বেক্সিমকোর শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধ করা হচ্ছে, সরকারের খরচ ৫২৫ কোটি টাকা

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২৫, ০৪:৫৫ পিএম

বেক্সিমকোর শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধ করা হচ্ছে, সরকারের খরচ ৫২৫ কোটি টাকা

ছবি: সংগৃহীত

দেশের অন্যতম শীর্ষ শিল্প গ্রুপ বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে লেঅফ ঘোষণা করা ১৪টি কারখানার ‘পুনর্বাসনে’ একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করেছে সরকার।

এসব কারখানার ৩১ হাজার ৬৬৯ জন শ্রমিক এবং এক হাজার ৫৬৫ জন কর্মকর্তার পাওনা ৫২৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকা পরিশোধেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার এম সাখাওয়াত হোসেন জানিয়েছেন।

বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রম ও ব্যবসায় পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বুধবারের সভার সিদ্ধান্তগুলো জানাতে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, “চলতি ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের লে অফকৃত ১৪টি প্রতিষ্ঠানে ৩১ হাজার ৬৬৯ জন শ্রমিক এক হাজার ৫৬৫ জন কর্মকর্তার পাওনা বাবদ ৫২৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকা প্রয়োজন। এই টাকা যোগাড় করেছে সরকার।

“এর মধ্যে শ্রম মন্ত্রণালয়ের তহবিল থেকে ২০০ কোটি ঋণ হিসাবে দেওয়া হচ্ছে। অর্থবিভাগ পরিচালন ব্যয় খাত থেকে বাকি ৩২৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে।”

উপদেষ্টা বলেন, “এই টাকা পাওয়ার পর আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, হ্যাঁ, আমরা পূর্ণ পাওনা দিতে পারব। আগামী ৯ মার্চ থেকে টাকা বিতরণ শুরু হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।”

বিদেশি কোনো প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগের মাধ্যমে শিগগিরই বেক্সিমকোর পুনর্বাসন শুরু হবে বলে আশা প্রকাশ করেন শ্রম উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, “এখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একটা ঝামেলা চলছে, দুই পরাশক্তির মধ্যে টানাপড়েন চলছে। আমরা আশা করি, অতিসত্ত্বর এ বিষয়ে বাইরের বিনিয়োগ পাব। যারা থেকে যাবেন তারা কিছু না কিছু পাবেন।”

এম সাখাওয়াত হোসেন জানান, পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে যে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে, তার প্রধান হিসাবে আছেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয় সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী।

এছাড়া সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের একজন প্রতিনিধি, বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন প্রতিনিধি, অ্যাটর্নি জেনারেলের পক্ষ থেকে উপযুক্ত প্রতিনিধি, রিসিভার হিসাব যিনি আছেন তিনি এই কমিটির সদস্য হিসাবে আছেন। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিডার চেয়ারম্যানকে কমিটির সদস্য সচিব করা হয়েছে।

শ্রম উপদেষ্টা বলেন, “এই কমিটি বেক্সিমকোর ভবিষ্যৎ নিয়ে কাজ করবেন। যতটুকু আমরা খবর পেয়েছি, ভালো কিছু হবে। কিছু কিছু লোক আগ্রহ দেখাচ্ছে। কমিটি সেটা আপানাদেরকে জানাবে।”

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে বেক্সিমকো গ্রুপের কোম্পানিগুলোতে অস্থিরতা চলছে।

এ গ্রুপের ভাইস-চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান ছিলেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা। তিনি গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যাওয়ার পর থেকে গ্রুপটির দৈনন্দিন কাজ পরিচালনায় বিঘ্ন ঘটছে। কোম্পানির পরিচালকদের অনেকেই রয়েছেন আত্মগোপনে।

অনেকগুলো অ্যাকাউন্ট অবরুদ্ধ থাকায় এলসি খুলতে পারছে না কোম্পানি। ব্যাংক থেকে টাকা পাওয়া বন্ধ হওয়ায় নগদ অর্থের সংকটে পড়েছে বেক্সিমকো গ্রুপের কোম্পানিগুলো। শ্রমিক-কর্মচারীরা বকেয়া বেতনের দাবিতে কয়েক দফা বিক্ষোভ কর্মসূচিও পালন করেছেন।

এ অবস্থায় অন্তর্বর্তী সরকার গত ২৪ নভেম্বর ‘বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রম ও ব্যবসায় পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি’ গঠন করে। ১১ সদস্যের এই কমিটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেন।

সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় কমিটি বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ১৪টি কারখানায় লে অফ ঘোষণা করে। সেই সঙ্গে কর্মীদের বকেয়া বেতন দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

আদালতের আদেশে তার আগেই বেক্সিমকো গ্রুপে বসানো হয় রিসিভার। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এ গ্রুপের তিন কোম্পানি বেক্সিমকো লিমিটেড, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস ও শাইনপুকুর সিরামিকসই সচল রাখতে স্বতন্ত্র পরিচালক বসানো হয় বোর্ডে।

পুরো উৎপাদনে না থাকায় সবশেষ ছয় মাসে ফের লোকসান দিয়েছে বেক্সিমকো লিমিটেড। গত জুলাই-ডিসেম্বরে মোট ৩৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকার লোকসান গুনেছে এ কোম্পানি।

সরকার গঠিত তদন্ত কমিটির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বেক্সিমকোর ঋণ রয়েছে ৪০ হাজার কোটি টাকা, এসব এখন খেলাপি হতে শুরু করেছে।

Link copied!