যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী মন্দার প্রভাব দেশেও পড়তে পারে: প্রধানমন্ত্রী

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

মে ৮, ২০২২, ০৪:১৬ এএম

যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী মন্দার প্রভাব দেশেও পড়তে পারে: প্রধানমন্ত্রী

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী যে মন্দা দেখা দিচ্ছে, তা ব্যাপকভাবে বাড়তে পারে এবং তার প্রভাব আমাদের দেশের ওপর আসতে পারে বলে জনগণকে সতর্ক থাকার আহবান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যুদ্ধের কারণে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা তৈরি হলেও সরকার ব্যবস্থা নেওয়ায় দেশে পণ্যের দাম সেভাবে বাড়েনি বলেও তিনি জানান।

আরও পড়তে পারেন: বিএনপির নেতৃত্ব কোথায়? দু’জনই সাজাপ্রাপ্ত

শনিবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় সূচনা বক্তব্যে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।

জিনিসপত্রের দাম সারা বিশ্বে বেড়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বিভিন্ন দেশের হিসাব নিলে দেখা যাবে, কোথাও ১০ শতাংশ মূল্যস্ফীতি। ইউরোপের কোনো কোনো দেশে ১৭ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি রয়েছে। ভোজ্যতেল পাওয়া যাচ্ছে না। লন্ডনে রেশনিং করে দেওয়া হয়েছে। কেউ এক লিটারের বেশি তেল কিনতে পারে না। প্রতিটি জিনিস সুনির্দিষ্ট পরিমাণ নিতে হবে। এর বেশি নিতে পারবে না। সারা বিশ্বে এই অবস্থা।”

আরও পড়তে পারেন: আওয়ামী লীগ কখনও পিছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসেনি

রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব সম্পর্কে সরকারপ্রধান বলেন, “আমাদের শিপিংয়ের ভাড়া এত বেড়ে গেছে যে যেসব দেশ থেকে আমরা পণ্য আমদানি করি, সেই আমদানির ওপর প্রভাব পড়ছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের পর তার প্রভাব ইউরোপ-আমেরিকার ওপরও পড়েছে।”

এ সময় তিনি জনগণকে সতর্ক করে বলেন, “বিশ্বব্যাপী যে মন্দা দেখা দিচ্ছে, তা ব্যাপকভাবে বাড়তে পারে। তার প্রভাব আমাদের ওপর আসতে পারে। কাজেই আমাদের এ বিষয়ে সতর্ক হতে হবে।”

দেশে ধানের তুষ দিয়ে তেল উৎপাদন হচ্ছে বলেও উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “উদ্যোগ নিলে ভোজ্যতেল দেশে উৎপাদন করা সম্ভব।” তিনি এ বিষয়ে দৃষ্টি দেওয়ার আহ্বান জানান।

আরও পড়তে পারেন: তারা আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করতে চায়

মানুষ গ্রামের বাড়িতে গিয়ে উৎসব করায় অর্থ সরবরাহ বাড়ে বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ঈদে সবাই গ্রামের বাড়ি যায়। বিশ্বে অনেক দেশে এটা কমে গেছে। গ্রামের যাতায়াতব্যবস্থা ভালো হচ্ছে। তৃণমূল থেকে উন্নয়ন হচ্ছে। গ্রামের অর্থনীতি শক্তিশালী হচ্ছে।

দীর্ঘ প্রায় ছয় মাস পরে অনুষ্ঠিত দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে সরকারপ্রধান বলেন, “আমরা যখন গ্রামীণ অর্থনীতি, তৃণমূলের অর্থনীতি শক্তিশালী করছি, তখন একটি পক্ষ আমাদের উৎখাত করতে চায়। আওয়ামী লীগের অপরাধটা কোথায়?” আমরা কোথায় ব্যর্থ হয়েছি? জিয়া, এরশাদ, খালেদা, তারেক- সবাই মানুষ হত্যা করেছে। মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে মেরেছে।”

শেখ হাসিনা ওই পক্ষের সমালোচনা করে বলেন, “অনেকে অতিজ্ঞানী হলেও তারা কম বোঝে। তাকায় থাকে কখন তাদের ক্ষমতায় যেতে পারবে, বসে থাকে কখন সিগন্যাল আসবে, বিদেশে দেশের বিরুদ্ধে বদনাম করে,বিদেশ থেকে যেন ক্ষমতায় বসাবে।”

শেখ হাসিনা বলেন, “নানা ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও দেশ এগিয়েছে। এবার পবিত্র ঈদুল ফিতরে মানুষ স্বস্তিতে ও নির্বিঘ্নে গ্রামে যেতে পেরেছে।দেশের অনেক উন্নয়ন হয়েছে।জীবনযাত্রার মান বেড়েছে। আমরা চাই গণতান্ক্রিক ধারা অব্যাহত থাকুক।”

ঈদের আগে গৃহহীনদের ঘর উপহার দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি আরও বলেন, “ঈদের আগে ৩৩ হাজার ঘর দিয়েছি। জুলাই মাসে আরও ৩৪ হাজার দিব। বাকি থাকবে ৪৫ হাজার, তাও দিয়ে দিলে দেশে ভূমিহীন কেউ থাকবে না।”

আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের আজকের সভায় দলের জাতীয় সম্মেলনসহ একাধিক সিদ্ধান্ত হতে পারে। সাড়ে পাঁচ মাস পর এ সভার মধ্য দিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা সবাই দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পেয়েছেন।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ১৯ নভেম্বর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে কটূক্তির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় গাজীপুর মহানগর শাখা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সিটি করপোরেশনের মেয়র (সাময়িক বহিষ্কার) জাহাঙ্গীর আলমকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। 

চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি গণভবনে সভাপতিমণ্ডলীর বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য সার্চ কমিটির কাছে নাম প্রস্তাবের বিষয়ে আলোচনা হয়। এ ছাড়া সাংগঠনিক টিমগুলোকে জেলা সফর ও মেয়াদোত্তীর্ণ সাংগঠনিক কমিটিগুলোর সম্মেলন করার নির্দেশনা দেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা।

Link copied!