জানুয়ারি ১৩, ২০২৩, ০৮:৫২ পিএম
দেশের বেকার যুবকদের সরকারের সামাজিক নিরাপত্তার আওয়াতায় আনার উদ্যেগ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও গণনীতি বিশ্লেষক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য । তিনি বলেন, সর্বশেষ জনশুমারির তথ্যনুযায়ী দেশে এখন পাঁচ কোটি যুবক রয়েছে। এর মধ্যে গড়ে তিন জনের মধ্যে একজন বেকার। বাংলাদেশে কর্মের নিশ্চয়তা দিয়ে একটি আইন প্রনয়ন করা এখন সময়ের দাবি।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর শাহাবাগে বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের দ্বাদশ জাতীয় সম্মেলনের উদ্ভোধনি অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কর্মের নিশ্চয়তা দিয়ে একটি আইন প্রনয়ন করা দরকার। যেমন করে খাদ্য নিরাপত্তার আইন দরকার, বৈষম্যবিরোধী আইন প্রয়োজন তেমনি যুব সমাজের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে একটি আইনের দাবি উঠানো উচিৎ। যুব সমাজের যারা কর্মহীন আছে স্বনিবন্ধনের মাধমে যদি হাজার টাকাও দেয়া যায় তাহলে শূণ্য দশমি দুই শতাংশর জিডিপির চেয়ে বেশি লাগে না। অর্থাৎ এটা আর্থিক সংস্থান বাংলাদেশে নেই বলে আমি মনে করি না। যদি লুটের টাকা ফিরিয়ে আনা হয় তাহলে আর কিছুই লাগে না।
তিনি বলেন, দেশে যুব সমাজের ভেতরে নানা ধরনের প্রবণতা তৈরি হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে অনেকেই হতাশ হয়ে আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছেন। অনেকে আবার মাদকাশক্তসহ নানা ধরনের উগ্রবাদী চিন্তার সাথে জড়িয়ে পরছে। এটা আমাদের জন্য বড় ধরনের এ্যালার্মিং বিষয়। এসব থেকে যুব সমাজকে রক্ষা করতে হলে উৎপাদনশীল কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে।
তিনি বলেন, অনেক দেশে যুবক ক্রেডিট কার্ড দেয়া হয়। আমাদের দেশেও সেটা সম্ভব । সেখানে সারা বছরের জন্য অথবা দুই বছরের শিক্ষার এক লক্ষ বা দুই লক্ষ টাকার ক্রেডিট কার্ড দেয়া যায়, সেটা ব্যাংকের মাধ্যমে সরকার নিশ্চয়তা করবে । এবং সেই ক্রেডিট কার্ড দিয়ে শিক্ষার ব্যায়ভার পূরণ করবে সেটার গ্যারান্টি সরকারের পক্ষ থেকে দিতে হবে। যখন সে চাকরি করবেন বা আয় করবেন সেখান থেকে তা পূরণ করবে।
ভোটাধিকারের বিষয়ে তিনি বলেন, এই মুহুর্তে বাংলাদেশে একবারও ভোট দেয়নি এমন যুবকে সংখ্যা তিন থেকে সাড়ে তিন কোটি। তারা ২০১৪ সালে দিতে পারেনি, ১৮ সালে দিতে পারেনি। তারা আগামীতে ভোট দিতে পারবেকিনা সেটা একটা বড় বিষয়। এই যুবুকদের নিজেদের ভোটার হিসেবে নিবন্ধন করা এখন একটি জাতীয় কর্তব্য হিসেবে দেখা উচিৎ । যুবকরা যেন ভোট দিতে পারে সে জন্য আন্দোলন দাঁড় করাতে হবে।
তিনি বলেন, যুব ভোটারদের একত্রিত করা , তাদের সংগঠিত করা এবং তাদের আগামীদিনের ভোটের বাক্সে ভোটাটা যাতে পরে সেজন্য তাদের নিবন্ধিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি ও প্রখ্যাত শ্রমিক নেতা সহিদুল্লাহ চৌধুরী বলেন, সমাজে চরম শ্রেণী বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে। বৈষম্য এতই বেড়েছে যে মালিক বিলিয়ন ডলারের ক্লাবের সদস্য তার শ্রমিক দুবেলা ভাত খেতে পারে না। তাকে বাঁচার জন্য ১২ ঘন্টা কাজ করতে হয়। এখান থেকেই দেশের শ্রেণী বৈষম্য আরও স্পষ্ট বুঝা যায়। তিনি বলেন,বর্তমান সরাকারের নজর সাধারণ মানুষের উপর নেই। তাদের চোখ এখন বড় বড় প্রকল্প আর কি করে বিলিয়ন ম্যান তৈরি করবে সেই দিকে।
তিনি বলেন , দেশে অর্থনীতিতে একটা একচেটিয়া রূপ নিচ্ছে। একচেটিয়ার পরিণতি হচ্ছে, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, ক্ষুদ্র শিল্প সব ধ্বংস হচ্ছে। অল্প সংখ্যাক লোকের হাতে সব কিছু চলে গিয়েছে। সাফল্যর সাথে বর্তমান সরকার এটি তৈরি করতে পেরেছে। এটাই হচ্ছে আওয়ামীলীগের মৌলিক নীতি।
এই শ্রমিক নেতা বলেন, ৭১ সালের আগে এই দেশে রাজনৈতিক শূণ্যতা তৈরি হয়েছিল । সেসময় আওয়ামী লীগ, ন্যাপ ও কমিউনিস্ট নেতারা জেলে ছিল। রাজনৈতিক নেতৃত্ব বাইরে ছিলনা। কিন্তু তার ভেতর দিয়েও সে সময় গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল। দেশের সাধারণ মানুষ, কৃষক , শ্রমিক পাকিস্থানী শাসনে অতিষ্ট হয়ে গণঅভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছিল। বর্তমানে যে রাজনৈতিক শূণ্যতা চলছে সেখান থেকেও মুক্ত হওয়া সম্ভব। দেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের যে ছোট ছোট শক্তি রয়েছে তাদের যদি ঐক্যবদ্ধ করে আওয়ামী লীগ-বিএনপির বাইরে একটি প্লাটফর্মে আনা যায় তবেই এই শূণ্যতা দূর হবে।
যুব ইউনিয়নের সভাপতি হাফিজ আদনান রিয়াদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক খান আসাদুজ্জামান মাসুমের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান ড. কাবেরি গায়েন, যুব ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি বিএম শহীদুল হক, প্রেসিডিয়াম সদস্য ডা. সাজেদুল হক রুবেল, জাহাঙ্গীর আলম নান্নু প্রমুখ।