জুলাই ১৯, ২০২১, ০৮:২৯ পিএম
চলতি বছরে জুনে শিল্প মন্ত্রণালয় সাভারের হেমায়েতপুরের চামড়া শিল্পনগরী পূর্ণাঙ্গ ঘোষণা দেয়। তবে পরিকল্পনার ১৯ বছর পর কাগজে কলমে বাস্তবায়ন হলেও এখনও পূর্ণাঙ্গ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা হয়নি। যার ফলে বুড়িগঙ্গার পরিবর্তে এখন ধলেশ্বরী নদী দূষিত হচ্ছে।
১৯ বছরে ব্যয় ৬ গুণ বৃদ্ধি
২০০৩ সালে নেওয়া প্রকল্পটির মেয়াদ ১২ দফা বাড়ানোর পাশাপাশি ১৭৫ কোটি টাকার পরিবর্তে ১০১৫ কোটি খরচ করা হয়। যা প্রায় প্রস্তাবিত বরাদ্দের ৬ গুণ বেশি। তবে বরাদ্দ বেশি হলেও পরিবেশ দূষণ বন্ধে কমন ক্রোম রিকভারি ইউনিট নির্মাণ সম্পন্ন হয়নি।শুরুতে কথা ছিল শিল্পনগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ট্যানারিগুলো নিজেরাই ইটিপি স্থাপন করবে। কিন্তু ট্যানারিগুলো তা করছিল না। পরে অনেক দেন-দরবারের পর শিল্প মন্ত্রণালয় প্রকল্পের আওতায় সিইটিপি স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়ে ২০১০ সালে প্রকল্প সংশোধন করে। তখন প্রকল্প ব্যয় বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয় ৫৪৫ কোটি টাকা।
বর্জ্য পরিশোধন হচ্ছে না
প্রকল্পের আওতায় দুই বছরের মধ্যে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সেন্ট্রাল ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (সিইটিপি) স্থাপন করার কথা থাকলেও সাত বছরে তা শেষ হয়। কিন্তু সেই সিইটিপির পরিশোধন ক্ষমতা চামড়ার মৌসুমে ট্যানারিগুলোর উৎপাদিত বর্জ্যের মাত্র অর্ধেক। তাই সিইটিপিতে বর্জ্য পুরোপুরি ট্রিটমেন্ট হওয়ার আগেই তা ফেলে দেওয়া হচ্ছে। যার ফলে নদীতে সরাসরি পড়ছে ট্যানারির তরল বর্জ্য।
পরিশোধন ছাড়াই তরল বর্জ্য ফেলে দেয়া হচ্ছে ধলেশ্বরীতে।
ইএসকিউ (এনভায়রনমেন্ট, সোশ্যাল অ্যান্ড কোয়ালিটি), আইএসও এবং অন্যান্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করা জরুরি হলেও তা সম্ভব হয়নি। কোরবানি ঈদের পর অনেক বেশি চামড়া প্রক্রিয়াকরণের সময় বর্জ্য উৎপাদন হয় প্রায় ৫০ হাজার ঘনমিটার। বছরের বাকি সময় ২৮ হাজার ঘনমিটার বর্জ্য উৎপাদন করে ট্যানারিগুলো। ফলে বর্জ্যের পরিমাণ অনেক বেশি হওয়ায় পুরোপুরি শোধন করার আগেই তা ফেলে দেওয়া হয় ধলেশ্বরীর পানিতে।
কঠিন বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল
প্রকল্পের শুরুতে কঠিন বর্জ্য দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা ছিল। প্রকল্পের ডিপিপিতে থাকা সত্ত্বেও শেষ মুহুর্তে তা বাতিল করে দেয়। বেহাল দশা কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায়। চামড়া শিল্পনগরীর পশ্চিমাংশে ধলেশ্বরী নদীর তীরে উন্মুক্ত স্থানে ফেলা হচ্ছে ট্যানারির কঠিন বর্জ্য বা সলিড ওয়েস্ট, যা পরিবেশের পাশাপাশি দূষণ করছে নদীও। প্রকল্পের সীমানা ভেঙ্গে নদীতে মিশছে উন্মুক্ত পড়ে থাকা চামড়া বর্জ্য।
উন্মুক্ত স্থানে কঠিন বর্জ্য ফেলে রাখা হয়।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সভাপতি মো. শাহীন আহমেদ বলেছেন, সর্বজনীন (কমন) ক্রোম রিকভারি ইউনিট পরিপূর্ণভাবে নির্মাণ না হওয়া, সিইটিপি কমিশনিং এবং কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে রিসোর্স জেনারেশনের ব্যবস্থা না হওয়ার কারণে আমরা প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানোর অনুরোধ করেছি। মূলত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে করার জন্যই আমাদের ট্যানারি স্থানান্তর করা হয়েছে। সেটাই যদি বাস্তবায়ন না হয় তাহলে প্রকল্পের যথার্থতা থাকে না।