‘টুকটাক দুর্ঘটনা হয় প্রতিদিনই। তয় কয়েকদিন ধরে মানুষ মরছে। হকারের সংখ্যা বেশি হওয়ায় রিক্সা, ভ্যান ও লোকজনের জটলা থাকে। এ কারণে গাড়ির সামনে হঠাৎ লোক চলে আসে’। এভাবেই সমস্যার কথা জানাচ্ছিলেন গুলিস্তানের শ্রাবণ বাসচালক। গত কয়েকদিনে গুলিস্তানে ভিন্ন ভিন্ন দূর্ঘটনায় পাঁচজন নিহত হয়। সরেজমিনে গুলিস্তানে দেখা যায় যে অতিরিক্ত হকার ও রাস্তা দখল করে দোকান দেওয়ার ফলে যানবাহনের স্বাভাবিক চলাচল ব্যহত হচ্ছে।
হকার সংখ্যা কয়েক হাজার
বায়তুল মোকাররম মার্কেট থেকে গুলিস্তান মার্কেট। আর গুলিস্তান মার্কেট থেকে হর্কাস মাকেট। পুরো এলাকার রাস্তার দুই পাশে হকার দিয়ে ভরা। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় প্রায় হাজারখানিকেরও বেশি দোকান বসানো হয়েছে গুলিস্তান এলাকায়। রাস্তার দুইপাশ দখল করে চলছে হকারদের ব্যবসা।
দুইপাশের পাশাপাশি মোড়েও ২০-৩০টা ঝুড়ি বসে চলছে ব্যবসা। তারই মাঝখান দিয়ে চলছে রিস্কা, বাইক, সিনজি ও বাস। তার জন্য চলাচলে ভোগান্তিতে পরছে সাধারণ মানুষ। দুই-তিনটা বাস একসাথে গিয়ে রাস্তা আটকিয়ে ফেলে। তৈরি হয় দীর্ঘ যানযট। সাধারণ মানুষ জন কখনো দুই বাসের মাঝখান দিয়ে কখনোবা সাইড দিয়ে যাতায়াত করার চেষ্ঠা করে। কারণ পুরো রাস্তা আটকানো থাকে। যতটুকু ফাকা থাকে তাও দুই বাসের মাঝখানে, যেখানে ধাক্কা খাওয়ার সম্ভাবনা থাকে সবচেয়ে বেশি। এ সকল কারণে ওই এলাকায় দূর্ঘটনাও ঘটে সবচেয়ে বেশি।
অতিরিক্ত হকার: অভিযোগ বাস চালকদের
এই হকারদের কারণে বার বার সমস্যার মধ্যে পরে বাস চালক। বাস মোড় নেয়ার জায়গা না পাওয়ায় অনিচ্ছাকৃতভাবে ঘটে যায় বিভিন্ন দূর্ঘটনা। মাওয়া রোডে চলমান ইলিশ বাসের বাস ড্রাইভার হারুন বলেন, সমস্যার কথা আর কি বলবো। এরা চলে প্রশাসনের দাপটে। আমাদের কিছু বলার থাকে না। ওরা যে যেমনে পারে সেভাবে বসে। এর মধ্য দিয়েই আমাদের গাড়ি চালাতে হয়।
একই অভিযোগ করলেন আনন্দ বাসের বাস ড্রাইভার হিমেল। তিনি বলেন, দূর্ঘটনা কি আমরা নিজের ইচ্ছায় করি। ওরা যেমন খুশি তেমন ভাবে দোকান বসায় রাখে। আমাদেরও বাস ঘুরাইতে হয়। মানুষ-জনও এর মধ্য দিয়ে চলে। তখনি ঝামেলা গুলো হয়।
গুলিস্তান মোড়ের এই বিষয় কথা বলতে ৩৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আহমেদ ইমতিয়াজ মন্নাফীর সাথে একাধিকবার মুঠো ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তাকে পাওয়া যায়নি। তারপর তার সাথে কথা বলার জন্য তার কার্যালয় গেলেও তাকে পাওয়া যায় না।
তবে এই বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদ দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, ’আমরা প্রতিদিনই রুটিন ওয়ার্কের অংশ হিসেবে বিভিন্ন জায়গায় যেসব হকার অবৈধভাবে বসতেছে তাদের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান চালাচ্ছি। কিন্তু হকারদের বিকল্প ব্যবস্থা না থাকার কারণে তাদের উচ্ছেদ করার পরও তারা সেখানে চলে আসে। তবে আমরা তিনটি হকার মার্কেট তৈরিতে হাত দিয়েছি। যা এ বছরের মধ্যে সম্পূর্ণ হয়ে যাবে। ফলে তখন কিছুটা ভোগান্তি কমবে বলে আমরা আশা করছি’।
প্রতিদিন চাঁদা ১০ থেকে ১০০ টাকা
হকাররা নিশ্চিন্তে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের ব্যবসা। যেদিন দূর্ঘটনা ঘটে সেদিনই পুলিশের পক্ষ থেকে চলে উচ্ছেদ অভিযান। সকালে অভিযান চললেও সন্ধ্যার দিকে এসে তোলা হয় চাঁদা। চাঁদা দেওয়া হয়ে গেলেই হকাররা বসাতে পারে তাদের দোকান। শুধু অভিযানের দিন নয়, প্রতিদিন বিকেলেই চলে এই চাঁদার মেলা। প্রতিদিন ১০ টাকা করে চাঁদা দেওয়া লাগলেও অভিযানের দিন দিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা। এই টাকা শুধু একজন তুলে না ৪-৫ জন নিয়োগ আছে ওইখানে টাকা তুলার জন্য।
দীর্ঘদিন দিন ধরে ব্যবসা করে আসছেন শামসুল হক। ব্যবসা করতে কেউ বাঁধা দেয় না তখন তিনি বলেন, ’বাঁধা দেবো কেডা। প্রতিদিন গুইন্না গুইন্না টাহা দেই। পুলিশ আসলে আমরাও গুসাইয়া রাখি। টাহা নিতে আইলে টাহা দিয়া দেই’।
কে এখানে টাকা তোলে— জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক হকার বলে, ‘আমাদের এই লাইনে মানিক তোলে। ওর সাথে আরো অনেকেই তুলে। ওরা সব কাউন্সিলরের লোক’।
’শুধু কাউন্সিলরের পোলাপাইন তোলে, পুলিশ চাঁদা তোলে না’-এই প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ’আমাদের এখানে মানিক ছাড়া কেউ আসে না। উচ্ছেদ করলেও মানিক আসে উচ্ছেদ না করলেও মানিক আসে। মানিক ছাড়া কেউ আসে না’।