চমস্কির সাক্ষাৎকার: হোস্টের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্টের অভিযোগ

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুন ২৩, ২০২১, ০৭:২২ পিএম

চমস্কির সাক্ষাৎকার: হোস্টের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্টের অভিযোগ

বাংলাদেশের একটি অনলাইন শো 'টি-কাপ'-এর মাধ্যমে সাক্ষাৎকার প্রদানের কথা ছিল আধুনিক ভাষাতত্ত্বের জনক ও দার্শনিক নোয়াম চমস্কির। বিষয়টি নিয়ে দারুণ আশাবাদী ছিল তরুণ দর্শকরা। কিন্তু আয়োজকদের সময় বিলম্বের কারণে সাক্ষাৎকার সম্পূর্ণ না করেই চলে যান বর্তমান সময়ের এই বিখ্যাত দার্শনিক। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশের পাশাপাশি এ ঘটনায় বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে বলে দাবি দর্শকদের।

বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে সাক্ষাৎকারটি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত এর আয়োজক তানভীরুল মিরাজ রিপন প্রায় ৫৪ মিনিট পরে শুরু করেন এই সাক্ষাৎকার। এ সময় নোয়াম চমস্কি জানান, সময় অতিক্রম হয়ে যাওয়ায় এখন সাক্ষাৎকার দেয়া সম্ভব নয়। অন্য কোন সময় সাক্ষাৎকারটি নেয়ার জন্য। কিন্তু তারপরও তাকে সাক্ষাৎকারের প্রশ্ন শুরু করেন মিরাজ রিপন। এ সময় দুটি প্রশ্নের উত্তর দিলেও ৯টা ৩০ মিনিটে 'সময় না থাকায়' সাক্ষাৎকার শেষ করে চলে যান তিনি।

প্রায় তিন মিনিটের এই প্রশ্ন-উত্তরে মিরাজ রিপন নোয়াম চমস্কির কাছে জানতে চান, ১৯৭১ সালের নিক্সন এডমিনিস্ট্রেশন যেভাবে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ওপর হওয়া নির্যাতনকে সমর্থন করেছিলো। বিষয়টিকে কিভাবে দেখছেন চমস্কি।

এর উত্তরে নোয়াম চমস্কি জানান, ১৯৭১ সালে হেনরি কিসিঞ্জার বেইজিংয়ে কোনো পরিকল্পিত সফর করতে চাননি। তিনি একটি গোপন সফর চেয়েছিলেন। সংবাদমাধ্যমের জন্য এটি ছিল বড় কোনো ঘটনা। একটি নতুন বিশ্ব প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছেন। কিন্তু তখনকার পূর্ব পাকিস্তানে সেনাবাহিনীর নৃশংসতায় সেটা অকার্যকর হয়ে পড়েছিল। এতে কিজিঞ্জার ক্ষুব্ধ ছিলেন, কারণ এর মধ্য দিয়ে ক্যারিয়ারে আরও অনেক দূর এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ হারিয়েছেন তিনি। হেনরি কিজিঞ্জার পাকিস্তানের হামলা, ব্যাপক হত্যাকাণ্ড ও ধ্বংসযজ্ঞে সমর্থন দিয়েছেন। ভারত এতে হস্তক্ষেপ করলে তিনি নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দেন। বঙ্গোপসাগরে যুদ্ধজাহাজও পাঠান। নৃশংসতাকে সহায়তা করতে যা যা করার দরকার—তিনি তা করেন। কারণ এটা তার পরিকল্পিত পাকিস্তান সফর বাধাগ্রস্ত করেছিল।

এদিকে বাংলাদেশে পাকিস্তানের চালানো সেই গণহত্যার স্বীকৃতি এখনও দেয়া হয়নি এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই জঘন্য ঘটনায় সমর্থন জানিয়ে হেনরি কিসিঞ্জার যুক্তরাষ্ট্রের জন্য লজ্জার কারণ হয়েছিলো। তবে সৌভাগ্যের বিষয় হলো, তারপরও স্বাধীনতা অর্জন করেছে তারা। আধুনিক যুগের সবচাইতে বর্বর হত্যাকাণ্ডের একটি এটি। বিষয়টি নিয়ে অনেক কিছু বলার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু আমার এখন সময় নেই। সুতরাং চলে যেতে হবে।

এদিকে আয়োজকদের দুর্বলতার সমালোচনা করে ক্ষুব্ধ মন্তব্য দেখা যাচ্ছে 'টি-কাপ' পেজ জুড়ে। সেখানে অনেকেই দাবি করছেন, এই ঘটনার মাধ্যমে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করা হয়েছে। চমস্কির মত এমন গুরুত্বপূর্ণ একজন মানুষের সাক্ষাৎকার নেয়ার ক্ষেত্রে আরও বেশি প্রস্তুতি নেয়ার প্রয়োজন ছিলো বলেও জানান অনেকে।

চমস্কিকে নিয়ে এই সাক্ষাৎকারে নিজেদের দুর্বলতার কথা স্বীকার করে দর্শকদের কাছে ক্ষমা চেয়েছে সাক্ষাৎকারটির আয়োজক 'টি-কাপ'-এর মিরাজ রিপন। তিনি লেখেন, নোয়াম চমস্কি বিখ্যাত একজন স্কলার৷ আজকের শো'তে আমার যথেষ্ট ভুল ছিলো, আমি টাইম ম্যানেজমেন্ট বুঝিনি এবং সময় নিয়ে সচেতন ছিলাম না। পাশাপাশি আমি যে হোমওয়ার্ক করেছি সেখানেও হয়তো ভুল ছিলো৷ যা আপনারা মেনে নিতে পারেননি ৷ এটির জন্য আমি নিঃশর্তে ক্ষমা প্রার্থনা করছি আপনাদের কাছে৷ আমি নতুন, আগ্রহী শিখতে, আমি শিখছি, আরও শিখাবেন আমাকে।' তিনি আরও জানান, আবারও সাক্ষাৎকার দিতে আসবেন নোয়াম চমস্কি।

নোয়াম চমস্কির পূর্ণনাম 'আভ্রাম নোয়াম চমস্কি'। মার্কিন এই তাত্ত্বিক ভাষাবিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ, দার্শনিক ও সমাজ সমালোচককে আধুনিক ভাষাতত্ত্বের জনক বলা হয়। তিনি ষাটের দশকে মার্কিন পররাষ্ট্র নীতি ও পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক নীতিগুলো নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন নীতিগত সিদ্ধান্তের গঠনমূলক সমালোচনার জন্য বিশ্ব জুড়ে সমাদৃত তিনি। বর্তমানে মার্কিন প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় 'ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি'তে এমিরেটস প্রফেসর তিনি।

Link copied!