কিছু গণমাধ্যমের প্রতিবেদন মনোবল ভেঙে দিয়েছে: ফারদিনের বাবা

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

নভেম্বর ১৪, ২০২২, ০৭:০৮ পিএম

কিছু গণমাধ্যমের প্রতিবেদন মনোবল ভেঙে দিয়েছে: ফারদিনের বাবা

ফারদিনের হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে যারা পাশে দাঁড়িয়েছিল তাদের মনোবল গণমাধ্যমের কিছু প্রতিবেদন ভেঙে দিয়েছে মন্তব্য করে তার বাবা কাজী নূর উদ্দিন বলেন, ‘তার হত্যার বিচারের দাবিতে যারা পাশে দাঁড়িয়েছিল, গণমাধ্যমের কিছু রিপোর্ট তাদের মনোবল ভেঙে দিয়েছে। একজন ভালো ডিবেটরের পাশে যারা ছিল, মাদকের বিষয়টা এনে তাদের ধাক্কা দেওয়া হয়েছে।’

বুয়েটশিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশ হত্যার বিচারের দাবিতে সোমবার (১৪ নভেম্বর) বুয়েটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধনে এ কথা বলেন তিনি।

ফারদিনের বাবা বলেন, আমার সন্তান ধূমপান কেন, ধূমপানের ধোঁয়াটা পর্যন্ত নিতে পারে না। ধূমপান যে করে না, সে ফেনসিডিলে আসক্ত হওয়ার প্রশ্নই উঠে না। ময়নাতদন্তে ডাক্তার তো কোনো মাদকের বিষয়ে বলে নাই।

‘মাদকের সঙ্গে ফারদিনের সংশ্লিষ্টতা’ নিয়ে সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনগুলো হত্যাকাণ্ডের ‘তদন্ত কাজ ব্যাহত করছে’ বলেও তিনি দাবি করেন। 

নূর উদ্দিন বলেন, ‘আমি আশা করি, তদন্তে যে সংস্থাগুলো আছে, তারা দ্বায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবেন। এটা একটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। একটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করা খুব সহজ বিষয় নয়।

ফারদিনের বাবা বলেন, ‘আমাদের যে সংস্থাগুলো আছে, র‌্যাব, ডিবি ও পিবিআই এগুলোর উপর আস্থা রাখছি।  আমি চাই না, কোনো কারণে সেই আস্থার জায়গাটা ভেঙে যাক। তারা সময় নিচ্ছেন, প্রকৃত যে অপরাধী তাকেই চিহ্নিত করবে, এজন্য তাদের সময় লাগতে পারে, এতে আমি হতাশ নই।’

বুশরার বিরুদ্ধে মামলা প্রসঙ্গে নূর উদ্দিন বলেন, “বুশরাকে আমি আইডেন্টিফাই করেছি, সর্বশেষ সঙ্গী যে ছিল, সেই হিসাবে। আমার তিনটি সন্তান। তাদের মা যে পয়েন্টে যেতে বলে, তার বাইরে তারা কখনো যায়নি।

“বুয়েটে গ্রুপ স্টাডি করতে বাড়ি থেকে বের হয়েছে, পরদিন পরীক্ষা দিয়ে বাসায় যাওয়া কথা। আমার প্রশ্ন, আমার সন্তানটি বাসা থেকে বের হয়ে কী কারণে বুশরা নামের মেয়েটির কাছে গেল? সে কেন এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেল যে, তার সঙ্গে এতটা সময় কাটাতে হল। বুশরাকে কে তো আমার পরিবারের কেউ চিনত না। পরদিন তার পরীক্ষা। আমার সন্তান তো রাত ১০টা পর্যন্ত তার সঙ্গে সময় কাটানোর কোনো কথা না।”

ফারদিনকে ‘মাথায় ও বুকে প্রচণ্ড আঘাত’ করে হত্যা করা হয়েছে জানিয়ে এই বাবা বলেন, ‘শুনেছি, ছয়-সাত জন পিটিয়ে মেরেছে। তাহলে তো পা থেকে মাথা পর্যন্ত সব জায়গায়ই আঘাত করত। সর্বত্র আঘাত না করে মাথায় ও বুকে প্রচণ্ড আঘাত করা হয়েছে। এর মানে টার্গেট ছিল তার (ফারদিনের) হৃদয় ও মস্তিস্ক। সে যে চিন্তা করত, তারা এটার পক্ষে ছিল না। তারা এটা নিতে পারেনি।’

শনিবার পরশকে খুঁজে না পেয়ে রাজধানীর রামপুরা থানায় এ বিষয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তাঁর বাবা কাজী নূর উদ্দিন। এতে বলা হয়, গত ৪ নভেম্বর বেলা তিনটার দিকে ফারদিন নূর পরশ রাজধানীর ডেমরা থানার কোনাপাড়ার বাসা থেকে বুয়েটে তাঁর আবাসিক হলের উদ্দেশে বের হন। পরের দিন শনিবার সকালে তাঁর পরীক্ষা ছিল। তবে তিনি পরীক্ষায় অংশ নেননি। তাঁর মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

পরীক্ষা শেষে শনিবার বিকালে তার বাসায় ফেরার কথা ছিল। ৭ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জের গোদনাইলে শীতলক্ষ্যা নদীর পাড় থেকে উদ্ধার করা হয়। নিখোঁজ হওয়ার দিন বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত ফারদিন ছিলেন তার বান্ধবী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আমাতুল্লাহ বুশরার সঙ্গে। সিসিটিভিতে প্রমাণ পাওয়ার পর বুশরার বিরুদ্ধে মামলা করেন নূর উদ্দিন। সেই মামলায় বুশরাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।

fardin

ফারদিন নূর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিবেটিং ক্লাবেরও যুগ্ম-সম্পাদক ছিলেন তিনি। পড়াশোনায় মেধাবী ফারদিন এসএসসি ও এইচএসসিতে সব বিষয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়েছিলেন। গবেষণায় আগ্রহ ছিল তাঁর।

ফারদিন নিজের ইচ্ছায় বুয়েটে ভর্তি হয়েছিলেন বলে জানান তাঁর বাবা নূর উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আমরা ওরে স্বাধীনভাবে পড়াশোনা করতে দিয়েছি। যেহেতু আমি সাংবাদিকতায় যুক্ত ছিলাম, তাই খুব একটা সচ্ছল ছিলাম না। ফারদিন নিজে টিউশনি করত। নিজের পড়াশোনা, পড়ানো, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে আসা-যাওয়া ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিল।’

fardin 2

ফারদিনের বাবা কাজী নূর উদ্দিন বিজনেস পত্রিকা ‘দ্য রিভারাইন’-এর সম্পাদক ও প্রকাশক। ফারদিনের মা ফারহানা ইয়াসমিন গৃহিণী। তাঁদের গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা উপজেলায়। তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় ছিলেন ফারদিন। তাঁর মেজ ভাই আবদুল্লাহ নূর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন। ছোট ভাই তামিম নূর এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে।

Link copied!