চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ক্যাম্পাসে এক নারী শিক্ষার্থীকে যৌন নিপীড়ন করার ঘটনায় অভিযুক্ত দুই শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।একই সঙ্গে ওই দুই শিক্ষার্থীর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
বহিষ্কৃত দুই শিক্ষার্থী হলেন- ইতিহাস বিভাগের আজিম হোসেন (শিক্ষাবর্ষ ২০১৯-২০) ও নৃবিজ্ঞান বিভাগ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মো. নুরুল আবছার ওরফে বাবু।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর শহিদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রক্টর জানান, অভিযুক্ত অপর দুই শিক্ষার্থী হাটহাজারী কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র নুর হোসেন ওরফে শাওন (২২) ও একই কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মো. মাসুদ রানা ওরফে মাসুদকে (২২) আজীবন বহিষ্কারের জন্যও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
অভিযুক্ত অপর দুইজনের বিরুদ্ধে কি ধরণের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এস এম মনিরুল হাসান বলেন, “চারজনের মধ্যে অন্য দুজন হাটহাজারি কলেজের শিক্ষার্থী। তাদেরকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করার জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মশিউর রহমানের কাছে আবেদন করা হবে।“
এরআগে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ছাত্রীকে হেনস্তার ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন গ্রেপ্তার চার আসামি।
শনিবার বেলা ১১টার দিকে দুর্যাব-৭-এর চট্টগ্রামের চাঁন্দগাও ক্যাম্পে এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রীকে যৌন হেনস্তার বিস্তারিত তুলে ধরেন র্যাব-৭-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম এ ইউসুফ এ কথা বলেন।
র্যাব কর্মকর্তা এম এ ইউসুফ বলেন, “শুক্রবার ঘটনার মূল অভিযুক্ত আজিমকে গ্রেপ্তার করা হয়। সে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং স্থানীয়। তার নেতৃত্বে পুরো ঘটনা ঘটেছে। তাকে গ্রেপ্তারের পর আমরা অন্যদের নাম পাই।
ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত ছিল না দাবি করে র্যাবের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, এখানে আমরা কোনো ধরনের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা পাইনি। যার নেতৃত্বে ঘটনা ঘটেছে, আজিম, সে অকপটে বলেছে, ঘটনাটি ঘটেছে তাৎক্ষণিক। কোনো পূর্ব পরিকল্পনা ছিল না বা মেয়েটিকে টার্গেট করার কোনো প্ল্যান ছিল না। এমনকি মেয়েটিও আমাদের বলেছে, সে আজিমকে আগে থেকে চিনত না।
আজিমের বিষয়ে এম এ ইউসুফ বলেন, “আজিম যেহেতু এলাকায় অবস্থান করে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে, এই কারণে এলাকায় তার প্রভাব ছিল। এই প্রভাব-প্রতিপত্তি খাটিয়ে সে হয়তো ছোটখাটো কিছু ঘটনা ঘটিয়েছে বলে জেনেছি। এগুলো তদন্ত করে আমরা বের করব।”
প্রসঙ্গত,গত রবিবার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের হতাশার মোড় থেকে হলে ফেরার পথে এক ছাত্রী ও তার বন্ধুকে আটকে বোটানিক্যাল গার্ডেন এলাকায় নিয়ে বিবস্ত্র করে যৌন নিপীড়ন করে পাঁচজন। ওই ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টাও করা হয় বলে অভিযোগ।
ঘটনার পরদিন সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে ওই ছাত্রী লিখিত অভিযোগ দিতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেলের বাধায় তা দিতে পারেননি বলে অভিযোগ করেছেন ওই ছাত্রীর এক বন্ধু।
তবে রুবেলের দাবি, তিনি ওই ছাত্রীকে অভিযোগ দিতে বাধা নয়, বরং সহযোগিতা করেছেন। ইতোমধ্যে রুবেলকে ‘শৃঙ্খলা পরিপন্থী’ কাজ করায় শোকজ করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।