ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে রাজধানীর চারটি এলাকা

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

মে ৯, ২০২১, ০৩:০৭ পিএম

ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে রাজধানীর চারটি এলাকা

ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার উপস্থিতির কারণে রাজধানীর চার এলাকায় ডেঙ্গু সংক্রমণের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এ চারটি এলাকা হলো— ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) লালমাটিয়া ও ইকবাল রোড এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সায়েদাবাদ ও উত্তর যাত্রাবাড়ী। গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (ডিজিএইচএস) এক জরিপের ফলাফলে এ তথ্য উঠে এসেছে। 

ভবনের জমে থাকা পানিতে লার্ভা বেশি

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার জাতীয় ম্যালেরিয়া ও এডিস বাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় জরিপটি পরিচালিত হয়। গত ২৯ মার্চ থেকে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত দুই সিটি করপোরেশনের ৬৯টি ওয়ার্ডের ৭০টি স্থানে এ জরিপ চালানো হয়।

জরিপে সবচেয়ে বেশি এডিস মশার লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া গেছে নির্মাণাধীন ভবনের মেঝেতে জমে থাকা পানিতে। লার্ভার ২০ দশমিক ২২ শতাংশের উপস্থিতিই এখানে। এ ছাড়া, প্লাস্টিকের ড্রামে ১৯ দশমিক ১০ শতাংশ, বালতিতে ১১ দশমিক ২৪ শতাংশ, পানির ট্যাংকে সাত দশমিক ৮৭ শতাংশ, পানির মিটারের গর্তে ছয় দশমিক ৭৪ শতাংশ, ফুলের টব ও ট্রেতে দুই দশমিক ২৫ শতাংশ, প্লাস্টিকের বোতলে চার দশমিক ৪৯ শতাংশ এবং লিফটের গর্তে তিন দশমিক ৩৭ শতাংশ লার্ভা পাওয়া গেছে।

জরিপে বহুতল ভবনগুলোতে সর্বোচ্চ ৪৩ দশমিক ৮২ শতাংশ লার্ভা পাওয়া গেছে। এ ছাড়া, নির্মাণাধীন ভবনগুলোতে ৩৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ, একক বাড়িতে ১৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ এবং বস্তি এলাকায় পাঁচ দশমিক ৬২ শতাংশ লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

স্বল্প বৃষ্টিতে বেশি ভয়

এপ্রিল ও মে’র প্রথম সপ্তাহে ঢাকায় পাঁচ থেকে ছয় বার বৃষ্টি হয়েছে। এ বৃষ্টির কারণে এডিস মশার প্রজননের অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়েছে বলে জানায় সংশ্লিষ্টরা

কীট বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রাণিবিজ্ঞান সমিতির সাবেক সভাপতি মঞ্জুর চৌধুরী জানান, মশা নিধন অভিযানের অংশ হিসেবে বাস স্টপ, হাসপাতাল ও পুলিশের জব্দ করা যানবাহনগুলো পরিষ্কার রাখার ব্যাপারে মনোযোগ দিতে হবে বলে উল্লেখ করেন মঞ্জুর চৌধুরী। মহামারির কারণে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চালানোরও পরামর্শ দেন তিনি।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীট বিশেষজ্ঞ কবিরুল বাশার জানান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জরিপে আতঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু পাওয়া যায়নি। এরপরও, ডেঙ্গু সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে। যদি দুই সিটি করপোরেশন এবং জনসাধারণ সচেতন হয়ে মশার প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস করে, তবে বৃষ্টি হলেও মশা বাড়বে না।

হটস্পট বের করে অভিযানের পরিকল্পনা

গত বছরের অভিযানে যেসব বাড়িতে মশার লার্ভা বেশি শনাক্ত করা হয়েছিল, সেগুলোর মালিকদের মোবাইল ফোনে বার্তা পাঠিয়ে এডিস মশার ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে বলছে সিটি কর্পোরেশন। ইতোমধ্যে এডিস মশার হটস্পট খুঁজে বের করার লক্ষ্যে কাজ করছেন সিটি কর্পোরেশন। ডিএনসিসিতে মশা নিয়ন্ত্রণ পরিদর্শকের সংকট ছিল। তবে ইতোমধ্যেই ডিএনসিসির ৫৪টি ওয়ার্ডের জন্য ৫৪ জন পরিদর্শক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘ডিএনসিসিতে দুজন কীট বিশেষজ্ঞ আছেন। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে কীট বিশেষজ্ঞরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এ জন্য আমরা আরও ১০ জন কীট বিশেষজ্ঞ চেয়ে সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছি।’

এ ক্ষেত্রে সচেতনতা খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করে মেয়র বলেন, এ বছর মহামারির কারণে তারা সচেতনতা বিষয়ক প্রচারাভিযান চালাতে পারছেন না। তবে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা করছেন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মীর মুস্তাফিজুর রহমান জানান, তারা বর্তমানে তিনটি ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এডিস মশা নিধন অভিযান চালাচ্ছেন। ‘লকডাউনের’ মধ্যেও জোন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে কাজ অব্যাহত রেখেছেন তারা।

Link copied!