ঈদের পর কঠোর বিধিনিষেধে শিল্পকারখানা বন্ধ রাখলে এক মাসের রপ্তানি শিডিউল গড়বড় হবে। এ কারণে পরবর্তী ছয় মাস নেতিবাচক প্রভাব টানতে হবে। এতে শুধু পোশাক খাতেই প্রায় ২ হাজার ১৬০ কোটি ডলার বা পৌনে ২ লাখ কোটি টাকার রপ্তানি আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন উদ্যোক্তারা। প্রধানমন্ত্রীর কাছে বস্ত্র ও পোশাক খাত সংশ্লিষ্ট পাঁচটি রপ্তানিকারক সংগঠনের পক্ষে দেওয়া এক যৌথ চিঠিতে এ আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে।
শনিবার নথিভুক্ত হয় চিঠি
বৃহস্পতিবার রাতে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে সংশ্লিষ্ট খাতের উদ্যোক্তারা চিঠিটি পাঠিয়েছেন। শনিবার এটি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে নথিভুক্ত করা হয়। চিঠিটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবকেও দেওয়া হয়েছে। সংগঠনগুলো হলো-বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ), বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ), বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ), বাংলাদেশ গার্মেন্ট এক্সেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি এবং বাংলাদেশ টেরিটাওয়েল অ্যান্ড লিনেন প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি।
করোনায় রপ্তানির ধারা অব্যাহত রয়েছে
চিঠিতে বলা হয়, দেশের মোট রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ৩ হাজার ২৬২ কোটি ডলার। এর মধ্যে নিটওয়্যার, ওভেন, টেরিটাওয়েল ও হোম টেক্সটাইল মিলে আয় ৮৪ দশমিক ১৭ শতাংশ। জুলাইয়ের প্রথম ১৪ দিনে এ খাত থেকে ১৬৭ কোটি ১৩ লাখ ২০ হাজার ডলার আয় হয়েছে। এ হিসাবে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১২ কোটি ডলার রপ্তানি আয় হয়েছে। এ হিসাবে মাসে আয় হয় ২৫৮ কোটি ডলার। ছয় মাসে ২ হাজার ১৫০ কোটি ডলার, যা স্থানীয় মুদ্রায় ১ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা।
চিঠিতে আরও বলা হয়, গত বছরের জুনের তুলনায় চলতি বছরের জুনে রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি ১২ দশমিক ৩৯ শতাংশ। রপ্তানির ধারা অব্যাহত রয়েছে। করোনা মহামারির কারণে গত ১৫ মাসে বিশ্ববাজারের ক্রেতারা উৎপাদন খরচের চেয়ে কম মূল্য দিলেও বাজার ধরে রাখতে, টিকে থাকতে ও শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতনভাতা দেওয়ার স্বার্থে লোকসান দিয়েও কারখানা চালু রাখা হয়েছে। এ সময় অনেকেই ধাক্কা সামাল দিতে না পেরে কারখানা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। এখন আবার করোনার ধাক্কা সামাল দিয়ে ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিশ্বের সব দেশের বাজার খুলেছে। এখন প্রত্যেক উদ্যোক্তার হাতেই রয়েছে পর্যাপ্ত রপ্তানির কার্যাদেশ। পণ্য জাহাজীকরণের চাপও রয়েছে। ক্রেতা ধরে রাখতে বেশি খরচে বিমানে পণ্য পাঠাতেও দেরি করছেন না উদ্যোক্তারা। এমনিতেই আন্তর্জাতিক বাজারে সুতার দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি, কনটেইনার ও জাহাজ সংকটে রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
শীতকালীন অর্ডার হাতছাড়া হবার আশঙ্কা
ঈদের ছুটিসহ প্রায় ১৮-২০ দিন কারখানা বন্ধ থাকলে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়তে হবে। এতে পোশাক বিক্রির প্রধান উপলক্ষ্য বড়দিন ও আসন্ন শীতকালের পোশাক রপ্তানির বাজার হাতছাড়া হয়ে যাবে। কারণ এক মাসের রপ্তানি শিডিউল গড়বড় হলেই পরবর্তী ছয় মাসের শিডিউলে বিপর্যয় দেখা দেবে। ফলে এর সুযোগ নেবে প্রতিযোগী দেশগুলো। এর আগে ভারতে করোনাভাইরাসের প্রকোপ ও মিয়ানমারের রাজনৈতিক সংকটে বাংলাদেশও এ সুযোগ নিয়েছে। এ অবস্থায় কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখী হবে দেশের রপ্তানি খাত। দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা অনেক উদ্যোক্তার।
লম্বা ছুটিতে কর্মস্থলে ধরে রাখা অসম্ভব
চিঠিতে বলা হয় পোশাক খাতের শ্রমিকরা দিনের প্রায় ১১ ঘণ্টাই তারা কর্মস্থলে থাকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে। যতক্ষণ কর্মস্থলে থাকে, ততক্ষণ নিরাপদ পরিবেশে থাকে। অযথা কোথাও যাতায়াত করার সুযোগ নেই। গত রোজার ঈদের কাজের চাপ কিছুটা কম থাকায় ছুটি কিছুটা শিথিল ছিল। এখন কাজের চাপ বেশি থাকায় লম্বা ছুটির সুযোগ নেই। এখন ১৮-১৯ দিন ছুটি দিলে কোনো ক্রমেই তাদের কর্মস্থলে ধরে রাখা সম্ভব হবে না। ছুটে যাবে দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে। যেখানে করোনার সংক্রমণ বেশি। পরে তারা কর্মস্থলে ফিরলে করোনার সংক্রমণ আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।