মার্কিন শুল্ক কমলেও আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই: বিজিএমইএ

অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক

আগস্ট ২, ২০২৫, ০৬:০৮ পিএম

মার্কিন শুল্ক কমলেও আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই: বিজিএমইএ

বাংলাদেশি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের সম্পূরক শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও এটি নিয়ে আত্মতুষ্টির কোনো সুযোগ দেখছে না বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি—বিজিএমইএ।

শনিবার ঢাকায় বিজিএমইএর প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক নির্বাহী আদেশে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, কিছু দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত আলোচনা এখনো চলমান।

তিনি বলেন, “যদি এসব আলোচনা সফলভাবে শেষ হয়, তবে সেসব দেশের জন্য শুল্ক আরও কমে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশকেও আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে।”

উল্লেখ্য, দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের পর গত ২ এপ্রিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শতাধিক দেশের পণ্যের ওপর উচ্চ হারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। এতে বাংলাদেশের পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক নির্ধারিত হয়।

পরবর্তীতে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা শুরু হয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের দাবি অনুযায়ী বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে বাংলাদেশ কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করে। কয়েক দফা বৈঠকের পর গত বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটন ঘোষণা দেয়, বাংলাদেশি পণ্যের ওপর শুল্ক কমিয়ে ২০ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে।

এই সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র উভয় সরকারকে ধন্যবাদ জানালেও মাহমুদ হাসান খান বলেন, “২০ শতাংশ শুল্ক এখনো আমাদের জন্য বোঝা। এটি রপ্তানিকারকদের উৎপাদন ব্যয় বাড়িয়ে দেবে।”

তিনি আরও বলেন, “সরকারকে অবশ্যই উদ্যোগ নিতে হবে যাতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি পোশাক কারখানাগুলো এই চাপ সহ্য করতে পারে এবং ব্যবসা থেকে ছিটকে না পড়ে। নীতিগত সহায়তা অব্যাহত রাখা, এনবিআরসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ-গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করাও জরুরি।”

বিজিএমইএ সভাপতি জানান, ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপের ফলে বাংলাদেশ এখন তার প্রধান প্রতিযোগী দেশগুলোর—যেমন চীন ও ভারতের—সঙ্গে তুলনামূলকভাবে সমমানের অবস্থানে এসেছে। বর্তমানে বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ২০ শতাংশ আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে, যার ৮৭ শতাংশই তৈরি পোশাক।

তিনি আরও জানান, ট্রাম্প প্রশাসন শুরুতে বাংলাদেশের ওপর ৩৭ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করেছিল। পরে তিন মাসের জন্য তা স্থগিত করে আলোচনার সুযোগ দিলেও এ নিয়ে রপ্তানিকারকদের মধ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়।

পরবর্তীতে শুল্ক ৩৫ শতাংশে নামানো হয়, তবে আলোচনায় গোপনীয়তা রক্ষার শর্ত থাকায় সরকার বেসরকারি খাতকে এতে সম্পৃক্ত করেনি এবং খসড়া চুক্তির কোনো তথ্যও প্রকাশ করেনি বলে জানান তিনি।

মাহমুদ হাসান বলেন, বিজিএমইএর উদ্যোগেই পরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় সহায়তার জন্য একটি লবিস্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।

বর্তমানে মোট শুল্ক কত?

বিজিএমইএ সভাপতির মতে, এর আগে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ গড়ে ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ ‘মোস্ট ফেভারড নেশন’ (MFN) শুল্ক দিত। নতুন ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক যুক্ত হওয়ায় এখন মোট শুল্কের গড় হার দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৬ দশমিক ৫ শতাংশ, যদিও পণ্যের ধরন অনুযায়ী এই হার ভিন্ন হতে পারে।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যে পোশাক রপ্তানি হয়, তার প্রায় ৭৫ শতাংশ তুলাভিত্তিক। নতুন নির্বাহী আদেশে বলা হয়েছে, যদি অন্তত ২০ শতাংশ আমেরিকান কাঁচামাল (যেমন তুলা) ব্যবহার করা হয়, তবে ওই অংশে অতিরিক্ত ২০ শতাংশ শুল্ক প্রযোজ্য হবে না। অর্থাৎ আমেরিকান কাঁচামাল ব্যবহারে আংশিক শুল্ক ছাড় পাওয়া সম্ভব।”

Link copied!