তালা কাটেন জ্যাক আর দোকান সাবাড় করেন জামাল

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

মার্চ ৪, ২০২৩, ১২:৫৬ এএম

তালা কাটেন জ্যাক আর দোকান সাবাড় করেন জামাল

তালা কাটতে লাগে কয়েক সেকেন্ড! আর দোকান সাবাড় করতে বড়জোর মিনিট চারেক! এরমধ্যেই তারা দৃশ্যপট থেকে মালামাল সমেত ভেগে যেতে সক্ষম। চুরির মালামাল বিক্রির সুবিধার্থে তারা কিনেছে পিকআপও। সেই পিকআপে ঘুরে ঘুরেই তারা চুরি করে থাকেন। সাত বছর ধরে এভাবেই চলছে। এভাবে রাজধানীজুড়ে দেড় শতাধিক চুরি করে ফেলেছেন তারা। 

সম্প্রতি রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জাফরাবাদ এলাকা থেকে দুর্ধর্ষ দুই চোর এবং চুরিকৃত মালামাল ক্রয়ের চুক্তিবদ্ধ ক্রেতাসহ তিনজনকে  গ্রেফতার করে মিরপুর থানা পুলিশ। এ সময়ই তাদের কাছ থেকে চুরির সরঞ্জাম এবং একটি পিকআপ উদ্ধার করা হয়। এরপরই বেরিয়ে আসে দুর্ধর্ষ এই চোরবাহিনীর ‘কীর্তিকলাপ!’

চোরদলের গ্রেফতারকৃতরা হলেন: মো. জাকির হোসেন ওরফে জ্যাক (৪৪) ও মো. নূর জামাল ওরফে জামাল (২৬)। তারা জ্যাক-জামাল নামেই বেশি পরিচিত। গ্রেফতার অপর জন হলেন সোহেল (৩৫)। 

শুক্রবার (৩ মার্চ) সন্ধ্যায় মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন এসব তথ্য জানান।

মহসীন আরও বলেন, কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে তালা কেটে কয়েক মিনিটের মধ্যেই দোকান সাবাড় করে চলে যান তারা। চুরি করা এবং চুরির মালামাল বিক্রির সুবিধার্থে পিকআপ কিনেছেন জ্যাক। সেই পিকআপে ঘুরে ঘুরেই তারা চুরি করতেন। সাত বছরে রাজধানীজুড়ে দেড় শতাধিক চুরি করেন জ্যাক-জামাল জুটি।

ওসি বলেন, ছয় মাস আগে জনৈক আসাদুজ্জামান নূরের নিউ মিউজিক এশিয়া নামের এক দোকানে দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনা তদন্তে জ্যাক-জামালের নাম উঠে আসে। ২০২২ সালের ৭ সেপ্টেম্বর মিরপুর বড়বাগ পলিভিটা বেকারি এলাকায় সংঘটিত সেই চুরিতে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ২৩টি মোবাইল সেট, একটি ল্যাপটপ, ২০টি মেমোরি কার্ড, ৫০০টি রিচার্জ কার্ড, দেশিয় অস্ত্র, নগদ অর্থসহ আনুমানিক দেড় লাখ টাকার মালামাল চুরি করেন জ্যাক-জামাল। দুর্ধর্ষ সেই চুরির দীর্ঘ তদন্ত শেষে সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে জ্যাক-জামালকে শনাক্ত করা হয়। পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সোহেলকে গ্রেফতার করা হয়।

দুর্ধর্ষ জ্যাক-জামাল আগে একটি চুরি করতে কয়েক দিন সময় নিতেন। গাড়ি কেনার পর এক রাতে চারটি চুরিও করেছেন তারা। পরে এ পিকআপে করেই চুরির মালামাল বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করেছেন। চুরির টাকায় চুরির জন্য তারা শুধু গাড়িই কেনেনি, আলাদা বাসাও ভাড়া করেছেন। সব মালামাল একসাথে বিক্রি করলে ধরা পড়ার আশঙ্কা থাকে। সে কারণে ভাড়া করা বাসা চুরির মালের গুদাম হিসেবেও ব্যবহার করেন তারা।

জ্যাক-জামাল চুরি করতে বের হন রাত ২ টার পর। চুরি করে বাসায় ফিরেন ভোর ৬টায়। চার ঘণ্টার মধ্যেই তাঁরা সব চুরি করেন। দুজনের মধ্যে জ্যাক গ্রিল ও তালা কাটেন। গ্রিল কিংবা তালা কাটতে তার সময় লাগে সর্বোচ্চ চার সেকেন্ড। কাটার পর দোকানে ঢুকে মালামাল চুরি করেন জামাল। জামালের এ কাজে সময় লাগে মাত্র চার মিনিট! এক রাতেই তারা কয়েকটি দোকান চুরি করেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জ্যাক-জামাল জানান, এক রাতে তাঁরা সর্বোচ্চ চারটি পর্যন্ত চুরিও করেছেন।

পুলিশ জানায়, সাধারণত রাস্তার ওপরে থাকা ছোট ছোট পান-সিগারেট, মোবাইল রিচার্জের, মুদির দোকানই বেশি টার্গেট করেন তাঁরা। কারণ এসব দোকানিরা সাধারণত অপেক্ষাকৃত নিম্ন আয়ের হন। তাই চুরি করলেও তাঁরা মামলা করেন না। এ কারণেই দেড় শতাধিক চুরি করলেও তাদের বিরুদ্ধে মামলা খুবই কম। জ্যাকের বিরুদ্ধে চারটি এবং জামালের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা রয়েছে।

Link copied!