আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার দেশের মানুষের কোনো নিরাপত্তা দিতে পারছে না। বরং ক্ষমতায় থাকতেই বর্তমান সরকার সাম্প্রদায়িতাকে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। শনিবার (১৬ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘জনতার অবস্থান’ শীর্ষক এক সমাবেশে সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীরা এই অভিযোগ করেন।
দেশব্যাপী সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদে এবং ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার বন্ধের দাবিতে এই কর্মসূচির আয়োজ করা হয়।
অ্যাকটিভিস্ট মার্জিয়া প্রভার সঞ্চালনায় কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সভাপতি আরিফ মঈনুদ্দীন, ছাত্র ইউনিয়নের সহসভাপতি অনিক রায়, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সিপিবি নেতা বাকী বিল্লাহ, জলি তালুকদার, কবি রহমান মফিজসহ অনেকে।
কুমিল্লার ঘটনাটি সাজানো, তা শিশুরাও বুঝতে পারে-মন্তব্য করে গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সভাপতি আরিফ মঈনুদ্দীন বলেন, সরকার ফ্যাসিবাদী কায়দায় শাসন চালাচ্ছে। সচেতনভাবে সাম্প্রদায়িকতাকে তারা লালন-পালন করে টিকে আছে। শাসকগোষ্ঠী নানা হিসাবনিকাশ মেলাচ্ছে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে। তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে সাম্প্রদায়িকতাকে ব্যবহার করছে।
সমাবেশে ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি অনিক রায় বলেন, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম লক্ষ্য ছিল ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র গঠন। কিন্তু ৫০ বছরেও তা হয়নি। এই ব্যর্থতা শাসকগোষ্ঠীর, যারা ৫০ বছরের শাসনে দেশকে ধর্মনিরপেক্ষ করতে পারেনি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সমালোচনা করে অনিক আরও বলেন, ‘যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দেশের জনগণের উৎসবের নিরাপত্তা দিতে পারেন না, সেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর গণভবন-সচিবালয়ে সভায় বসার কতটুকু যোগ্যতা রয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে হয়। যে সরকার বাজারে, বাড়িতে, উৎসবে কোথাও মানুষের নিরাপত্তা দিতে পারে না, সেই সরকার থাকার আদৌ প্রয়োজন আছে কি?’
সমাবেশে সাম্প্রদায়িক সহিংতা দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সিপিবি নেতা বাকী বিল্লাহ। তিনি বলেন, ‘কুমিল্লার ঘটনা ও এর জেরে অন্যান্য জেলায় সাম্প্রদায়িক সহিংসতার সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনগুলো কী করছিল? ধর্মের নামে এত বড় অধর্ম হলো, ধর্মবিশ্বাসী মুসলমানেরা কী করছিলেন? এসব সহিংসতার বিরুদ্ধে আমাদের শক্ত প্রতিরোধ গড়তে হবে।’ সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকার আহবানও জানান তিনি।
সারা দেশে যে তাণ্ডব হয়েছে, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া তা সম্ভব নয় জানিয়ে সিপিবির আরেক নেতা জলি তালুকদার বলেন, ‘এর জবাব সরকারকে দিতে হবে। কোনো মানুষকে তারা নিরাপত্তা দিতে পারছে না। আজকের পরিস্থিতি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক।’
গত কয়েক দিনের বর্বরতা আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটিয়েছে উল্লেখ করে কবি রহমান মফিজ বলেন, ‘আমাদের অসাম্প্রদায়িকতার গর্ব আসলে মিথ্যা বুলি। প্রতিবছর শারদীয় দুর্গোৎসবের সময় আমাদের প্রতিবাদ কর্মসূচিতে দাঁড়াতে হয়। আর কতকাল দাঁড়াতে হবে, জানি না।
সাম্প্রদায়িক শক্তি কায়েমি স্বার্থ হাসিলের জন্য এ ধরনের ঘটনাগুলো ঘটায় মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, ‘সাধারণ মানুষ এসব হামলায় জড়িত নন। সামনে ভারতের ত্রিপুরায় বিধানসভা নির্বাচন। সেই নির্বাচন সামনে রেখে কোনো খেলা এখানে হচ্ছে কি না, সেটি আমাদের ভেবে দেখতে হবে।’