ডেঙ্গুর প্রকোপ যেনো দিনে দিনে বেড়েই যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৪ হাজার মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। নির্মানাধীন ভবনগুলোর মধ্যেই বেশি পাওয়া যাচ্ছে এডিস মশার লার্ভা। উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মতে প্রায় ৬৫% নির্মানাধীন ভবনেই চাষ করা হচ্ছে এডিস মশার লার্ভা।
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে গত দুই মাস যাবৎ উত্তর ও দক্ষিন সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে নির্মানাধীন ভবনসহ বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে অভিযান চালানো হচ্ছে। অভিযানে রিহ্যাব সহ অন্যান্য সেবা সংস্থা সিটি কর্পোরেশনকে কোনও রকম সহযোগিতা করছে না বলে অভিযোগ করেন উত্তর সিটির মেয়র। তবে সেই অভিযোগকে সাথে সাথেই অস্বীকার করেন রিহ্যাবের সভাপতি। সে সময় তিনি জানান, ’ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আমরা বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি, পাশাপাশি রিহ্যাবের সকল সদস্যদের কাছে আমরা বার্তা পৌঁছেছি, যেনো তিন দিনের মধ্যে জমাকৃত পানি ফেলে দেওয়া হয়’।
এডিস মশা, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধের লক্ষ্যে দুই সিটি কর্পোরোশনের অভিযানের ধারাবাহিকতায় সোমবার(৯ আগস্ট) মিরপুরের মাজার রোডের ৮/এ বিল্ডিং এ অভিযান করা হয়। এই অভিযানে বিপুল পরিমান লার্ভা পাওয়া যায়। জরিমানা করতে গিয়ে জানা যায় ভবনটি রিহ্যাবের সভাপতি আলমগির শামসুল আলামিন কাজলের রিয়েল স্টেটের ভবন। বিষয়টি জানার পর হতাশা ব্যক্ত করেন উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম।
সে সময় মেয়র আতিক বলেন, ’আমরা এই অভিযানে নির্মানাধীন ভবনগুলোতে এডিস মশার লার্ভা পাচ্ছি। এই বিষয়ে আমি বার বার রিহ্যাবের সভাপতির সাথে আলাপ করে যাচ্ছি, যাতে তারা দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে। কিন্তু আজ যখন তার ভবনেই লার্ভার চাষ দেখা যাচ্ছে, তখন আমার হতাশ হওয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না’।
অভিযানে ’শামসুল আলামিন রিয়েল স্টেট‘ প্রতিষ্ঠানকে ৫ লক্ষ টাকা জরিমানা ও ভবনের দায়িত্বরত প্রজেক্ট ইন্জিনিয়ার মো. গোলাম মোস্তফাকে ৬ মাসের জেল দেওয়া হয়।
পানি তিনদিন বেশি জমা থাকার কথা না। এতো দিন কেন পানি জমা রয়েছে জানতে চাইলে ভবনের দায়িত্বরত ইন্জিনিয়ার মো. গোলাম মোস্তফা দ্য রির্পোটকে বলেন, আমরা প্রতিদিনই পানি পরিস্কার করার চেষ্টা করি। কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। এর ফলে একটু ঝামেলা হচ্ছে। আর ভবনের যে দিক দিয়ে পানি আসে সে জায়গার ব্যবস্থা নিতে একটু সময় লেগেছে, তাই এই পানি জমাট বেধেছে।
নিজের ভবনেই পানি জমাট কেনো জানতে চাইলে রিহ্যাবের সভাপতি আলমগির শামসুল আলামিন কাজল দ্য রির্পোটকে বলেন, আমার পক্ষেতো প্রতিদিন সব ভবনে নজর রাখা সম্ভব নয়। আমি যখন জেনেছি সাথে সাথে ওই ইন্জিনিয়ারকে বরখাস্ত করা হয়েছে। পাশপাশি প্রতিষ্ঠানটি জরিমানা আদায় করেছে বলে আমাকে জানানো হয়েছে।
মেয়র আতিকের হতাশার বিষয়ে তিনি আরো বলেন, ’ওনার কাজকে আমরা সম্মান জানাই। কিছু কিছু জায়গায় কিছু সমস্যা হবে, তার জন্য হতাশ হওয়ার কিছু নেই। আমরা একসাথে কাজ করলেই সকল সমস্যার সমাধান হবে’।
উল্লেখ্য, এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে জুলাই মাস থেকে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিন সিটি কর্পোরেশনে অভিযান চলমান রয়েছে। এই অভিযানে এখন পর্যন্ত উত্তর সিটি করর্পোরেশনের ২২৯টি ভবনকে প্রায় ৩৭ লক্ষ টাকা ও দক্ষিন সিটি কর্পোরেশনের ২২২টি ভবনকে প্রায় ৩৬ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়।