নভেম্বর ৫, ২০২১, ০৪:২৪ পিএম
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে সরকার সরাসরি জাড়িত। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে স্বৈরাচারী দল আখ্যা দিয়ে এমন মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। শুক্রবার (০৫ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে জাতীয়তাবাদী টেক্সটাইল অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ আয়োজিত এক মানববন্ধনে একথা বলেন তিনি।
আমীর খসরু বলেন, ‘দ্রব্যমূল্য বাড়ানোর সঙ্গে একটি স্বৈরাচারী সরকার সরাসরি জড়িত থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কারণ, যেখানে দল ও সরকার একাকার হয়ে যায়, সেখানে কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকেনা। তারাই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, তারাই লুটপাট করছে, তারাই জনগণের ভোট কেড়ে নিচ্ছে, জনগণের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে’।
যাদের দায়িত্ব দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা তারাই লুটপাট করছে এবং তারাই সরাসরি লুটপাটের সঙ্গে জড়িত বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
আওয়ামী লীগ সরকারের বিদায় ঘণ্টা বেজে গেছে মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, ‘যখন দেশ আন্দোলনের দিকে যায়, তখন আন্দোলন সফলতা পায়। সরকার পতনের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে’।
এসময় তিনি বলেন, ‘এ মানববন্ধনেই সরকার পতনের লক্ষণ দেখতে পাচ্ছি। নারীরা দাঁড়িয়ে আমাদের বক্তব্য শুনছেন, এটা কিন্তু একটা লক্ষণ। এটা অত্যন্ত ভালো লক্ষণ, অত্যন্ত শুভ লক্ষণ। সেটা আজকে আমি দেখতে পাচ্ছি’।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য আরও বলেন, ‘বিশ্বের ব্যয়বহুল ইনডেক্সে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে। দুর্নীতিতে যেমন শীর্ষে রয়েছে, তেমনি শীর্ষে রয়েছে পরিবেশ দূষণেও। সবকিছুর শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। এই যে পকেট লুটপাট, এটা বন্ধ হওয়ার নয়। আজ আসার সময় আমি দেখলাম, একটা বাসও নেই, লোকজনের কষ্টের শেষ নেই। ডিজেলের দাম ১৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এই টাকা বাংলাদেশের মানুষের পকেট থেকে যাবে এবং এই টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে লুটপাটের ব্যবস্থা করেছে তারা। কোনো টাকা দেশে থাকছে না। সব টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে।’
আমির খসরু বলেন, ‘আওয়ামী লীগের লুটেরারা পাঁচ লাখ ১০ লাখ, ২০ লাখ টাকা চুরি করছে না। তারা চুরি করছে শত শত কোটি টাকা। হাজারও কোটি টাকা। লক্ষ কোটি টাকা চুরি করছে। এত টাকা তো বাংলাদেশে রাখা সম্ভব না। এই টাকা তো বিদেশে পাচার করতেই হবে। সুতরাং, এখানে যে টাকা রাখবে না, খুবই স্বাভাবিক। এত বড় অঙ্কের টাকা বাংলাদেশে রাখা কোনদিনও সম্ভব হবে না। এটা বাইরে যেতেই হবে এবং সারা বিশ্বের যত জায়গায় দেখবেন, সব জায়গায় এদের টাকা আছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের টাকা। এমনকি সাধারণ আওয়ামী লীগ ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতারা যে পরিমাণ টাকা বিদেশে পাচার করছে, বড় নেতারা তো আছেই।’
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘এটার একটাই কারণ যে, বাংলাদেশের জনগণের কোনো সরকার নেই। সরকারের কোনো দায়বদ্ধতা নেই জবাবদিহিতা নেই । তারা বারবার জনগণের ভোট চুরি করে ক্ষমতা দখল করেছে। সেই ২০০৮ সালে করেছে, ১৪ সালে করেছে, ১৮ সালে করেছে এবং চুরি করতে করতে একদম পাকা চোরে পরিণত হয়েছে। চুরিতে পাকা হয়ে গেছে। বিএনপিকে নির্বাচনে যাওয়ার জন্য ডাক দেওয়া হয়েছিল। সেই ডাকে পরিষ্কারভাবে আমরা বলেছি, এই ভোটচোর ও দুর্নীতিবাজ সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। তাদের সঙ্গে কোনো আলোচনায় যাওয়া যাবে না। শুধু নিরপেক্ষ সরকার গঠনের আলোচনা হতে পারে।’
আমীর খসরু বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রত্যেকটি মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। তাদের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে, ভোটাধিকার জীবনের নিরাপত্তা কেড়ে নেওয়া হয়েছে, তাদের জীবনযাত্রার মান কেড়ে নেওয়া হয়েছে, তাদের বাকস্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। কেউ বাকি নেই, সবাইকে আন্দোলনে আসতে হবে। আন্দোলন বিএনপির একার দায়িত্ব না। কত সাংবাদিক দেশের বাইরে পালিয়ে গেছেন। বিশ্বের যেখানে যাবেন, সেখানে আমাদের সাংবাদিক ভাই-বোনেরা পলাতক অবস্থান করছেন। তাঁরা বাধ্য হয়েছেন, দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার জন্য। আর কত পালাবেন? আর পালাবেন না, এখন ঘুরে দাঁড়ান।’
খসরু বলেন, ‘এই ডিজেল তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে শুধু সাধারণ মানুষ বা যানবাহন মালিকেরা নন, সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে কৃষক। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাবে, সেটা আবার জনগণকে দিতে হবে। এতে সরকারের কোনো দায় নেই। এরা অব্যাহতভাবে করতে থাকবে, আর আমরা বলতে থাকব। এর থেকে মুক্তির পথ হচ্ছে এদের থেকে দেশকে মুক্ত করা। বিএনপির ডাকে অপেক্ষা করবেন না। বিএনপি অবশ্যই আন্দোলনের ডাক দেবে, আন্দোলনে যাবে। জনপ্রিয় দল হিসেবে বিএনপির দায়িত্ব আপনাদের মুক্ত করা। সেই দায়িত্বগুলো পালন করব। কিন্তু সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।’