সারাদেশে সাম্প্রদায়িক হামলার জন্য সরকারই দায়ী। মঙ্গলবার (১৯ অক্টোবর) রাজধানীর পল্টনে মৈত্রী মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা এই দাবি করেন।
বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা মনে করেন, সরকারের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ মদদ ও পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা ছাড়া এ ধরনের হামলা-ভাঙচুর কয়েকদিন ধরে চলতে পারে না। এসব ঘটনায় জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও হতাহত ব্যক্তিদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানান তারা।
বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক বজলুর রশীদ ফিরোজ লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, দেশে গত কয়েকদিনে ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক সহিংসতার জন্য সরকারই দায়ী। এই সরকারের আর ক্ষমতায় থাকার কোনো নৈতিক অধিকার নেই। ব্যর্থতার দায় নিয়ে এখনই পদত্যাগ করা উচিত।’ এসময় তিনি এসব হামলা-সহিংসতায় জাড়িত সবাইকে চিহ্নিত করার দাবি জানান।
তিনি আরো বলেন, ‘সরকারের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ মদদ ও পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা ছাড়া এ ধরনের হামলা-ভাঙচুর কয়েক দিন ধরে চলতে পারে না। কারণ, সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা রয়েছে। তাদের কাজই হলো যেকোনো সন্ত্রাস ও সহিংসতা সৃষ্টিকারীদের পরিকল্পনার আগাম তথ্য সংগ্রহ করা। কিন্তু পূজাকে কেন্দ্র করে যে সহিংসতা সারা দেশে ঘটল, তার খবর সংগ্রহ করতে কি গোয়েন্দারা ব্যর্থ হয়েছেন? সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটতে দিয়ে সরকার এখন সরকার অসাম্প্রদায়িক সেজে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চাইছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
মন্দিরের হামলার দায় সরকারের উল্লেখ করে বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, এই ব্যর্থতার দায়ে অবিলম্বে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অপসারণ করতে হবে। হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত জেলা-উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত সিভিল প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের অবহেলা ও ব্যর্থতার অপরাধে তাদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানান তিনি।
বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম বলেন সাম্প্রদায়িক হামলা জাতির জন্য অশনিসংকেত। তিনি বলেন, ‘আমরা দেখছি, সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে শাসকশ্রেণি এবং দলগুলো অপরাজনীতি করছে। রামুতে সাম্প্রদায়িক হামলা হয়েছে, নাসিরনগরেও হামলা হয়েছে। এই উপমহাদেশের যে রাজনীতি, আমরা দেখছি, ভারতে হিন্দুত্ববাদী সরকার ক্ষমতায়, তারা হিন্দুরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এসব ঘটনায় লাভবান হচ্ছে হেফাজত, জামায়াতসহ সাম্প্রদায়িক শক্তি’।
লিখিত বক্তব্যে বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা আরও বলেন, এই সরকার বাংলাদেশের সব নাগরিকের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ। ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে সরকার একদিকে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটতে দিয়ে দেখাতে চায়, দেশে উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। তাই তাদের দমনের নামে, ভোটারবিহীন ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করতে চায়। অন্যদিকে ভারতেও বিজেপি সরকার বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক হামলাকে কাজে লাগিয়ে ওই দেশে হিন্দুত্ববাদ জাগিয়ে তুলে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চায়।
এসময় বাম নেতারার সংবিধানে ৩২ ধারা পুনঃস্থাপনের দাবি জানানা। এছাড়াও তারা দেশে ধর্মীয় রাজনৈতিক দল ও রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার নিষিদ্ধ করারও আহ্বান জানান।
বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা জানান, ২১ অক্টোবর দেশব্যাপী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস প্রতিরোধ দিবস কর্মসূচি পালন করা হবে। ২২ অক্টোবর বাম গণতান্ত্রিক জোটের প্রতিনিধিরা রংপুরের পীরগঞ্জে জেলেপল্লি পরিদর্শনে যাবেন
এর আগেও তারা দেশের বেশ কয়েকটি আক্রান্ত এলাকা পরিদর্শন করেন।