শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও গাড়ি চলাচল বন্ধ রেখে জ্বালানি সাশ্রয়ের পরিকল্পনা

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুলাই ২৭, ২০২২, ০৭:৩৫ পিএম

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও গাড়ি চলাচল বন্ধ রেখে জ্বালানি সাশ্রয়ের পরিকল্পনা

জ্বালানি সাশ্রয়ে আরও কিছু পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সরকার। এর মধ্যে সপ্তাহে একদিন গাড়ি চলাচল বন্ধ করার পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সপ্তাহে ৩ দিন বন্ধ রাখার মতো পরিকল্পনাও রয়েছে। এছাড়া মার্কেটগুলো বন্ধ করার সময়সীমা আরও এগিয়ে আনার ঘোষণাও আসতে পারে।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র বলছে, অকটেন-পেট্রোলের দাম আরেক দফা বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা করছে মন্ত্রণালয়। এর মাধ্যমে জ্বালানি সাশ্রয়ের পাশাপাশি ভর্তুকি কমিয়ে আনতে চায় সরকার। দেশে ডিজেলের মোট ৯০ ভাগই ব্যবহার হয় গণপরিবহন খাতে। ফলে পরিবহন খাতে ব্যবহৃত জ্বালানি তেল কমিয়ে আনার জন্য বেশ কিছু কঠিন পদক্ষেপ গ্রহণ করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।

সূত্রটি আরও জানায়, অকটেন যেহেতু ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটরসাইকেলে ব্যবহৃত হয়, সেজন্য অকটেনে ভর্তুকি কমিয়ে আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যে বিক্রি করবে সরকার। যার ফলে অকটেনের দাম বৃদ্ধি পেতে পারে আসছে সপ্তাহ থেকেই। এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সপ্তাহে তিন দিন বন্ধ রাখার প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের আসা-যাওয়ায় ব্যক্তিগত গাড়ির সর্বোচ্চ ব্যবহারও নিশ্চিত করতে চায় সরকার।

এছাড়া, বিদেশের আদলে কার হলিডে অর্থাৎ সপ্তাহে একদিন গাড়ি বন্ধ রাখার প্রস্তাবনা রাখা হয়েছে। অনেক দেশেই একদিন জোড় নাম্বারের গাড়ি চলে তো আরেকদিন চলে বিজোড়। সেই রকম চিন্তা থেকেই কার হলিডের বিষয়টি আসছে। এতে প্রতিদিন অর্ধেক গাড়ি রাস্তায় চলা কমে যাবে। তবে পরিবহন সংকটে মানুষের চলাচলে কী ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে, সেদিকও ভাবা হচ্ছে।

এদিকে, সপ্তাহে একদিন ছুটির দিনে পেট্রোল পাম্প বন্ধের পরিকল্পনা নিয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। এক্ষেত্রে পেট্রোল পাম্প কী প্রক্রিয়ায় বন্ধ রাখা হবে তার কৌশল নিয়ে ভাবছে বিপিসি কর্তৃপক্ষ।

বিপিসি’র চেয়ারম্যান এবিএম আজাদ দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, “আমরা কিছু প্রস্তাব সরকারের কাছে দিয়েছি। সেগুলো নিয়ে ভাবা হচ্ছে। একদিন পেট্রল পাম্প বন্ধ রাখলে কী ধরনের ফলাফল আসতে পারে, সেটা নিয়েও বিপিসি কাজ করছে।”

‘যে কোনোভাবেই হোক জ্বালানি সাশ্রয় করতে হবে’ উল্লেখ করে বিপিসি চেয়ারম্যান আরও বলেন, “মানুষের কাছে আমার আহ্বান থাকবে নিজ থেকে যতটা পারেন সাশ্রয়ী হোন। এখন একটা সংকটকালীন সময়। সারা বিশ্বে সেটার প্রভাব পড়ছে। বাংলাদেশেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ফলে আমরা সবাই যদি সাশ্রয়ী হই তবে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী জ্বালানি তেলের ব্যবহার কমিয়ে আনতে পারব।”

মহাসড়কে যেসব পেট্রোল পাম্প আছে, সেগুলো চালু রেখে শহরকেন্দ্রিক পেট্রোল পাম্প সপ্তাহে একদিন বন্ধের বিষয়ে ভাবা হচ্ছে জানিয়ে বিপিসি’র এই শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, “সপ্তাহে একদিন পেট্রোল পাম্প বন্ধ রাখলে কী পরিমাণ জ্বালানি সাশ্রয় হবে তা প্রক্রিয়াটি চালু হলে বুঝা যাবে।”

দেশের মার্কেটগুলোকে চালু রাখার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়ার জন্য জ্বালানি বিভাগ থেকে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে সুপারিশ করা হয়েছে । বিশেষ করে যদি সরকারি অফিস-আদালত সকাল ৯টা থেকে ৩টা পর্যন্ত করা যায়, তবে মার্কেটগুলো যেন সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। এছাড়া সপ্তাহে এলাকাভেদে মার্কেট বন্ধে বাড়তি সুপারিশ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, “সারাদেশে যে ডিজেল ব্যবহার করা হয়, তার ১০ শতাংশ যায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে। বাকি ৯০ শতাংশ পরিবহন ও কৃষিকাজসহ অন্যান্য খাতে ব্যবহার করা হয়।”

প্রতিমন্ত্রী বলেন, “বিদ্যুতের ১০ শতাংশ এবং অন্যান্য খাত থেকে আরও ১০ শতাংশ মোট এই ২০ শতাংশ ডিজেল সাশ্রয় করতে পারলে যে পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা সাশ্রয় হবে সেটা অনেক বড় বিষয়।”

প্রসঙ্গত, সরকার আমদানিনির্ভর জ্বালানির কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে যাতে কোনো সংকট না হয়, সেই লক্ষ্যে আগাম সতর্কমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।

জ্বালানি সাশ্রয়সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাশ্রয়ী ব্যবহারে ইতোমধ্যে একগুচ্ছ কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে আমদানিনির্ভর ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো আপাতত বন্ধ রাখা এবং লিকুইড ন্যাচারাল গ্যাসের (এলএনজির) আমদানি স্পট মার্কেট থেকে না কেনা।

বিপিসিকে অন্তত ২০ ভাগ জ্বালানি তেলের আমদানি কমাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এলাকাভিত্তিক এক/দেড় ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন ঘাটতি মোকাবিলা করা; ভার্চুয়ালি অফিস করা; অফিসের কর্মঘণ্টা কমিয়ে আনা, এসি ব্যবহারে সংযমী হওয়াসহ নানা ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

Link copied!