এপ্রিল ৪, ২০২৩, ০৭:১৬ পিএম
চাঁদা আদায় করতে গিয়ে গণপিটুনি খেলেন এক ছাত্রলীগ নেতা। তরমুজচাষিদের কাছ থেকে তিনি ওই চাঁদা আদায় করতে গিয়েছিলেন বলে অভিযোগ উঠে। এখন আহত হয়ে তিনি এখন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে ভর্তি আছেন। ঘটনাটি ঘটেছে আমতলী উপজেলার হলদিয়া হাটে গতকাল সোমবার রাত ৯টার দিকে। ওই ছাত্রলীগ নেতার বিচার দাবিতে আজ মঙ্গলবার দুপুরে এলাকাবাসী বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশও করেছেন। স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে েএসব তথ্য জানা গেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, আমতলী উপজেলার ছাত্রলীগ সহসভাপতি মো. সবুজ মালাকার একজন কিশোর গ্যাং লিডার এবং ডজনখানেক মামলার আসামি। হলদিয়া ইউনিয়নের তরমুজচাষিদের কাছে তরমুজ প্রতি ১০ টাকা চাঁদা আদায় করে আসছেন তিনি। কৃষকেরা চাঁদা না দিলে তরমুজের গাড়ি আটকে দেন।
স্থানীয় কৃষক বাসুদেব শীল ওই ছাত্রলীগে নেতা সবুজ মালাকারকে চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি গতকাল রাত ৯টার দিকে বাসুদেব শীলকে হলদিয়া হাটে তাঁর অফিসে ধরে নিয়ে যান। সেখানে ওই কৃষককে মারধর করা হয়। এর প্রতিবাদ করলে বরগুনা জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য আরিফ-উল-হাসান আরিফকেও মারধর করেন তিনি। তাঁকে রক্ষায় স্থানীয় রাকিবুল হাসান ও আরিফ হোসেন এগিয়ে গেলে তাঁদেরও মারধর করা হয়।
খবরটি ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় কৃষকেরা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। তাঁরা রাতেই হলদিয়া হাটে জড়ো হন। একপর্যায়ে সবুজ মালাকারকে পিটুনি দেওয়া শুরু হয়। খবর পেয়ে পুলিশ আসে। তবে তার আগেই স্থানীয় কয়েকজন তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। ওই হাসপাতালের চিকিৎসক মিনহাজুর রহমান তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে পাঠাতে বলেন।
আমতলী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. দাদন মিয়া বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই। তবে যাওয়ার আগেই স্থানীয়রা তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
কৃষক বাসুদেব শীল বলেন, আমি ৩০ একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। আমার খেতের তরমুজপ্রতি তাঁকে ১০ টাকা চাঁদা দিতে হবে। আমি এতে রাজি না হওয়ায় সোমবার রাতে আমাকে তাঁর অফিসে ধরে এনে মারধর করেছে। আমাকে মারধর করার প্রতিবাদ করায় সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য আফির-উল-হাসান আরিফকে পিটিয়ে হাত ভেঙে দিয়েছে। আমি এ ঘটনার বিচার দাবি করছি।
কৃষকেরা বলেন, উপজেলা ছাত্রলীগ সহসভাপতি সবুজ মালাকার প্রভাব খাটিয়ে এলাকার তরমুজচাষিদের কাছে তরমুজপ্রতি ১০ টাকা দাবি করেছে। কৃষকেরা নিরুপায় হয়ে তাঁকে চাঁদা দিচ্ছে। যাঁরা চাঁদা দেয়নি, তাঁদের তরমুজবোঝাই গাড়ি আটকে দিয়ে টাকা আদায় করছে। আমরা ওই চাঁদাবাজ সবুজ মালাকারের নির্যাতন থেকে মুক্তি চাই।
গত বছরের ১৬ আগস্ট উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি মো. মোয়াজ্জেম হোসেন খানকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে গুরুতর জখম করেন এই সবুজ মালাকার। ওই মামলায় তিনি পরে জামিনে মুক্ত হন। এ ছাড়া চাঁদাবাজি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধে তাঁর বিরুদ্ধে ডজনখানেক মামলা রয়েছে।
বরগুনা জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মো. রেজাউল কবির রেজা বলেন, মারধরের খবর শুনেছি। যে কারণে তাঁকে মারধর করা হয়েছে, ওই ঘটনা যদি সত্য হয়, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আমতলী থানার ওসি এ কে এম মিজানুর রহমান বলেন, কোনো লিখিত অভিযোগ এখনো পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।