আমদানিকৃত ও দেশের এক অঞ্চলের পশু থেকে অন্য অঞ্চলের পশুর মধ্যে রোগ-জীবাণু ছড়ানো রোধে ২০১২ সালে ২৪টি কোয়ারেন্টিন স্টেশন নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। ২০১৭ সালের জুনের মধ্যে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ার কথা; কিন্তু নির্মিত কোয়ারেন্টিন সেন্টারগুলো এখনো পুরোপুরি প্রস্তুত হয়নি। প্রকল্প শেষ হওয়ার দুই বছর পার হয়ে গেলেও এই সেন্টার পুরোপুরি চালু হয়নি। সম্প্রতি পরিকল্পনা অধিদপ্তরের বাস্তবায়ন, পরীবিক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে।
৭৭ কোটি টাকা ব্যয়ে সফলতা নেই
জানা গেছে, মৎস ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতায় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রাণিরোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ (২য় সংশোধিত) শীর্ষক প্রকল্পটি ৭৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকা ব্যয়ে জুলাই ২০১২ থেকে জুন ২০১৭ পর্যন্ত বাস্তবায়ন করা হয়। এর মধ্যে ছিল ২৪টি কোয়ান্টিন সেন্টার নির্মানের প্রকল্পও; কিন্তু এখনো আক্রান্ত পশু থেকে অন্য পশুতে রোগ-জীবাণু না ছড়ানোর জন্য নির্মিত কোয়ারেন্টিন হাউস পুরোপুরি প্রস্তত হয়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১২-১৪ মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য ৫০ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ২৪টি পশু কোয়ারেন্টিন স্টেশন নির্মাণের কর্মসূচি নেওয়া হয়; কিন্তু তখন ভূমি অধিগ্রহণের জটিলতার কারণে ৫৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়সাপেক্ষে প্রথম সংশোধন করা হয় প্রকল্পটিতে। এ ছাড়া কোয়ারেন্টিন স্টেশনে রোগ নিরূপণের যন্ত্রপাতি, উপকরণসহ ল্যাব নির্মাণে প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধনী দেওয়া হয়। এতে প্রকল্পব্যয় ধরা হয় ৭৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। সর্বশেষ প্রকল্পের সমাপ্তিতে মোট ব্যয় হয় ৭৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা।
নিয়োগের অভাবে চালুই হয়নি ২২ স্টেশন
প্রকল্পের ২৪টি কোয়ারেন্টিন স্টেশনের জন্য বিভিন্ন রাজস্ব খাতে মোট ৩২৪টি পদের প্রস্তাব করা হলেও নিয়োগের অনুমতি দেওয়া হয়েছে মাত্র ১৫৫টি পদে। ফলে সম্পূর্ণ নিয়োগ না দেওয়ায় ২৪টি কোয়ারেন্টিন স্টেশনের ২২টিই এখনো চালু হয়নি। ঢাকাস্থ হযরত শাহাজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর স্টেশনসহ মাত্র ২টি কোয়ারেন্টিন স্টেশন চালু হলেও তাতে স্বল্প জনবল কাজ করছে। অথচ প্রকল্পে এক্সিট পরিকল্পনায় জনবল নিয়োগের মাধ্যমে সব কোয়ারেন্টিন স্টেশন চালুর শর্ত দেওয়া ছিল।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শেখ আজিজুর রহমান বলে, গরুর রোগ-জীবাণু সংক্রমণরোধে কোয়ারেন্টিন স্টেশন জরুরি। শিগগিরই জনবল নিয়োগসহ অন্যান্য ব্যবস্থা করে স্টেশনগুলো প্রস্তুত করা হবে।
নষ্ট হচ্ছে ল্যাব ও যন্ত্রপাতি
এদিকে বর্তমানে কোয়ারেন্টিন স্টেশন চালু না থাকায় প্রকল্পের অর্থে কেনা ল্যাব যন্ত্রপাতি, অফিস যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র, কেমিক্যাল ইত্যাদি বাক্সবন্দি থাকায় সেসব নষ্ট ও কার্যকারিতা হারাচ্ছে। এ ছাড়া স্টেশনগুলো বিভিন্ন জল ও স্থলবন্দর থেকে দূরে নির্মিত। ফলে সীমান্ত এলাকা থেকে পশু এনে স্টেশনে রাখার তাগিদ অনুভব করবে না কেউ, যা মানুষ ও পশু পাখির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এদিকে ডিজিজ রিপোর্ট সিস্টেম ডাটাবেজ গড়ে তোলার লক্ষ্যে এখনো কোনো সফটওয়্যার ক্রয় করা হয়নি। কোয়ারেন্টিন স্টেশনের আইসোলেশন শেডের নির্মাণকাজও ত্রুটিপূর্ণ। ড্রেনেজ ব্যবস্থাও ভালো নেই। এ ছাড়া গবাদিপশু রাখার স্থান, খাদ্যাগার, পানি ও মলমূত্র অপসারণে ড্রেনের নির্মাণকাজ ভালো হয়নি। অপরদিকে রোগাক্রান্ত প্রাণীর নমুনা পরীক্ষার জন্য ল্যাবরেটরি না থাকায় বস্তুত কোয়ারেন্টিন স্টেশনের কোনো কার্যকারিতাই নেই।