মে ১৮, ২০২৩, ০২:৩৩ পিএম
পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরই দেশ জুড়ে রাজনীতিক মহলে চলছে নানা জল্পনাকল্পনা। তবে সিটি নির্বাচনে দলীয়ভাবে মাঠের প্রধানবিরোধী দল বিএনপি অংশ না নেওয়ায় উত্তাপ কিছুটা কম। তারপরও স্বস্তি নেই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের অন্দরে। কারণ রাজশাহী, খুলনা ও সিলেট নিয়ে নির্ভার থাকলেও বরিশাল ও গাজীপুরের জয় নিয়ে চিন্তিত ক্ষমতাসীনরা। এখনো দলের মধ্যে অনৈক্য দূর করা যায়নি। সিটি ভোট নিয়ে গাজীপুর ও বরিশালে ক্ষমতাসীনদের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। কোন্দল মীমাংসা করে কীভাবে ওই দুই সিটিতে জয়ের ধারা অব্যাহত রাখা যায় তা নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা এখন নানা কৌশল নির্ধারণের ছক কষছেন।
গাজীপুর সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকার পালের হাওয়া ভাগ হয়ে যাচ্ছে দুই ভাগে। আওয়ামী লীগের ভোটে ভাগ বসাতে মরিয়া স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক সিটি মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা। এর আগে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে জাহাঙ্গীর বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে এবং দলের বিরুদ্ধে নানা বক্তৃতা দিয়ে নিজের মনোনয়ন হারিয়েছেন, হয়েছেন দল থেকে স্থায়ী বহিস্কারও। এখন তিনি মরিয়া হয়ে মায়ের পক্ষে প্রচারে। এরমধ্যে আওয়ামী লীগের জোট শরিক জাতীয় পার্টির প্রার্থীও জোরদার প্রচারে আছেন। ফলে অনেকটাই টালমাটাল অবস্থা নৌকার।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে মাঠের কর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে দলীয় কোন্দলে বিপর্যস্ত গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগ। এখানকার সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলমের মধ্যে দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের।
সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বরাবরই আলোচনায় থাকেন। নিজ দল আওয়ামী লীগ থেকে স্থায়ী বহিস্কার করা হলে আবারো আলোচনায় উঠে আসেন স্থানীয় এই নেতা। দলের শৃঙ্খলাবিরোধী কথাবার্তা বলা, বিবৃতি দেওয়াসহ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে জাহাঙ্গীর আলমকে গত ১৫ মে আওয়ামী লীগ থেকে স্থায়ী বহিস্কার করে দল। দলটির দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়ার স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
গাজীপুরের সিটি নির্বাচনে এখন যারা আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করছেন তারা এখন দুই ভাগে বিভক্ত। কেউ নৌকার প্রচারে আছেন। কেউ আছেন জাহাঙ্গীর আলমের মা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের টেবিলঘড়ির প্রচারে।
এই সিটির নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন পাওয়া গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান দিনরাত প্রচারে সময় কাটাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের একটি অংশকে তিনি পাশে পাচ্ছেন।
মনোনয়ন পাওয়ার দিনই আজমত উল্লাহ খান ট্রেনে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে টঙ্গীর হাজী সৈয়দ শাহ মাজার এবং মাজার প্রাঙ্গণে থাকা তাঁর পিতা-মাতা ও আত্মীয় স্বজনদের কবর জিয়ারত করেন। হায়দ্রাবাদে মরহুম আহসান উল্লাহ মাস্টারের কবরও এদিন জিয়ারত করেন তিনি।
আজমতের প্রচারের সময় স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীদের সাথে বিচ্ছিন্ন ঘটনাসহ প্রচারে বাধা এমনকি পরস্পরের সভা-সমাবেশ পণ্ড করে দেওয়ার মতো ঘটনার অভিযোগও করছে দুপক্ষ।
আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের যখন এই অবস্থা তখন জোট শরিক জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাবেক স্বাস্থ্য সচিব এমএম নিয়াজ উদ্দিন চালাচ্ছেন নিরব প্রচার-প্রচারণা।
গাজীপুর সিটিতে বিএনপির কোনো মেয়র প্রার্থী না থাকলেও দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে এখানে ২৯ নেতা কাউন্সিলর পদে ভোটে লড়ছেন। এই ২৯ নেতাকেই বিএনপি দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করেছে। গাজীপুরে ভোট হবে ২৫ মে। এই সিটিতে মোট ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন।
বরিশাল সিটির নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া মেয়র প্রার্থী খায়ের আবদুল্লাহর পক্ষে এখনো মাঠে নামেননি জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা। নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এলেও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে দলীয় কোন্দল আরও বেগবান হচ্ছে। এমনকি প্রকাশ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাতে জড়াচ্ছেন তাঁরা। দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে বরিশালে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিও পালন করা হয়েছে। গতকাল বুধবার নগরে পৃথক আলোচনা সভা করেছেন সিটি নির্বাচনে দল মনোনীত প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত ও বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর অনুসারী জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ।
বরিশাল সদর রোডে সার্কিট হাউসের সামনে প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে আলোচনা সভা করেন খায়ের আবদুল্লাহর অনুসারী নেতা-কর্মীরা। অন্যদিকে বিকেল চারটায় নগরের সোহেল চত্বরে দলীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করেন সাদিক আবদুল্লাহর অনুসারী জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ।
থমথমে পরিবেশ বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে, মনোনয়ন দৌড়ে চাচার কাছে হেরে গেছেন সাদিক আবদুল্লাহ। সেই থেকেই চলছে আওয়ামী লীগের সংকট।
এরইমধ্যে নৌকার প্রার্থী খায়ের আব্দুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাতের কর্মীদের ওপর পিস্তল ঠেকিয়ে অতর্কিতভাবে কুপিয়ে জখম করার ঘটনা ঘটে গেছে।
ওই ঘটনায় মহানগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রইজ আহমেদ মান্নাসহ ১০ জনকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা বরিশাল সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর অনুসারী বলে জানা যায়।
গত ১৪ মে গভীর রাতে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াত সাদিক আব্দুল্লার বাসার পেছন থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
প্রসঙ্গত, এরই মধ্যে বরিশালে সিটি ভোটের মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের কাজ শেষে করেছে ইসি। দশজন প্রার্থী মনোনয়ন কিনেছিলেন। এখানে বৈধ করা হয়েছে ছয়জনের প্রার্থীতা। এখন টিকে আছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত, জাতীয় পার্টির প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন তাপস, ইসলামী আন্দোলনের মুফতী সৈয়দ ফয়জুল করীম, জাকের পার্টির মিজানুর রহমান বাচ্চু, স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক মেয়র আহসান হাবীব কামালের ছেলে কামরুল আহসান রুপন ও আলী হোসেন হাওলাদার। আগামী ১২ জুন বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট হবে। এই সিটিতে মোট ভোটার ২ লাখ ৭৪ হাজার ৪০৭ জন।