মার্চ ৯, ২০২৩, ০৪:০৫ পিএম
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজারে ভবন বিস্ফোরণের ঘটনায় ভবনমালিক দুই ভাই ওয়াহিদুর রহমান ও মতিউর রহমান এবং ভবনের একটি দোকানমালিক আবদুল মোতালিব হোসেন ওরফে মিন্টুকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টার।
গোয়েন্দা প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ভবনের আন্ডারগ্রাউন্ডে পার্কিং প্লেস না রেখে সেখানে কাঁচে ঘিরে স্যানেটারি ব্যবসার জন্য ভাড়া দেওয়া হয়েছিল। সেখানে ভেন্টিলেশনের কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। ভবনের সেপটিক ট্যাংকও কখনো পরিষ্কার করা হয়নি। এ অবস্থায় বিস্ফোরণের দায়-দায়িত্ব ভবন মালিক বা ওখানকার ব্যবসায়ীরা এড়াতে পারে না।
তিনি আরও বলেন, সবকিছু বিবেচনায় জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অবহেলাজনিত একটি মামলা দায়ের করে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হবে।
সংবাদ সম্মেলনে গোয়েন্দা প্রধান আরও জানান, বাড়ির মালিকরা টাকার লোভে আন্ডারগ্রাউন্ডকে এক সময় রান্নাঘর হিসেবে ব্যবহার করেছেন। সেই রান্নাঘরের গ্যাসের লাইন যথাযথভাবে অপসারণ না করে তার ওপরেই সম্পূর্ণ এয়ার টাইট এসি করা নির্মাণ সামগ্রীর মার্কেট বানিয়ে দিয়েছেন। দোকানের মালিক বিল্ডিং কোডের বিধান না মেনে ভাড়া নিয়ে বেজমেন্টের ১ ইঞ্চি জায়গাকেও ফাঁকা না রেখে ডেকোরেশন করে দোকান বানিয়ে সেখানেই তার কর্মচারী ও ক্রেতা সাধারণের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছেন।
কুইন্স স্যানেটারি মার্কেটের আন্ডারগ্রাউন্ড বিস্ফোরণের উৎসস্থল বলে জানিয়ে মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, বেজমেন্টের এই স্পেসটি রাজউকের বিধান অনুসারে খোলামেলা থাকলে সেখানে কোনো ত্রুটি দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে নিরসন করা যেত। বায়ু গ্যাসসহ অন্যান্য সমস্যারও সমাধান করা যেত।
গোয়েন্দা প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আরও বলেন, এতগুলো প্রাণের হানি ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি তাই ভবনের মালিক এবং দোকানদারের স্বেচ্ছাচারিতা, লোভ এবং অবহেলারই ফল। জান এবং মালের এ ক্ষতির অভিযোগে ভবন মালিক ওয়াহিদর রহমান মতিউর রহমান এবং দোকান মালিক আব্দুল মোতালেব মিন্টুকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আটক করা হয়।
এর আগে ভবনটির মালিক, তত্ত্বাবধানকারী ও কয়েক দোকানিকে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তারপর আজ ওয়াহিদুর রহমান, মতিউর রহমান ও আবদুল মোতালিব হোসেন মিন্টুকে গ্রেপ্তারের কথা জানানো হয়।
ভবনটির মালিক প্রয়াত রেজাউর রহমান। বর্তমানে তাঁর তিন ছেলে ওয়াহিদুর রহমান, মশিউর রহমান ও মতিউর রহমান এই ভবনের মালিক। তাঁদের মধ্যে বড় ভাই ওয়াহিদুর রহমান ও ছোট ভাই মতিউর রহমান ভবনটি পরিচালনা করেন। মেজ ভাই মশিউর রহমান লন্ডনপ্রবাসী।
গত মঙ্গলবার (৭ মার্চ) বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে গুলিস্তানে বিআরটিসির বাস কাউন্টারের কাছে সিদ্দিকবাজারে কুইন্স স্যানিটারি মার্কেট হিসেবে পরিচিত সাততলা ভবনে বিস্ফোরণ ঘটে।
এ বিস্ফোরণে ভবনটির পাশের সাততলা ও পাঁচতলা দুটি ভবনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কুইন্স মার্কেটের সাততলা ভবনটির বেজমেন্ট, প্রথম ও দ্বিতীয় তলা বিধ্বস্ত হয়। আর পাঁচতলা ভবনের নিচতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ভবনের দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম তলা পর্যন্ত ব্র্যাক ব্যাংকের কার্যালয়।
এ বিস্ফোরণে আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ২২ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে। আহত হয়েছে শতাধিক ব্যক্তি।