ভয়ংকর মাদক ক্রিস্টাল মেথ বা আইস বর্তমানে সবচেয়ে দামি মাদক হিসেবে পরিচিত। এর ব্যবহারও দিন দিন বেড়েই চলেছে। ইয়াবার তুলনায় এটি অনেক দামি এবং আসক্তির মাত্রা তুলনামূলকভাবে কয়েকগুণ বেশি। এলিট শ্রেণি তাই এখন ভয়ংকর এই মাদকের দিকে ঝুঁকছে। মিয়ানমার থেকে আসা এই মাদক দেশে আনতে মাদককারবারীরা বেশ কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছেন। কক্সবাজারের টেকনাফ দিয়েই তারা মাদক দেশে আনছেন বলে র্যাব সূত্রে জানা গেছে।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে ভয়ংকর মাদক ক্রিস্টাল মেথ বা আইস সিন্ডিকেটের মূলহোতা হোছেন ওরফে খোকন ও তার সহযোগী মোহাম্মদ রফিককে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। এসময় তাদের কাছ থেকে পাঁচ কেজি ৫০ গ্রাম আইস জব্দ করা হয়, যার বাজারমূল্য প্রায় সাড়ে ১২ কোটি টাকা।
শনিবার (১৬ অক্টোবর) দুপুরে কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে অভিযান চালিয়ে আইস সিন্ডিকেটের মূলহোতা খোকন ও তার এক সহযোগীকে গ্রেপ্তার এবং আইসসহ একটি বিদেশি পিস্তল, পাঁচ রাউন্ড গুলি, দুটি মোবাইল তিনটি দেশি-বিদেশি সিমকার্ড উদ্ধার করা হয়। এখন পর্যন্ত দেশে জব্দ করা এটিই আইসের সবচেয়ে বড় চালান বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
তিনি আরও জানান, গ্রেপ্তার হওয়া রফিকের বার্মিজ আচার, কাপড় ও চায়ের ব্যবসা ছিল। সে এই ব্যবসার আড়ালে এই ভয়ংকর মাদক আইস নিয়ে এসে সেগুলো রাজধানীর বিভিন্ন এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সাপ্লাই দিত।
এই চক্রের অন্যতম হোতা খোকনের নামে বিভিন্ন থানায় অস্ত্র ও মাদকসহ একাধিক মামলা রয়েছে। তার সহযোগী মোহাম্মদ রফিক চক্রের একজন সক্রিয় সদস্য এবং টেকনাফে অটোরিকশা চালকের ছদ্মবেশে মাদক পরিবহণ ও স্থানান্তর করত করেতো। এই সিন্ডিকেটে যে ২০ থেকে ২৫ জন রয়েছে, তাদেরকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে বলেও তিনি জানান।
মিয়ানমার থেকে যেভাবে দেশে আসছে আইস
সংবাদ সম্মেলনে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন বলেন, গ্রেপ্তার হওয়ারা পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার থেকে নাফ নদী হয়ে ভয়ংকর মাদক আইস নিয়ে আসে। তারা টেকনাফকেন্দ্রিক মাদক সিন্ডিকেটের সদস্য। এ চক্রটি গত কয়েক বছর ধরে অবৈধ মাদক ইয়াবার কারবার করে আসছে।
সিন্ডিকেটে ২০-২৫ জন যুক্ত রয়েছে। সিন্ডিকেটের সদস্যরা সাধারণত নৌপথ ব্যবহার করে মাদকের চালান দেশে নিয়ে এসে থাকে। পার্শ্ববর্তী দেশের বার্মিজ আচার, কাপড় ও চায়ের চাহিদা রয়েছে বাংলাদেশে। তারা আচার ও চায়ের আড়ালে এ ভয়ংকর মাদক আইস নিয়ে এসে সেগুলো রাজধানীর বিভিন্ন এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সাপ্লাই দিতো। দেশে জব্দকৃত আইসের সবচেয়ে বড় চালান এটি।
মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক বলেন, চক্রটি ইয়াবা কারবারের সঙ্গে জড়িত থেকে গত কয়েক মাস ধরে আইস নিয়ে আসছিল। ঢাকার উত্তরা, বনানী, গুলশান, ধানমন্ডি ও মোহাম্মদপুরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় তাদের সিন্ডিকেট রয়েছে।
র্যাবের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, টেকনাফের নাফ নদীতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তল্লাশি চৌকি থাকলেও গ্রেপ্তার এ আইস সিন্ডিকেটের সদস্যরা রাতের অন্ধকারে নৌকায় লাইটার সিগন্যালের মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী দেশের মাদক কারবারিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আইস নিয়ে আসে। তারা এর আগে ইয়াবা নিয়ে এলেও বেশি লাভের আশায় সম্প্রতি আইস নিয়ে আসা শুরু করে। টেকনাফ থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত সড়ক পথে নিয়ে আসে। এরপর তারা চট্টগ্রাম থেকে সড়ক পথে ঢাকায় নিয়ে আসে।