এপ্রিল ১৮, ২০২৩, ০৯:২৩ পিএম
বহুপাক্ষিক উন্নয়ন ব্যাংকের (এমডিবি) মাধ্যমে একটি সমৃদ্ধ বিশ্ব গড়ে তোলার জন্য সম্মিলিত বৈশ্বিক প্রচেষ্টার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আসুন আমরা এমডিবি’র মাধ্যমে দরিদ্র জনগণকে সহায়তা করে, একটি সমৃদ্ধ এবং দারিদ্র ও ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব গড়ে তুলতে একত্রে কাজ করি।’
মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদরদপ্তরে অনুষ্ঠিত ‘উন্নয়ন সহযোগিতা: দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিস্থাপকতা এবং বহুপাক্ষিক উন্নয়ন ব্যাংকের ভূমিকা’ শীর্ষক ইসিওএসওসি (ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কাউন্সিল) প্যানেল আলোচনায় পূর্বে ধারণকৃত ভিডিও মূল বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি ২০৩০ এজেন্ডা সফলভাবে বাস্তবায়নের ব্যাপারে অর্থায়ন সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে ইসিওএসওসি’র ভূমিকার কথা স্বীকার করি।’
তিনি বলেন, বিশ্ব অর্থনীতি বর্তমানে বহুবিধ চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রথমত কোভিড-১৯ মহামারি এবং দ্বিতীয়ত রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে বিস্ময়কর প্রভাব পড়েছে। এই জটিল বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বিশ্ব সম্প্রদায়ের দুর্বল অংশের স্থিতিস্থাপকতা গড়ে তুলতে এবং বহুমাত্রিক সংকট মোকাবিলায় উন্নয়ন সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এমডিবি বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এমডিবি’র অর্থায়ন বৈশ্বিক বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে বহু-পাক্ষিক সংলাপকে যেমনি করে উৎসাহিত করবে, তেমনিভাবে এসডিজি অর্জনের আর্থিক সহায়তা নিশ্চিতকারী আধুনিক নীতিমালাকেও এগিয়ে নেবে।
তিনি বলেন, এটি ২০১৫ সালের আদ্দিস আবাবা অ্যাকশন এজেন্ডায় সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখিত ম্যান্ডেটের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।
প্রধানমন্ত্রী অভিমত ব্যক্ত করে বলেন যে, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং প্রযুক্তির মতো বৈশ্বিক জনবান্ধব পণ্য প্রচারের ক্ষেত্রে এমডিবি’কে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। টেকসই উন্নয়নে এগুলোর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বল্পোন্নত দেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোকে কারিগরি সহায়তা ও জ্ঞান প্রদানের ব্যবস্থা এবং তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও টেকসই উন্নয়নে সহায়তা করার ব্যাপারে এমডিবিগুলো এক অনন্য অবস্থানে রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘উন্নয়নশীল দেশগুলোতে স্থিতিস্থাপকতা গড়ে তোলার ব্যাপারে কাজ করার সময়, আমাদের অবশ্যই তাদের পূর্ণ সম্ভাবনাগুলো অন্বেষণের ক্ষেত্রে তাদের সক্ষমতা মানতে হবে। এসবের মধ্যে আর্থিক বৈষম্য, ডিজিটাল বিভাজন এবং উন্নয়ন বিভাজন অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। টেকসই ও ন্যায়সঙ্গত উন্নয়নের মাধ্যমে দীর্ঘ মেয়াদী স্থিতিস্থাপকতা গড়ে তোলার ব্যাপারে গুরুত্ব দিতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা লক্ষ্য করেছেন যে এমডিবি’র সুদের হার এবং পরিষেবা চার্জ বাড়ছে এবং এ ধরনের পদক্ষেপ উন্নয়নশীল দেশগুলোকে আরো কঠিন পরিস্থিতির মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
তিনি বলেন, এমন অবস্থায়, আমি এমডিবি’কে এমন একটি ঋণ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা নির্ধারণ করার আহ্বান জানাতে চাই, যা আর্থিকভাবে কার্যকর হতে হবে এবং ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়নেও অবদান রাখবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ২০১৫ সালে নিম্ন -মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে এবং অতঃপর স্বল্পোন্নত দেশ থেকেও উন্নয়নশীল দেশে উত্তরনের যোগ্যতা অর্জন করেছে।
তিনি বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে একটি সমৃদ্ধ, উন্নত এবং জ্ঞানভিত্তিক ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার চূড়ান্ত রূপকল্প নিয়ে ‘আমাদের লক্ষ্য ২০৩১ সালের মধ্যে একটি উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা লাভ করা’।
কিন্তু বর্তমান ভূরাজনৈতিক সংকট, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে আমাদের উন্নয়ন যাত্রা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের মতো দেশগুলোর সংকট কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের এগিয়ে আসা উচিত। আজ আমরা যে চ্যালেঞ্জগুলোর মুখোমুখী হচ্ছি, তা বহুমুখী এবং এসব মোকাবিলার জন্য একটি সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বকে ঝুঁকি জ্ঞানসম্মৃদ্ধ এমন একটি পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে যা বহুমাত্রিক ঝুঁকিকে বিবেচনায় আনে, লিঙ্গ সমতাকে এগিয়ে নেয়, সামাজিক সুরক্ষা জোরদার করে এবং এমডিবি’র মাধ্যমে রেয়াতি ঋণের প্রসার ঘটায়।
তিনি বলেন, একত্রে কাজ করার মাধ্যমে এবং এমডিবি’র সম্পদ ও দক্ষতা কাজে লাগিয়ে, আমরা আগামী প্রজন্মের জন্য আরও টেকসই এবং সমৃদ্ধ বিশ্ব গড়ে তোলার লক্ষ্যে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি লাভ করতে পারি।
সূত্র: বাসস