ওমান প্রবাসী মো. রাসেল মিয়া। এবারের ঈদের ছুটিটে দেশে ঘুরতে আসেন। ঈদের দিন দুপুরে মোটরসাইকেল নিয়ে বের হয়েছিলন নিজ এলাকা থেকে আরেক এলাকায় যাওয়ার জন্য। তবে আর ঘরে ফেরা হয়ে নাই তার। অন্য একটি মোটরসাইকেলের সাথে ধাক্কা খেয়ে তার বর্তমান ঠিকানা এখন রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে, যেটি পঙ্গু হাসপাতাল নামে বেশি পরিচিত।
এখন সেখানে তার দিন-রাত কাটে। দ্য রিপোর্ট ডট লাইভের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, ”ঈদের দিন দুপুরে আমি বাসা থেকে শিবপুর মনোহরদী যাওয়ার জন্য মোটরসাইকেল নিয়ে বের হই। পথে বিপরীত দিক দিয়ে অন্য একটি মোটরসাইকেল আমার পায়ে ধাক্কা দিলে আমি মোটরসাইকেল নিয়ে উল্টে পড়ে যাই।”
রাসেল মিয়ার মতো একই দূর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে ঈদ উদযাপন করছেন মুন্না নামে এক তরুণ। ঈদের তিন দিন আগে কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা হন বাসা থেকে। তবে তার কর্মস্থলে যাওয়া আর হয় নাই। দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে তিনি বলেন, ”আমি নিজ বাড়ি থেকে কর্মস্থলে যোগদানের জন্য যাচ্ছিলাম। মাঝপথে ট্রাকের সাথে মুখোমুখী সংঘর্ষ হয়। একটা ট্রাক ওভারটেক করে আরেকটা ট্রাকের আগে উঠতে চাচ্ছিলো। আমি সামনাসামনি চলে আসায় মোটরসাইকেলে ধাক্কা লাগে আর আমি রাস্তায় পড়ে যাই”।
রাজধানীর এই হাসপাতালে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় এ ধরণের অনেক চিত্র। প্রতিটি ওয়ার্ডে ৫-৭ জন ভর্তি আছেন মোটসাইকেল দূর্ঘটনায় আহত হয়ে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, মোট ভর্তির ৩০-৪০ শতাংশ রোগী মোটরসাইকেল দূর্ঘটনার শিকার হয়েছেন।
এভাবে এবারের ঈদে মোটরসাইকেলের দূর্ঘটনা যেনো এক ভয়াবহ আকার ধারন করেছে। এ বিষয়ে হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, “এখন গাড়ির স্প্রিড থাকে সবচেয়ে বেশি। এখন যেসব রোগী আছে তাদের স্প্রিড ১২০-১৩০ থাকে। এর ফলে আগে হাড় ভাঙ্গতো। এখন হাড় ১০-২০ টুকরো হয়। হাড়ের সাথে মাংসও ছিড়ে যাচ্ছে। এর ফলে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি থাকে। এসকল কারনে ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। আর এই পুরো ঝুঁকি বাড়ছে স্প্রিড বেড়ে যাওয়ার ফলে।”
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইন্সটিটিউটের তথ্য বলছে, ২০১৬ সালে মোটরসাইকেলের সংখ্যা ছিলো ১৭ লাখ, এখন সেখানে এর সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫ লাখে। ২০১৬তে মোটরসাইকেল দূর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৩৩৬জন। আর সেখানে ২০২১ সালে নিহত হয়েছেন ১ হাজার ১শ ৬৮ জন।
মোটরসাইকেলের সিসি নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে দূর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হবে না বলে জানান দূর্ঘটনা গবেষনা ইন্সটিটিউটের পরিচালক ড. মো. হাদিউজ্জামান। তিনি দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, “প্রায় ২৫ লাখ মোটরসাইকেল ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে গিয়েছে। দূরপাল্লার যাত্রা হিসেবে মোটরসাইকেলের ব্যবহার পৃথিবীর কোথাও নেই। একদিকে আমরা দিনে দিনে মোটরসাইকেলকে সহজলভ্য করছি অন্যদিকে মোটরসাইকেলের সকল যন্ত্রাংশের উপর শুল্ক কমিয়ে আনা হয়েছে। এই মোটর সাইকেল গুলো নিয়ন্ত্রণ করা খুবই জ্বরুরি এখন।
মোটর সাইকেলের সিসিও এখন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে উল্লেখ করে বুয়েটের এই অধ্যাপক আরও বলেন, “ আমাদের বানিজ্য মন্ত্রণালয়ে সিসির উপর যে সীমা ছিলো তা বাড়িয়ে ৫০০ সিসির অনুমোদন দিয়েছে। আমাদের গবেষণা বলছে প্রতি ১০০ সিসি মোটরসাইকেলের ধারন ক্ষমতা বাড়ানোর সাথে সাথে দুর্ঘটনার ঝুকি ২ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়ে যায়। তার মানে আমরা সিসি বাড়াচ্ছি অন্যদিকে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বাড়াচ্ছি।”