ব্যাপক উৎসাহ, উদ্দীপনা আর ত্যাগের মহিমায় বুধবার (২১ জুলাই) দেশব্যাপী পালিত হচ্ছে পবিত্র ঈদ উল আজহা। সকালে ঈদের নামাজ শেষে সামর্থ্যবান মুসলমানরা মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি করেন।
ভাব-গাম্ভীর্য অঅর ত্যাগের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মঙ্গলবার (২০ জুলাই) উদযাপিত হলেও ভৌগলিক কারণে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, মালদ্বীপসহ এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশে বুধবার (২১ জুলাই) পবিত্র ঈদ উল আজহা উদযাপিত হচ্ছে।
মুসলিম জাতির পিতা হজরত ইবরাহিম (আ) এর ত্যাগের স্মৃতিবিজড়িত এই ঈদ উল আজহা। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য প্রয়োজনে নিজের প্রিয় বস্তুকে কোরবানি দেয়াই হলো এই ঈদের আদর্শ।
কোরবানি মানব ইতিহাসের সূচনাকাল থেকে চলে আসা একটি ইবাদত। এটি মূলত স্রষ্টার উদ্দেশে সৃষ্টির নজরানা। কোরবানি শব্দের অর্থ ত্যাগ, নৈকট্য লাভ। পরিভাষায় কোরবানি হলো, জিলহজ মাসের ১০ তারিখ সকাল থেকে ১২ তারিখ সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট পশু জবাই করা।
হজরত আদম (আ.)-এর পুত্র হাবিল (রা.) ও কাবিল হচ্ছেন মানব ইতিহাসের প্রথম কোরবানিদাতা। পরবর্তীতে মহান আল্লাহ হজরত ইব্রাহিম (আ) কে পরীক্ষা করার জন্য তার প্রিয় পুত্র ইসমাইল আ. সা. কে কোরবানি দেওয়ার নির্দেশ দেন। আল্লাহর নির্দেশ পালনের জন্য ইব্রাহিম (আ) প্রিয় পুত্রকে কোরবানির উদ্দেশ্যে গলার ছুরি চালালে আল্লাহর অশেষ মেহেরবানিতে একটি পশু কোরবানি হয়। এ ঘটনার পর থেকেই শেষ নবী হজরত মুহম্মদ সা. এর উম্মতরা এ আদর্শ অনুসরণ করে আসছেন।
পবিত্র ঈদ উল আজহা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসী ও সারাবিশ্বের মুসলমানদের শুভেচ্ছা জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে মুসলিম উম্মাহর অব্যাহত শান্তি, সমৃদ্ধি ও মঙ্গল কামনা করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপতির বাণী
পবিত্র ঈদ উল আজহা উপলক্ষ্যে দেওয়া বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, “মহান আল্লাহর প্রতি গভীর আনুগত্য ও সর্বোচ্চ ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর পবিত্র ঈদুল আযহা। "আযহা" অর্থ কোরবানি বা উৎসর্গ করা। ঈদুল আয়হা উৎসবের সাথে মিশে আছে চরম ত্যাগ ও প্রভুপ্রেমের পরাকাষ্ঠা। কোরবানি আমাদের মাঝে আত্মদান ও আত্মত্যাগের মানসিকতা সঞ্চারিত করে, আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীর সঙ্গে সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নেয়ার মনোভাব ও সহিষ্ণুতার শিক্ষা দেয়।"
তিনি বলেন, “মহান আল্লাহর নির্দেশে স্বীয় পুত্র হযরত ইসরাইল (আঃ) কে কোরবানি করতে উদ্যত হয়ে হযরত ইব্রাহিম (আঃ) আল্লাহর প্রতি অগাধ ভালোবাসা, অবিচল আনুগত্য ও অসীম আত্মত্যাগের যে সুমহান দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তা ইতিহাসে অতুলনীয়।”
রাষ্ট্রপতি বলেন, “এ বছর এমন একটা সময়ে ঈদুল আযহা উদযাপিত হচ্ছে যখন বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্ব করোনাভাইরাসের সংক্রমণে চরমভাবে বিপর্যস্ত। করোনাভাইরাসের কারণে দেশের জনগণের জীবন ও জীবিকা আজ কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। জীবন বাঁচানো প্রথম অগ্রাধিকার হলেও জীবন বাঁচিয়ে রাখতে জীবিকার গুরুত্বও অনস্বীকার্য।”
প্রধানমন্ত্রীর বাণী
দেশবাসী ও মুসলিম উম্মাহর প্রতি ঈদ উল আজহা উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে প্রথানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “প্রতি বছর এই উৎসব পালনের মধ্য দিয়ে সচ্ছল মুসলমানরা কোরবানি করা পশুর গোশত আত্মীয়-স্বজন ও গরিব-দুঃখীর মধ্যে বিলিয়ে দেয়। যার মাধ্যমে মানুষে-মানুষে সহমর্মিতা ও সাম্যের বন্ধন প্রতিষ্ঠা হয়। ঈদ-উল-আযহা শান্তি সহমর্মিতা, ত্যাগ ও ভ্রাতৃত্ববোধের শিক্ষা দেয়। আসুন, আমরা সবাই পবিত্র ঈদ-উল-আযহার মর্মবাণী অন্তরে ধারণ করে নিজ নিজ অবস্থান থেকে জনকল্যাণমুখী কাজে অংশ নিয়ে বৈষম্যহীন, সুখী, সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ে তুলি।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা এক সংকটময় সময়ে ঈদুল আযহা উদযাপন করছি। করোনাভাইরাস সমগ্র বিশ্বকে স্থবির করে দিয়েছে। সরকার পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে। জনগণকে সব সহযোগিতা প্রদান অব্যাহত রাখছে।”
করোনার সংক্রমণ মোকাবিলায় সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নির্ধারিত স্থানে পশু কোরবানি করার অনুরোধ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা যেন ঘরে পরিবার-পরিজন নিয়ে ঈদের আনন্দ উপভোগ করি। পাশাপাশি আল্লাহ তায়ালার দরবারে বিশেষ দোয়া করি, যেন এই সংক্রমণ থেকে আমরা সবাই দ্রুত মুক্তি পাই।”
এদিকে, যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদের নামাজ আদায়ে নির্দেশনা দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। ধর্ম মন্ত্রণালয়ে নির্দেশনা অনুসারে রাজধানীসহ সারাদেশের মসজিদগুলোতে সকল ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
ঈদুল আজহায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে পাঁচটি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পরিবারের সঙ্গে ঈদ পালনে ইতোমধ্যে ঢাকা ছেড়েছেন হাজারো মানুষ। মঙ্গলবার (২০ জুলাই) ঈদ যাত্রায় বাস, ট্রেন ও লঞ্চে ছিল যাত্রীর প্রচুর ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।