আগস্ট ২৩, ২০২২, ০৩:১৮ পিএম
দেশের কয়েকটি সিটির মেয়রদের মন্ত্রী-উপমন্ত্রী পদমর্যাদা দেওয়া হয়েছিল সেই ২০১৬ সালের পরই। সেই সময় এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপনও জারি করা হয়। তাঁদেরকে নতুন করে আবার পদমর্যাদা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করায় অনেকে অবাক হয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়রকে মন্ত্রী ও নারায়ণগঞ্জের মেয়রকে প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা দিয়ে ২০১৬ সালে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। ওই বছর ২১ জুন রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে ঢাকা দুই সিটির তৎকালীন মেয়র মন্ত্রীর পদমর্যাদায় ছিলেন। পরে নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম মেয়রকে প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা দিয়ে গেজেট জারি করা হয়। এবারও একই বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করায় অনেকে বলছেন, এবারের প্রজ্ঞাপনে নতুন কী আছে? আর নতুন কিছু না থাকলে এ ঘোষণার দরকারইবা কি? কেউ বলছেন, দেশে আর্থিক মন্দা চলছে। সেটি নিয়ে সরকারের ব্যস্ত থাকা দরকার। মেয়রদের পদমর্যাদা বণ্টনের বিলাসিতা নিয়ে নয়।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ জনপ্রশাসনের সব বিষয় নিয়ে কাজ করে। প্রশাসন কর্মকর্তাদের বদলি, পদোন্নতির বিষয়গুলো দেখভাল করে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম দায়িত্বে থাকাবস্থায় ঢাকা দুই সিটির সাবেক মেয়র মন্ত্রীর পদমর্যাদায় ছিলেন। এছাড়াও নারায়ণগঞ্জ সিটির মেয়র উপমন্ত্রীর পদমর্যাদা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এবার দুই মেয়রের পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জ সিটির মেয়রকে উপমন্ত্রী থেকে প্রতিমন্ত্রী এবং চট্টগ্রাম সিটি মেয়রকে নতুন করে প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা দেওয়া হয়েছে।
মোহাম্মদ শফিউল আলম মন্ত্রিপরিষদ সচিব থাকাকালীন বলেছিলেন, অন্য নগরীগুলোর মেয়রদের কোনো পদমর্যাদা দেওয়া হয়নি। ঢাকার দুই মেয়রকে মন্ত্রী এবং নারায়ণগঞ্জের মেয়রকে উপমন্ত্রীর পদমর্যাদা দেওয়া হয়েছে। সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে তৎকালীন সময়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক এবং দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন মন্ত্রী এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী উপমন্ত্রীর পদমর্যাদা পেয়েছিলেন। এতে তারা স্ব স্ব পদে বেতন-ভাতা ও আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা পান।
বহুল প্রচলিত সরকারি কর্মচারী আইন বইয়ের লেখক সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. ফিরোজ মিয়া এ প্রসঙ্গে দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়রের মন্ত্রী এবং নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম সিটির মেয়রের প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা স্ব স্ব নামের ওপর দেওয়া। এসব সিটি করপোরেশনে আগামীতে অন্য কেউ মেয়রের দায়িত্বে এলে মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা না-ও পেতে পারেন।
তবে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার মনে করেন, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামের মেয়ররা মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা পেলেন। সেখানে রাজশাহী ও খুলনা সিটি করপোরেশন মেয়রকে কোনো পদমর্যাদা দেওয়া হয়নি। অথচ এই দুই সিটির দায়িত্বে থাকা মেয়ররা অন্য সব মেয়রের চেয়ে সিনিয়র।
সোমবার অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র মন্ত্রী এবং অন্য সিটি করপোরেশনের মেয়ররা প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা পেলেও ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর মেয়রদের কোনো পদমর্যাদা দেওয়া হয়নি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেও বেশির ভাগ সিটি করপোরেশনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা মেয়র নির্বাচিত হলে তাঁদের পদমর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি থমকে যায়।
তবে ২০১৫ সালে ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন এবং ঢাকা উত্তর সিটির প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক নির্বাচিত হওয়ার পর ২০১৬ সালের ২১ জুন মন্ত্রীর পদমর্যাদা দিয়ে এক প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এরমধ্যে আনিসুল হক মারা যাওয়ার পর ২০১৯ সালে উপনির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ৯ মাস ডিএনসিসির মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন আতিকুল ইসলাম। তখন তিনিও মন্ত্রীর পদমর্যাদা ভোগ করেন।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এক উপদেষ্টা নাম না প্রকাশ করে বলেন, বৈশ্বিক অর্থনীতি মন্দার চাপে দেশ। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় মানুষের জীবন-যাত্রার ব্যয়ও বেড়েছে। দেশের মানুষ কষ্টে আছেন। এ সময়ে সরকারের উচিত অর্থনৈতিক মন্দা দূর করার দিকে বেশি মনোযোগী হওয়া। এই মুহূর্তে পদমর্যাদা বাড়িয়ে সরকারের ব্যয় বাড়ানো মোটেও উচিত নয়। এটা বিলাসিতা।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, দেশের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হল জাতীয় নির্বাচন ও অর্থনৈতিক মন্দা দূরা করা। সেখানে সরকার ব্যস্ত সিটির মেয়রদের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা নিয়ে। মেয়রদের মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী করা নিয়ে এর আগেও আলোচনা হয়েছে। সেখানে আবার আলোচনার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না।