হাদির অবস্থা অপরিবর্তিত, উন্নতি হলে বিদেশে নেওয়ার পরিকল্পনা

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

ডিসেম্বর ১৪, ২০২৫, ১২:৫০ পিএম

হাদির অবস্থা অপরিবর্তিত, উন্নতি হলে বিদেশে নেওয়ার পরিকল্পনা

দুর্বৃত্তের গুলিতে গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির শারীরিক অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। পরিস্থিতির উন্নতি হলে তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল জাবের আজ রোববার সকালে প্রথম আলোকে এসব তথ্য জানান। তিনি বর্তমানে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওসমান হাদির পাশে অবস্থান করছেন।

রোববার সকাল ১০টার দিকে ইনকিলাব মঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ওসমান হাদি এখনো আশঙ্কামুক্ত নন। চিকিৎসকেরা তাঁকে ৭২ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখার কথা জানিয়েছেন, যা আগামীকাল সোমবার রাতে শেষ হবে।

আবদুল্লাহ আল জাবের বলেন, ওসমান হাদি এখনো আগের মতোই ডিপ কোমায় রয়েছেন। তাঁর শারীরিক অবস্থার উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নতি হয়নি, তবে কিছু ইন্টারনাল রেসপন্স দেখা যাচ্ছে।

পরিবার ও ইনকিলাব মঞ্চের পক্ষ থেকে ওসমান হাদিকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তবে তাঁর শারীরিক অবস্থা বিদেশে নেওয়ার উপযোগী হলেই এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে।

গত শুক্রবার দুপুরে ঢাকার বিজয়নগরে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরপরই ওসমান হাদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান তখন জানান, একটি গুলি ওসমান হাদির কানের ডান পাশ দিয়ে ঢুকে মাথার বাঁ পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়। নিউরোসার্জারি বিভাগের চিকিৎসকেরা সেখানে তাঁর প্রাথমিক অস্ত্রোপচার করেন।

সেদিন সন্ধ্যায় তাঁকে এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে তিনি সেখানে ভেন্টিলেটর সাপোর্টে আছেন। তাঁর চিকিৎসার জন্য একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। একই হাসপাতালে বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াও চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

খালেদা জিয়া ও ওসমান হাদির খোঁজখবর নিতে এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে ভিড় করছেন বিভিন্ন জেলার মানুষ। তাঁদের মধ্যে লন্ডনপ্রবাসী ভাইকে নিতে ঢাকায় আসা সিলেটের সোহেল আহমেদকে হাসপাতালে দেখা যায়। তিনি বলেন, ওসমান হাদির খোঁজ নিতে তিনি হাসপাতালে এসেছেন এবং খালেদা জিয়াও এখানে চিকিৎসাধীন থাকায় দুজনের জন্যই তিনি উদ্বিগ্ন।

সোহেল আহমেদ বলেন, ওসমান হাদি একজন প্রতিবাদী মানুষ। যারা দেশের ভালো চায় না, তারাই তাঁকে হত্যার চেষ্টা করছে। তিনি এ ঘটনাকে নৃশংসতা হিসেবে উল্লেখ করেন। পাশাপাশি তিনি বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া গণতন্ত্রের মানসকন্যা এবং দেশের জন্য তাঁর প্রয়োজন এখনো রয়েছে। দুজনের সুস্থতা কামনায় তিনি দোয়ার কথা জানান।

জুলাই অভ্যুত্থানে সক্রিয় ভূমিকা রাখা ওসমান হাদি গত বছরের আগস্টে ইনকিলাব মঞ্চ গঠন করেন এবং পতিত আওয়ামী লীগ ও ভারতের বিরুদ্ধে সরব হন। তিনি কোনো রাজনৈতিক দলে যোগ না দিয়ে ঢাকা–৮ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছিলেন। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার পরদিনই তিনি গুলিবিদ্ধ হন।

ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনায় পুলিশ সন্দেহভাজন হিসেবে ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান নামে একজনকে চিহ্নিত করেছে। হামলাকারীর বিষয়ে তথ্য দিতে সরকার ৫০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে। হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল শনাক্ত করে এর মালিককে আটক করা হয়েছে বলেও পুলিশ জানিয়েছে।

ওসমান হাদির সমর্থকেরা এই হামলার জন্য পতিত আওয়ামী লীগকে দায়ী করছেন। অন্তর্বর্তী সরকার এ ঘটনাকে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে। এ ঘটনায় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি নিন্দা জানিয়ে যেকোনো ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলার অঙ্গীকার করেছে।

Link copied!