রাজধানীর অদূরে সাভারের বহুল আলোচিত রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ৯ বছর পূর্তির দিন আজ ২৪ এপ্রিল। রানা প্লাজা ধসে ১১শর বেশি পোশাক শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় করা দুটি মামলার বিচার শেষ হয়নি ৯ বছরেও। দীর্ঘ এই সময়ে মামলার মোট ৫৯৪ জন সাক্ষীর মধ্যে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে মাত্র একজনের। বিচার না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আহত শ্রমিক ও নিহত শ্রমিকদের স্বজনেরা।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল ভবন ধসের পর দিন অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগ এনে রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানাসহ ২১ জনকে আসামি করে একটি মামলা করে সাভার থানা পুলিশ। এ মামলায় ৫৯৪ জন সাক্ষীর মধ্যে মাত্র একজনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। পরবর্তীতে ২০১৫ সালের রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ইমারত নির্মাণ আইনে ১৩ জনকে আসামি করে আরও একটি মামলা করে। তবে ওই মামলার কার্যক্রম এখনও স্থগিত বলে জানা গেছে।
চলতি বছরের গত ৩১ জানুয়ারি হত্যা মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হলেও ভবন নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগে করা মামলার বিচার এখনও হাইকোর্টের নির্দেশে স্থগিত। আদালত সূত্র জানায়, চার্জভুক্ত ৪১ আসামির মধ্যে দু'জন মারা গেছেন। মামলার প্রধান আসামি সোহেল রানা কারাগারে এবং ৩২ জন জামিনে ও ৬ জন পলাতক আছেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের ভাষ্য, আসামিরা নানাভাবে বিচার বাধাগ্রস্ত করছেন। একই মামলায় বেশ কয়েকজন আসামি পৃথকভাবে বিচারিক আদালতের বিভিন্ন পর্যায়ের আদেশ চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্ট থেকে দফায় দফায় স্থগিতাদেশ নিয়ে নিচ্ছেন। ফলে দুটি মামলার বিচারই থমকে রয়েছে।
অন্যদিকে, মহামারি করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণেও প্রায় দুই বছর বিচারিক আদালতের কার্যক্রমে স্থবিরতা ছিল। বিচারে দীর্ঘসূত্রতার কারণে সাক্ষীদের অনেককেই এখন তাদের ঠিকানায় পাওয়া যাচ্ছে না।
রানা প্লাজা ধ্বসে হত্যা মামলার তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের এপ্রিলে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ভবন মালিক, গার্মেন্ট মালিক, সরকারি কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন স্তরের ৪১ জনের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত হত্যার অভিযোগ এনে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। পরে ২০১৬ সালের ১৮ জুলাই আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার বিচারিক আদালত।
তবে ওই অভিযোগ গঠনের আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন ৮ আসামি। পরে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের কারণে প্রায় ৫ বছর হত্যা মামলার বিচারকাজ ঢাকার আদালতে বন্ধ ছিল।
পরবর্তীতে দীর্ঘ অপেক্ষার পর হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হলে গত গত ৩১ জানুয়ারি সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। তবে সাভারের সাবেক কাউন্সিলর মোহাম্মদ আলী হোসেনের আপিল এখনও উচ্চ আদালতে বিচারাধীনর রয়েছে।
এবিষয়ে বিচারিক আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের ভারপ্রাপ্ত পাবলিক প্রসিকিউটর বিমল সমাদ্দার গণমাধ্যমকে বলেন, গত ২৯ জানুয়ারি হত্যা মামলার বিচারকাজ শুরু হওয়ার পর গত ৩১ জানুয়ারি মামলার বাদী ও প্রধান সাক্ষী সাভার থানার তৎকালীন এসআই ওয়ালী আশরাফ খান সাক্ষ্য দেন।” আসছে ২৯ মে মামলার দুই থেকে পাঁচ নম্বর সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন ধার্য রয়েছে বলেও তিনি জানান।
রাষ্ট্রপক্ষের এই আইনজীবী আরও বলেন, “ সাক্ষীদের দুই দফা সমন জারি করা হলেও শুধুমাত্র দুই নম্বর সাক্ষী ছাড়া আর কেউ আসেননি। দীর্ঘদিন বিচারকাজ বন্ধ থাকায় সাক্ষীদের হাজির করাই এখন এই মামলার বিচারে বড় সমস্যা।” তবে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সাক্ষীদের হাজির করার জন্য সব ধরনের তৎপরতা চলছে বলেও তিনি জানান।
অপরদিকে, রানা প্লাজা নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগে করা দ্বিতীয় মামলায় ২০১৬ সালের জুনে ভবন মালিক সোহেল রানাসহ ১৮ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালত। এই মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে ১৩৫ জনকে। তবে অভিযোগ গঠনের আদেশের বিরুদ্ধে বজলুস সামাদ আদনানসহ তিন আসামি ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পৃথক তিনটি আবেদন করেন।
এ বিষয়ে সংশ্নিষ্ট আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আনোয়ারুল কবির বাবুল গণমাধ্যমকে বলেন, “ তিনটি রিভিশন আবেদনের মধ্যে দুটি উচ্চ আদালতে নিষ্পত্তি হয়েছে। তবে সাভারের সাবেক মেয়র আসামি রেফাতুল্লাহর আবেদনে হাইকোর্ট এক বছরের জন্য এই মামলার বিচারকাজে স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। আগামী ৭ নভেম্বর এর মেয়াদ শেষ হবে।” এ পর্যায়ে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে হাইকোর্টের ওই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের জন্য আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বলে তিনি জানান।