পটুয়াখালীতে অবস্থিত দেশের সর্ববৃহৎ পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ সোমবার (২১ মার্চ) বেলা ১১ টা ৫৫ মিনিটে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রে স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে উদ্বোধন করেন তিনি। এসময় দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়নেরও ঘোষণা দেবেন প্রধানমন্ত্রী।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত আছেন, প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বীর বিক্রম; বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মো. হাবিবুর রহমান ও বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুটি ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদনের সব নির্মাণকাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। এ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হলে দেশের বিদ্যুতের ঘাটতি কমবে, এমনটাই মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতুর সাথে আরেকটি স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের।
আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে এ ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে বাংলাদেশ বিশ্বের ১৩তম । তবে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ ছাড়া শুধু ভারতে এ ধরনের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে।
প্রকল্প সূত্র জানায়, এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুটি ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদনের সব নির্মাণকাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। এ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হলে দেশের বিদ্যুতের ঘাটতি কমবে, এমনটাই মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নে ৯৮২ দশমিক ৭৭ একর জমিতে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করেছে বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল)। এই প্রকল্পটির মোট নির্মান ব্যয় হয় ২ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের জন্য চীন সরকার বাংলাদেশকে ১ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন ডলার আর্থিক ঋণ দিয়েছে বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা। অবশিষ্ট অর্থ যোগান দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।
১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন এই বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে দুটি বিদ্যুৎ ইউনিট রয়েছে যার প্রতিটির বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৬৬০ মেগাওয়াট। এই দুটি ইউনিট গোপালগঞ্জের জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত যা পর্যায়ক্রমে ৩২০-৬৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে।
প্রকল্প সূত্র আরও জানায়, পদ্মা নদী দিয়ে বিদ্যুৎতের সঞ্চালন লাইন বসানোর পর খুব শিগগিরই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পুরোদমে তার কাজ চালিয়ে যেতে পারবে। পরে এই পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে। তবে প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশের দক্ষিণাঞ্চল বিশেষ করে কৃষি ও বসতি অধ্যুষিত খুলনা ও বরিশাল এলাকায় তৈরি হতে যাওয়া নতুন শিল্পাঞ্চলে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৮০ থেকে ৮৫ ভাগ বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে।
বিসিপিসিএল সূত্র জানায়, ২০১৪ সালে বাংলাদেশ নর্থওয়েস্ট পাওয়ার কোম্পানি ও চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরশনের (সিএমসি) মধ্যে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি হয়।
২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধানখালীতে কয়লাভিত্তিক এ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নির্মাণকাজ শুরুর পর ২০২০ সালের ১৫ মে প্রথম ইউনিটের ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করে জাতীয় গ্রিডে দিতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল)।
পরে ওই বছরের ৮ ডিসেম্বর আল্ট্রা সুপার প্রযুক্তি ব্যবহার করে দ্বিতীয় ইউনিটের ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে কেন্দ্রটি। কিন্তু গোপালগঞ্জ সাবস্টেশনের ধারণক্ষমতা কম থাকায় এবং গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকার আমিন বাজার পর্যন্ত সঞ্চালন লাইনের কাজ শেষ না হওয়ায় দ্বিতীয় ইউনিটের ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ এখন পর্যন্ত সরবারহ করতে পারছে না বিদ্যুৎকেন্দ্রটি।তবে চলতি বছরের ডিসেম্বর মাস থেকে পুরো ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে দিতে সক্ষম হবে পাওয়ার প্লান্টটি।প্রতিদিন এ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রয়োজন হবে ১৩ হাজার মেট্রিক টন কয়লা।