জানুয়ারি ১২, ২০২৩, ০৮:০১ পিএম
মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম ধনী দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাণিজ্যিক রাজধানী দুবাইয়ে বাংলাদেশের ৪৫৯ জনের সম্পদ থাকার বিষয়ে অনুসন্ধানের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে দায়ের করা রিট আবেদন শুনানি আসছে রবিবার অনুষ্ঠিত হবে।
বৃহস্পতিবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ রিট আবেদন শুনানির এ দিন ধার্য করেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট সুবীর নন্দী দাস।
এর আগে সকালে দুবাইয়ে ৪৫৯ বাংলাদেশির হাজার কোটি টাকার সম্পদ থাকার বিষয়ে অনুসন্ধান করার নির্দেশনা চেয়ে জনস্বার্থে হাইকোর্টে সম্পূরক রিট আবেদন দায়ের করেন তিনি।
গত বুধবার একটি জাতীয় দৈনিকে ‘দুবাইয়ে ৪৫৯ বাংলাদেশির হাজার প্রপার্টি’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করে এ আবেদন করা হয়। রিটে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), বিএফআইইউ, এনবিআর ও সিআইডিসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়েছে।
বর্তমানে বিত্তশালীদের পছন্দের অন্যতম জায়গা দুবাই। পশ্চিম এশিয়ার এই শহরে অনেকেই পাকাপাকি ভাবে সংসার গুছিয়ে নিচ্ছেন। এই তালিকায় পিছিয়ে নেই বাংলাদেশিরাও। গত দেড় বছরে দুবাইয়ে সম্পত্তি ক্রয়ের নিরিখে নজির গড়েছেন বাংলাদেশের সাড়ে চারশোর বেশি লোক।
জাতীয় দৈনিকের ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, দেড় বছরের ব্যবধানে দুবাইয়ে ১২ কোটি ২৩ লাখ দিরহাম বিনিয়োগ করেছেন বাংলাদেশিরা। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৩৪৬ কোটি ৯৬ লাখ ৫১ হাজার টাকা (১ দিরহাম= ২৮.৩৭ টাকা)।
তবে বাংলাদেশিরা দুবাইয়ে সবচেয়ে বেশি ফ্ল্যাট-বাড়ি কিনেছেন বলে যে দাবি করা হয়েছে, তার সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। ওই পরিমাণ অর্থ বেআইনি ভাবে দুবাইয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলেও দাবি।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, দুবাইয়ে সম্পত্তি কেনার এই তালিকায় রয়েছেন ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক নেতা ও আমলারা। যে সময়ে দুবাইয়ে সম্পত্তি কেনার কথা প্রকাশ্যে এসেছে, সেই সময় কোভিড অতিমারি পর্ব চলছিল। ফলে ওই সময় নিজেদের দেশ থেকে টাকা নিয়ে গিয়ে বিদেশে বাংলাদেশিরা সম্পত্তি কিনেছেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ওই প্রতিবেদনের একাংশে বলা হয়েছে- বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রকাশ্যে-গোপনে বিপুল পরিমাণ মূলধন স্থানান্তরিত হচ্ছে দুবাইয়ে। এ অর্থ পুনর্বিনিয়োগে ফুলে ফেঁপে উঠছে দুবাইয়ের আর্থিক, ভূসম্পত্তি, আবাসনসহ (রিয়েল এস্টেট) বিভিন্ন খাত। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড ডিফেন্স স্টাডিজের (সি৪এডিএস) সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণের ভিত্তিতে ইইউ ট্যাক্স অবজারভেটরি জানিয়েছে, বাংলাদেশে তথ্য গোপন করে দুবাইয়ে প্রপার্টি কিনেছেন ৪৫৯ বাংলাদেশি। ২০২০ সাল পর্যন্ত তাদের মালিকানায় সেখানে মোট ৯৭২টি প্রপার্টি ক্রয়ের তথ্য পাওয়া গেছে, কাগজে-কলমে যার মূল্য সাড়ে ৩১ কোটি ডলার। তবে প্রকৃতপক্ষে এসব সম্পত্তি কিনতে ক্রেতাদের ব্যয়ের পরিমাণ আরও অনেক বেশি হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
দুবাইয়ে বসবাসকারীসহ বিভিন্ন সূত্রের অনানুষ্ঠানিকভাবে জানানো তথ্য অনুযায়ী, ইইউ ট্যাক্স অবজারভেটরির পরিসংখ্যানটি করা হয়েছে সি৪এডিএসের ২০২০ সালের তথ্য নিয়ে। এরপর গত দুই বছরে দুবাইয়ে বাংলাদেশিদের প্রপার্টি ক্রয়ের প্রবণতা আরও ব্যাপক মাত্রায় বেড়েছে। এ সময়ের মধ্যে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি কিনেছেন বাংলাদেশিরা, যার তথ্য তারা দেশে পুরোপুরি গোপন করেছেন।
বর্তমান সময়ে দুবাই মানেই বিলাসবহুল জায়গা। সব রকমের সুযোগসুবিধা রয়েছে। ফলে বিত্তশালীদের পছন্দের জায়গা দুবাই। গত কয়েক বছর ধরেই সেখানে বিভিন্ন দেশের বিত্তশালীরা সম্পত্তি কিনছেন।
দুইয়ের ভূমি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, করোনায় দুবাইয়ে বাংলাদেশি ধনীরাই সবচেয়ে বেশি সম্পদ কিনেছেন। এদিক থেকে নেদারল্যান্ডস, সুইজারল্যান্ড, চীন ও জার্মানির মতো দেশগুলোর বাসিন্দাদের পেছনে ফেলেছেন বাংলাদেশিরা।
২০২২ সালে দুবাইয়ে রেকর্ডহারে জমি ও বাড়ি কেনাবেচা হয়েছে বলে দাবি। গত বছর দুবাইয়ে মোট ৯০ হাজার ৮৮১টি জমি ও বাড়ি কেনাবেচা হয়েছে। দেশটির স্থানীয় এক সংবাদমাধ্যমের খবরে এ তথ্য উঠে এসেছে।
এর আগে, ২০০৯ সালে ৮১ হাজার ১৮২টি জমি-বাড়ি বেচাকেনা রয়েছে। এ-ও জানা গিয়েছে যে, শুধু মাত্র ডিসেম্বর মাসেই সে দেশে ৮ হাজার আবাসনের লেনদেন হয়েছে।
২০২০ সালে করোনার মধ্যেই দেশের নির্মাণ খাতের ঠিকাদারির সঙ্গে যুক্ত একজন ব্যবসায়ী দুবাই চলে যান। এরপর থেকে তিনি সেখানেই বসবাস করছেন। দেশের ব্যবসা থেকে উপার্জিত মুনাফা প্রতিনিয়ত দুবাইয়ে স্থানান্তর করছেন তিনি। এরই মধ্যে তিনি দুবাইয়ের আবাসন ও নির্মাণ খাতে বড় ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন।
সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) এখন যে কোনোভাবে হোক বিদেশ থেকে পুঁজির প্রবাহ বাড়াতে উদ্যোগী হয়ে উঠেছে। এজন্য বিদেশি ধনীদের স্থানান্তরিত হতে নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধাও দেওয়া হচ্ছে। এর সঙ্গে বাংলাদেশও অর্থপাচার প্রতিরোধে কার্যকর ও শক্তিশালী কোনো ব্যবস্থা গড়তে না পারায় এখান থেকে দুবাইয়ে অর্থপাচার বেড়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দুবাইয়ে আবাসনের দামও বাড়ছে লাফিয়ে। গত বছর ডিসেম্বর পর্যন্ত গড়ে সম্পদের দাম বেড়েছে সাড়ে ৯ শতাংশ। এর মধ্যে ভিলার দাম বেড়েছে ১২ দশমিক ৮ শতাংশ। আবাসনের দাম বেড়েছে ৯ শতাংশ।
দুবাই শহরে আবাসন ব্যবসায়ীদের ব্যাঙ্কে শত শত কোটি ডলার ঋণ রয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অবৈধ অর্থ দুবাইয়ে ঢুকছে বলে সন্দেহ। আর সে কারণেই সংযুক্ত আরব আমিরশাহী আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ধূসর তালিকায় রয়েছে।
বিভিন্ন দেশ থেকে বেআইনি অর্থ নিয়ে গিয়ে দুবাইয়ে সম্পত্তি কেনা হচ্ছে কি না, এ নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। যাঁরা বাড়ি কেনেন, তাঁদের নাম প্রকাশ করে না দুবাইয়ের ভূমি বিভাগ। ফলে এতে সন্দেহ আরও বেড়েছে।