ছোট আদিবা। বাবার কাঁধে চড়ে ঘুরতে এসেছে চিড়িয়াখানায়। মুগ্ধ হয়ে দেখছে চারপাশ। বানরের খাঁচার সামনে গিয়ে কথা বলার চেষ্টা চালাচ্ছে। যান্ত্রিকতার জীবনে ঈদের ছুটিতে পরিবার পরিজন নিয়ে ঘুরতে বেড়িয়েছে অনেকেই। ব্যতিক্রম ঘটেনি হুমায়ুন কবীরের সাথেও। চার বছরের শিশু কন্যা ও স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরতে এসছে চিড়িয়াখানায়। দ্য রিপোর্ট ডট লাইভের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, ঈদের লম্বা ছুটি পাওয়ায় ঈদ করতে পরিবার নিয়ে বাড়ি গিয়েছিলেন। ঢাকা ফিরে সাপ্তাহিক ছুটির দিন পাওয়ায় আবারো বিনোদনকেন্দ্র গুলোতে বউ বাচ্চা নিয়ে ঘুরতে বেড়িয়ে পড়েছেন। মেয়েকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন বইতে দেখা সব পশু পাখির সাথে।
রাজধানীর মালিবাগ থেকে ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে চিড়িয়াখানায় এসেছেন মোহাম্মদ রানা। বেসরকারি এই চাকরিজীবী বলেন, ঈদে সব চেয়ে বেশি ভালো লাগে রাস্তা ফাঁকা পেয়ে। যানজটময় এ শহরে সময়মত গন্তব্যে পৌঁছানো যেখানে একটা বড় চ্যালেঞ্জ সেখানে সকাল নয়টার দিকে বাসা থেকে বের হয়ে ১০টার আগেই চিড়িয়াখানায় পৌঁছাতে পেরে মহা খুশি। বলেন, টিকিটের জন্যে অনেক মানুষের লাইন থাকলেও দ্রুত টিকিট পেয়ে গেছেন।
রিক্তি নামে আরেকজন দর্শনার্থী বলেন, ‘পেশাগত চাপের কারণে পরিবারকে নিয়ে সেভাবে ঘোরার সুযোগ হয় না। ঈদের দিন চিড়িয়াখানায় আসার কথা থাকলেও আসা হয়নি তাই আজ এসেছি পরিবারের সবাইকে নিয়ে। অনেক ভিড়ের মাঝে ছোট ভাইকে হারিয়ে ফেলেন। পরে যদিও খুঁজে পেয়েছেন। তবে সাময়িক ভোগান্তি আর ভয়ের ছাপ লক্ষ্য করা যায় রিক্তির চোখে মুখে। হতাশার সুরে আরামবাগ থেকে আগত বাবুল মিয়া বলেন, চিড়িয়াখানায় বেশ কয়েকবার এসেছি। কিন্তু প্রতিবার এসে একই জিনিস দেখি। তেমন কোনো পরিবর্তন নেই। তাই একবার এলে আর আসতে ইচ্ছা করে না। তারপরও সময় কাটাতে বাচ্চাদের নিয়ে এসেছি। করোনার বিধিনিষেধ না থাকায় দুই বছর পর এবার ঈদ উৎসব যেন প্রাণ ফিরে পায়।
ঈদুল ফিতরের ছুটিতে রাজধানীসহ সারা দেশের বিনোদন কেন্দ্রগুলো বেশ জমে উঠে। ঈদের ছুটির পর গতকাল শুক্রবারের সাপ্তাহিক ছুটিতেও রাজধানীর প্রতিটি বিনোদন কেন্দ্রে ছিল উপচেপড়া ভিড়। ঈদের দিন থেকেই মিরপুরের জাতীয় চিড়িয়াখানা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। সপ্তাহিক ছুটির দিনে চিড়িয়াখানায় এমনিতেই ভিড় হয়। তারউপর ঈদের আমেজ থাকায় গতকাল ভিড় ছিল অনেক বেশি। হাজার হাজার দর্শনার্থী ঘন্টার পর ঘন্টা চিড়িয়াখানার গেটে দাঁড়িয়ে থেকেও ভিতরে ঢুকতে পারেনি। সকাল থেকেই পরিবার-পরিজন, বন্ধুবান্ধব নিয়ে ছুটে আসে বিনোদনপ্রেমীরা। অতিরিক্ত মানুষের চাপে চিড়িয়াখানার প্রধান সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। ফুটপাথ দিয়েও হাঁটাচলার সুযোগ ছিল না। বাঘ, সিংহ, হরিণ কিংবা ময়ূর দেখতে সেখানে ভিড় জমিয়েছেন সব বয়সী মানুষ।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দেখা যায়, টিকিটের জন্য দীর্ঘসময় লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন দর্শনার্থীরা। এরপর সেই টিকিট দেখিয়ে প্রবেশ করছেন চিড়িয়াখানায়। সবার মুখেই ছিল আনন্দের ছাপ। বিশেষ করে শিশুদের উচ্ছ্বাসটা ছিল সবচেয়ে বেশি। ভেতরে প্রবেশের পর এক খাঁচা থেকে আরেক খাঁচায় হেঁটে দর্শনার্থীরা বিভিন্ন পশু দেখছেন। বড়রা তাদের শিশু সন্তানের বিভিন্ন পশুপাখির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন। সিংহের খাঁচার সামনে ভিড় ছিল বেশি। পশুর রাজাকে দেখে শিশুদের মনে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। এদিকে বাঘের খাঁচার সামনেও ছিল শিশুদের আনাগোনা। কিছু সময় বসে ও কিছু সময় খাঁচার চারপাশে হাঁটছে বাঘ। তবে বানরের খাঁচার সামনে এসে অনেকটা পয়সা উসুল হয় দর্শনার্থীদের। শিশু থেকে শুরু করে সবাই বানরের ভেংচি কাটা প্রাণভরে উপভোগ করেন। এছাড়া ভাল্লুক, জিরাফ, হাতি, হরিণ, ময়ূরসহ চিড়িয়াখানার সবগুলো খাঁচার সামনেই ছিল দর্শনার্থীদের জটলা। এদিকে চিড়িয়াখানা সূত্রে জানা গেছে, ঈদ উপলক্ষে চিড়িয়াখানার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ৬৪ জন কর্মচারী-কর্মকর্তারা সাতটি ভাগে ভাগ হয়ে কাজ করছেন। এছাড়াও দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার জন্য কাজ করছে লোকাল পুলিশ, টুরিস্ট পুলিশ ও র্যাব। এছাড়াও নিজস্ব আনসার বাহিনীও কাজ করছে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে।