ষেপের সুরে তিনি আরো বলেন, অপেক্ষা করে আর কয়দিন পর দেশে দুর্ভিক্ষ লাগবে। না খেয়ে মরা লাগবে সবার।

অন্যদিকে দেখা গেছে, বাজারে বিভিন্ন মাছের দাম ঊর্ধ্বমুখী। এক কেজি থেকে ১ হাজার ২০০ গ্রাম ওজনের রুইমাছ বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা কেজিতে। দেড় কেজির আশপাশের বোয়াল মাছের কেজি চাওয়া হচ্ছে ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা। কাতল মাছ ৪০০ টাকা। এমনকি ছোট আকারের পাঙ্গাস মাছের দামও দুই শ ছুঁই ছুঁই। টেংড়া বিক্রি হচ্ছে ৫শ টাকা কেজি ধরে।

আগাম সবজির দাম নাগালে

বাজারে এসেছে আগাম শীতের সবজি, তবে দাম কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে। সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে ব্যবসায়ীরা আগের মতোই সব থেকে বেশি দামে বিক্রি করছেন গাজর ও টমেটো। মানভেদে এক কেজি গাজর ১০০ থেকে ১৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। টমেটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে এ সবজি দুটির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এ দুই সবজির পাশাপাশি চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে অন্যান্য সবজিও। শীতের আগাম সবজি শিম গত সপ্তাহের মতো কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১২০ টাকা। ঝিঙের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। ছোট ফুলকপি ও বাঁধাকপির পিস বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৫০ টাকা। মুলার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে এসব সবজির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

এছাড়া সপ্তাহের ব্যবধানে চিচিঙ্গা, বরবটি, ঢেঁড়শ, পটল, করলার দাম খুব একটা হেরফের হয়নি। করলা বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি, পটলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা, ঢেঁড়শের কেজি পাওয়া যাচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে, বরবটির কেজি পাওয়া যাচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা।

এছাড়া কাঁচকলার হালি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, লাল শাকের আঁটি ১০ থেকে ২০ টাকা, মুলা শাকের আঁটি ১০ থেকে ১০ টাকা, কলমি শাকের আঁটি ৫ থেকে ১০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে আসা ক্রেতা নেহাল আহমেদ বলেন, মুরগির দাম তো কমছেই না। মাসে বেতন পাই একবার, জিনিসপত্রের দাম বাড়ে দুই বার। প্রতি মাসে বেতন না বাড়লেও বাড়তি দামে বাজার করতে হচ্ছে। এভাবে বাঁচা দায়।

কনজ্যুমার এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, সরকারি পর্যায়ে সমন্বয়হীনতা বাজার নিয়ন্ত্রন বড় বাধা। অতি জরুরি পন্য যদি সরকার আমদানি করে বাজারে সরাসরি বিক্রি করতো তাহলে বাজার এমন বেসামাল পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না।

সরকার কী বলছে?

সরকার বলছে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি কমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। জানা গেছে, পেঁয়াজ ও চিনির দাম নিয়ন্ত্রণে শুল্ক কমিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। পেঁয়াজ আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু শুল্ক কমানোর পরেও বাজারে দামের কোন প্রভাব পড়ে নাই।

Link copied!