জিয়াউর রহমানের খেতাব নিয়ে সরকার টানাটানি করুক,আর সবাই মিলে যদি সরকার প্রধানকে গদি থেকে নামিয়ে দিতে পারি তাহলেই সব হিসাব-নিকাশ চুকে যাবে। শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দলের প্রতিষ্ঠাতা মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক ‘জেড’ ফোর্সের অধিনায়ক জিয়াউর রহমানের ‘বীর উত্তম’ খেতাব বাতিল করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশে নেতারা এসব কথা বলেন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে দলের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার উদ্যোগে সমাবেশে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেন। এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই জলকামান ও অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ছিল। সকাল ১০ টায় সমাবেশ শুরু হলেও সকাল সাড়ে আটটা থেকে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা জাতীয় প্রেসক্লাব এলাকায় জমায়েত হতে থাকে। সমাবেশের শুরুতে ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেনের নেতৃত্বে একটি মিছিলকে কেন্দ্র করে পুলিশের সাথে নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এতে করে কিছুক্ষণের জন্য পরিস্থিতি উত্তপ্ত ছিল। শান্ত পরিবেশেই সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশ শুরুর পর পুলিশ লাইন ধরে দাঁড়িয়ে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখলেও কর্মীদের উপস্থিতি বাড়ার সাথে সাথে পুলিশও সরে যায় এবং সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
মহানগর বিএনপি দক্ষিনের সভাপতি যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেলের সভাপতিত্বে দক্ষিনের কাজী আবুল বাশার ও উত্তরে আবদুল আলীম নকীর পরিচালনায় সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বও চন্দ্র রায়, বিএনপি নেতা এজেডএম জাহিদ হোসেন, আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, রুহুল কবির রিজভী, ফজলুল হক মিলন, শহিদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, মীর সরফত আলী সপু, তাবিথ আউয়াল, ইশরাক হোসেন, মহানগর বিএনপির মুন্সি বজলুল বাসিত আনজু, যুব দলের সাইফুল ইসলাম নিরব, স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসেইন, ছাত্রদলের ইকবাল হোসেন শ্যামল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
বেলা ১২ টায় প্রধান অতিথি হিসেবে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বক্তব্য শুরুর প্রায় ৫ মিনিটের মাথায় তাকে বক্তব্য বন্ধ করতে বলেই পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়। এ সময় ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ নেতাদের কেউ কেউ জাতীয় প্রেসক্লাব আশ্রয় নেন। সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হলে বেলা ১২ টা ৫০ মিনিটে নেতারা প্রেসক্লাব এলাকা ত্যাগ করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আরো জানান,সমাবেশ যখন শেষ পর্যায়ে কদম ফোয়ার দিক থেকে পুলিশ একযোগে সমাবেশের দিকে আসে। মুহুর্তের মধ্যে সমাবেশের নেতা-কর্মীরা তোপখানা রোড, জাতীয় প্রেসক্লাবের গেইট ডিঙিয়ে পালাতে থাকে। পুলিশ লাঠিচার্জ করে পুরো সমাবেশ পন্ড করে দেয়। নেতা-কর্মীদের পুলিশ এলোপাতারী লাঠিপেটাও করে। নেতা-কর্মীরাও ইটপাটকেল ছুঁড়ে মারে পুলিশের দিকে। এতে করে শেষ পর্যায় এসে সমাবেশ পণ্ড হয়ে যায়। বিএনপির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানান, এই ঘটনায় দলের অর্ধ-শতাধিক আহত এবং চল্লিশ জনের মতো নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। আমরা বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে গণমাধ্যমকে জানাবো। আহত নেতাকর্মীদের চিকিৎসার জন্য রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।
সমাবেশ পণ্ডের আগে তার বক্তব্যে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, জিয়াউর রহমানই এদেশের মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করেছে। কার খেতাব আপনারা বাতিল করতে চান। এই জিয়াউর রহমান এদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রথম সেক্টর কমান্ডার,এই জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধে প্রথম ফোর্স ‘ জেড’ ফোর্সের কমান্ডার। এই জিয়াউর রহমানের অর্জিত খেতাব বাতিলের অধিকার আপনাদের নাই, এই খেতাব বাতিলের অধিকার কারো নাই। যারা চেষ্টা করছেন বাতিল করার জন্য আমি তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আপনাদের পায়ের নিচে মাটি নাই। শেখ হাসিনার হাত থেকে দেশকে মুক্ত করার জন্য আজকে যখন জনগন রুখে দাঁড়িয়েছে তখন এই ষড়যন্ত্র। আমি সকলকে আহবান জানাবো, আগামী দিনে এই সরকারের পতনের আন্দোলনে সকলে ঐক্যবদ্ধ হোন। আজকে আমি সেই আন্দোলনের ডাক দিচ্ছি।
যুবদল নেতা এসএম জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে মিছিল সমাবেশস্থলে প্রবেশের সময় পুলিশ হামলা চালানোর অভিযোগ করে ঘটনার নিন্দা জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, দেশটা ভাষনে স্বাধীন হয় নাই, দেশটা স্বাধীন হয়েছে যুদ্ধে। সেই একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে, সেই যুদ্ধের অপর নাম জিয়াউর রহমান। যুদ্ধ মানে জিয়া, গণতন্ত্র মানে জিয়া, দেশপ্রেম মানে জিয়া, সততা মানে জিয়া, আধুনিক বাংলাদেশ মানে জিয়া, স্বনির্ভর বাংলাদেশ মানে জিয়া, বিশ্বের দরবারে মর্যাদাশীল জাতির নাম জিয়া। জিয়া-বাংলাদেশী জাতি এক কাতারে লেখা। কোনোটাকে কোনভাবে বিচ্ছিন্ন করা যায় না। জিয়ার খেতাব নিয়ে আমরা ব্যবসা করি না, আমরা গর্ববোধ করি, আমরা উৎসাহিত হই। আমি সকলকে বলি, ও খেতাব নিয়ে টানাটানি করুক, সবাই মিলে আমরা ওর গদিটা ধরে টান দেই। ওখান থেকে নামিয়ে নিতে পারলে সব হিসাব-নিকাশ একদিনে চুকে যাবে।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, জামুকা (জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল) এর কোনো এখতিয়ার নেই এই খেতাব বাতিলের। এই খেতাব দেয়া হয়েছে তখন মুক্তিযুদ্ধে যারা অবদান রেখেছে সেই সময় কমিটি করে সেই কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক সেই সময়ে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে এই খেতাব দেয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যদি আজকে রনাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের সেই খেতাবকে বাতিল করার মতো তাদের ক্ষমতা থাকে তাহলে জিজ্ঞাস করতে চাই তারা কী আবার নতুন করে কাউকে খেতাব দেয়ার ক্ষমতা আছে কিনা? তাদের খেতাব বাতিল করার ক্ষমতা থেকে থাকে তাহলে তারা জাতিকে জানাক তারা আবার নতুন করে বীর উত্তম, বীর বিক্রম, বীর প্রতীক বা সর্বোচ্চ বীর শ্রেষ্ঠ আবার কাউকে দেয়ার ক্ষমতা আছে কিনা। এটা তাদের নাই। অতএব বাতিল করার ক্ষমতা জামুকার নাই।