দেশে হঠাৎ সুতার দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বিপাকে পড়েছে নিট পোশাক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। শুধু দাম বৃদ্ধিই নয় বরং কৃত্রিম সংকটের মাধ্যমে গার্মেন্টস খাতগুলোকে জিম্মি করে রাখার অভিযোগ করা হয়েছে। এ নিয়ে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য দিচ্ছে সংগঠনগুলো।
কৃত্রিম সংকটের অভিযোগ
করোনাকালীন সময়ে সুতার চাহিদা কম থাকায় অনেক প্রতিষ্ঠান সাময়িক লোকসানে পড়েছিল। এখন সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছে বলে জানায় বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্রাকচারস এন্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশন (বিকেএমইএ)
নিট গার্মেন্ট মালিকদের বৃহত্তম সংগঠন বিকেএমইএ সভাপতি সেলিম ওসমান বলেন, স্পিনিং মিল মালিকরা আগের লোকসান পুষিয়ে নিতে কৃত্রিম সংকট তৈরি করছেন। এতে ব্যক্তি গার্মেন্ট মালিকরা যত না ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, এর চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে রাষ্ট্র। শিগগিরই এ বিষয়ে সমঝোতায় না পৌঁছলে ভবিষ্যতে পাটের মতো নিট শিল্পও ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।
দেশে তুলার দাম দেড়গুণ বৃদ্ধি
২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে চলমান আগস্ট এই নয় মাসে তুলার দাম বেড়েছে ৪৭ শতাংশ। এ তুলা থেকে সুতা উৎপাদন করে দেশের স্পিনিং মিলগুলো, যার দাম গত নয় মাসে বেড়েছে ৩৭ শতাংশ। যার ফলে গার্মন্টসখাতগুলোতে আগের তুলনায় দেড়গুণ বেশি দাম দিয়ে কাঁচামাল ক্রয় করা লাগছে।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমইএ) সূত্রে বলা হয়, সুতার মূল্যবৃদ্ধি সম্পর্কে বিভিন্ন অজুহাত তৈরি ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রদান করা হচ্ছে। পাশাপাশি বেনাপোলসহ সব স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানি ও সুতার পার্শিয়াল শিপমেন্ট অনুমোদন পাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এর বিরোধিতা করে বিটিএমইএ জানায়, আংশিক শিপমেন্টের অনুমোদন দেয়া হলে একটি এলসির বিপরীতে কয়েকটি চালানে একই এলসির সুতার নামে সুতার অনেক ট্রাকের অনুপ্রবেশ হবে, যা অতীতে হয়েছে তার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনীত সুতা স্থানীয় বাজারে বিক্রির কারণে দেশীয় স্পিনিং মিলগুলো অসম প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হয়ে একসময় বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সিন্ডিকেটে দাম বৃদ্ধির অভিযোগ
দেশের সুতা ব্যবসার প্রধান কেন্দ্র নারায়ণগঞ্জে একটি সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে আছে অনেক শিল্প মালিকরা। চোরাই সুতা ও মজুতকারী এই সিন্ডিকেটের কারণে অস্বাভাবিক হয়েছে সুতার। বিকেএমইএ’র সভাপতি সেলিম ওসমান বলেন, সুতার মূল্য প্রধানত তুলার ওপর নির্ভর করে। দেশে বেশির ভাগ তুলা আমদানি হতো উজবেকিস্তান থেকে। কিন্তু তারাই সেখানে প্রচুর স্পিনিং মিল তৈরি করায় তুলা সেখান থেকে আসছে না। পাশাপাশি চীনও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে অতিরিক্ত তুলা ও সুতা মজুত করেছে। গত কয়েক বছর এসব কারণে দেশের স্পিনিং মিল মালিকরা লোকসান গুনেছেন। ফলে এখন যখন সুতার সংকট, তারা মোনোপলি ব্যবসার সুযোগ নিয়ে আগের লোকসান পূরণ করতে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছেন। এটা পুরোপুরি অনুচিত। কারণ, তাদের কাছে রিজার্ভ তুলা থাকে। ওই তুলার ও তৈরি সুতার সঙ্গে দাম বৃদ্ধি করে ফেলেছে।
বাংলাদেশ ইয়ার্ন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ও হাজি হাশেম স্পিনিং মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ সোলায়মান বলেন, ‘সুতার সংকট স্পিনিং মিলের মালিকরা তৈরি করেননি। এটা তুলার দাম ও সরবরাহের ওপর নির্ভরশীল। আন্তর্জাতিক বাজারে তুলার দাম বেড়েছে ও সরবরাহ খুব কম। কীভাবে সুতা তৈরি করব, আগামী তিন মাস পর্যন্ত তুলার কোনো এলসি নেবে না। তিন মাস পর এলসি খুললেও সেই সুতা হাতে পাব সামনের বছর। কীভাবে তাহলে সুতার সরবরাহ বাড়াব।
কত দাম বৃদ্ধি পেল সুতার
বিটিএমএ জানিয়েছে, গত বছরের ডিসেম্বরে তুলার মূল্য ছিল প্রতি কেজিতে ১ দশমিক ৬৫ ডলার, যা এ মাসে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ২ দশমিক ৪৩ ডলার। অর্থাৎ এক্ষেত্রে তুলার দাম বেড়েছে ৪৭ শতাংশ। একই সময়ে তার বিপরীতে সুতার মূল্য ছিল (ডিসেম্বর, ২০২০) প্রতি কেজিতে ৩ দশমিক ১০ ডলার ও আগস্টে (২০২১) প্রতি কেজিতে ৪ দশমিক ২৫ ডলার। অর্থাৎ এক্ষেত্রে সুতার দাম বেড়েছে ৩৭ শতাংশ। তথ্যটি বিশ্লেষণ করলে তুলার মূল্যবৃদ্ধির বিপরীতে সুতার মূল্যবৃদ্ধির হার ১০ শতাংশ কম। সর্বোপরি সমিতির তথ্যানুযায়ী গত পাঁচ মাসে সুতার মূল্য গড়ে বৃদ্ধি হয়েছে ৫ সেন্টস করে।