ফজলি আম রাজশাহী না চাঁপাইয়ের— জিআই নিয়ে শুনানি আজ

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

মে ২৪, ২০২২, ০৯:২০ এএম

ফজলি আম রাজশাহী না চাঁপাইয়ের— জিআই নিয়ে শুনানি আজ

ফজলি আমকে ভৌগলিক নির্দেশক বা জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেটর (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিতে আবেদন করে রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্র। গত বছরের ৬ অক্টোবর জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায় বাঘার ফজলি আম। এরপর থেকে ক্ষোভ জানিয়ে আসছে চাঁপাইনবাবগঞ্জবাসী। চাঁপাইয়ের ফজলি আমকে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতির জন্য আন্দোলনও করে যাচ্ছে তারা। ফজলি আমকে বাঘার জিআই পণ্যের স্বীকৃতি দিতে তারা নারাজ।

মঙ্গলবার শুনানির পর বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে চায় সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর।

বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেড মার্কস অধিদপ্তরের রেজিস্ট্রার বিষয়টি নিয়ে শুনানি করবেন। তাতে রাজশাহীর পক্ষে অংশ নেবেন রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আব্দুল আলীম। চাঁপাইনবাবগঞ্জের পক্ষে অংশ নেবেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের ম্যাংগো প্রডিউসার কো-অপারেটিভ সোসাইটির পরিচালক  ইসমাইল খান শামীম।

রাজশাহীর ফল গবেষণা কেন্দ্রের আবেদনের পর ২০২১ সালে ফজলি আমকে রাজশাহীর নিজস্ব পণ্য হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে জার্নাল প্রকাশ করেছিল পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর।

কিন্তু চাঁপাইনবাবগঞ্জ সেই স্বীকৃতির বিরুদ্ধে আপত্তি জানিয়ে আপিল করে।

সেই আপিলের ওপরেই আজকের শুনানি।

এই শুনানিতেই ফজলি আমের ভৌগলিক নির্দেশক বা জিআই স্বত্ত্বের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রাজশাহীর স্বীকৃতির আবেদন

উত্তরাঞ্চলীয় রাজশাহীর বাঘা উপজেলার 'ফজলি আম'কে রাজশাহীর নিজস্ব পণ্য হিসাবে স্বীকৃতির জন্য ২০১৭ সালে আবেদন করেছিল রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্র।

সেই আবেদনের পর যাচাই-বাছাই শেষে ২০২১ সালের ছয়ই অক্টোবর বাঘার ফজলি আমকে রাজশাহীর নিজস্ব আম হিসাবে জিওগ্রাফিক্যাল আইডেন্টিফিকেশন (জি-আই) বা ভৌগলিক নির্দেশক পণ্যের স্বীকৃতি দিয়ে জার্নাল প্রকাশ করা হয়।

প্রতিষ্ঠানটির প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো: আলীম উদ্দিন বলছেন, “বাংলাদেশের ক্ষীরসাপাত, ল্যাংড়া আর আশ্বিনা আমের জিআই স্বীকৃতির জন্য আবেদন করা হয়েছে। তখন আমরা ভেবে দেখলাম, মালদার ফজলি আম যেহেতু সেদেশে স্বীকৃতি পেয়েছে, তাহলে আমাদের রাজশাহীর বাঘা ফজলি আমের জিআই স্বীকৃতির জন্য আমরা আবেদন করতে পারি।”

আলীম উদ্দিন জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জে যে ফজলি আম হয়, সেটার সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মালদার ফজলি আমের মিল রয়েছে। কিন্তু রাজশাহীর বাঘায় যে ফজলি আম হয়, সেটা আকারে তুলনামূলক ছোট, স্বাদে আলাদা। অন্য ফজলি আমের সঙ্গে ওজনেও পার্থক্য রয়েছে। স্থানীয়ভাবেও এটির পুরনো ইতিহাস পাওয়া যায়। বিশেষ করে বাঘা শাহী মসজিদের টেরাকোটার কারুকাজেও ফজলি আমের ছবি রয়েছে।

এসব বিবেচনায় নিয়ে তারা বাঘার ফজলি আমের স্বীকৃতির জন্য আবেদন জানিয়েছিলেন।

এজন্য বাঘা ফজলি আমের ইতিহাস, দালিলিক প্রমাণপত্র ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফল জমা দেয়া হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের আপত্তি

জিআই পণ্যের স্বীকৃতির নিয়ম অনুযায়ী, জার্নালে প্রকাশের দুই মাসের মধ্যে কারও আপত্তি থাকলে জানাতে হবে। না হলে সেটির ভৌগলিক নির্দেশক সূচক কার্যকর হয়ে যাবে।

বাঘা ফজলি আমের জিআই স্বীকৃতির বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরে আপত্তি করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি অ্যাসোসিয়েশন।

প্রতিষ্ঠানটির সাধারণ সম্পাদক মুনজের আলম মানিক বলছেন, “সবচেয়ে বেশি ফজলি আম উৎপাদিত হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জে। একে আপনি ফজলি আমের জন্মভূমি বলতে পারেন। এই জেলায় ফজলি আম হচ্ছে শত শত বছর ধরে। কিন্তু সেখানে ফজলি আমের স্বীকৃতি অন্য একটি জেলা পাবে, তা তো হয় না। এজন্য আমরা চাঁপাইনবাবগঞ্জে ফজলি আমের স্বীকৃতি চেয়ে আবেদন করেছি।”

আমের জেলা হিসাবে পরিচিত চাঁপাইনবাবগঞ্জে গত এক বছরে ৮৮ হাজার মেট্রিকটন ফজলি আম উৎপাদিত হয়েছে বলে তিনি জানান।

Link copied!