২৫ হাজার টাকার বাকি খেয়ে পাঁচ হাজার টাকায় সমঝোতা ছাত্রলীগ নেতার

রাবি প্রতিনিধি

ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৪, ০৭:৫৭ পিএম

২৫ হাজার টাকার বাকি খেয়ে পাঁচ হাজার টাকায় সমঝোতা ছাত্রলীগ নেতার

ছবি: রাবি প্রতিনিধি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ হবিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মিনহাজের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে ক্যান্টিনে ২৫ হাজার টাকা বাকি ও বিনা টাকায় (ফ্রি) খাবার খাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা মিনহাজুলের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করেন হলের ক্যান্টিন মালিক মো. আলতাফ হোসেন। পরে এ বিষয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হলে ওই ছাত্রলীগ নেতা পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে সমঝোতা করেন বলে জানিয়েছেন ক্যান্টিন মালিক।  

২০০৮ সাল থেকে হবিবুর রহমান হল ক্যান্টিনটি পরিচালনা করছেন ভুক্তভোগী মো. আলতাফ হোসেন। 

তিনি বলেন, মিনহাজ হলে উঠার পর থেকে আমার ক্যান্টিনে বাকি খাচ্ছে। তাঁর নামে প্রায় ২০-২৫ হাজার বাকি পড়ে গেছে। বার বার বলার পরেও মিনহাজ টাকা পরিশোধ করেননি। এরপর থেকে ক্যান্টিনে খাবার খেলে বাকির খাতায় তা আর লিপিবদ্ধ করতেন না তিনি। মিনহাজের দেখাদেখি হলের আরেক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা সোহান হাসানও তিন-চার দিন বিনা টাকায় খাবার নিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

সমঝোতার বিষয়ে ক্যান্টিন মালিক বলেন, বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রচার হওয়ার পর শনিবার বিকালে অভিযুক্তরা আমাকে ডেকে নিয়ে বাকির পাঁচ হাজার টাকা দিয়েছেন। পর্যায়ক্রমে বাকির অবশিষ্ট টাকা পরিশোধ করবেন বলে জানান অভিযুক্ত মিনহাজ।  

অভিযুক্ত মিনহাজুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি হবিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর পক্ষ থেকে ওই হল দেখভালের দায়িত্ব পালন (দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা) করছেন তিনি। 

আরেক ছাত্রলীগ নেতা সোহান আহমেদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি ওই হল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিবের পক্ষ থেকে ওই হল দেখভালের দায়িত্ব (দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা) পালন করছেন। 

তবে ক্যান্টিনে এত টাকা বাকি নেই উল্লেখ করে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা মিনহাজুল ইসলাম বলেন, আমার নামে ক্যান্টিনে তিন-চারশত টাকা বাকি থাকতে পারে। বাকি খাচ্ছি আবার মাঝে মাঝে টাকা পরিশোধও করছি। তবে একজন প্রতিবন্ধী ও একজন গরিব শিক্ষার্থীকে বিনা টাকায় খাবার খাওয়ানোর জন্য সুপারিশ করেছি। এটিই হয়তো তিনি বাকির খাতায় লিখে রেখেছেন। এছাড়া পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে সমঝোতার বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।  

জানতে চাইলে অভিযুক্ত আরেক ছাত্রলীগ নেতা সোহান হাসান বলেন, ‘আমি কখনো ক্যান্টিন থেকে বিনা টাকায় খাবার খাইনি। যদি কেউ আমার নামে খাবার  খেয়ে থাকে, সে বিষয়ে আমি অবগত নই।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এক গরিব শিক্ষার্থী এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শারীরিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী ওই হলের ক্যান্টিনে ও ডাইনিংয়ে বিনামূল্যে খাবার খায়। তাঁরা তাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়, এ মর্মে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিষয়টি অবগত করেন। পরে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতার সুপারিশে তারা ওই হলে নিয়মিত খাবার খাচ্ছেন। 

বিনা টাকায় খাবার খাওয়ার বিষয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমার পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুবই শোচনীয়। বিষয়টি ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকে জানালে তারা আমাকে ক্যান্টিনে বিনামূল্যে খাবার খাওয়ানোর জন্য সুপারিশ করেন। তারপর থেকে ক্যান্টিনে আমি নিয়মিত খাবার খাচ্ছি।

এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও কোনো সাড়া দেননি তিনি।

শহীদ হবিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘অনেকদিন আগে ডাইনিং ও ক্যান্টিনের কর্মচারীরা এ বিষয়ে আমার কাছে মৌখিক অভিযোগ করেছিলেন। পরে অভিযুক্তদের ডেকে এনে বিষয়টি জানতে চাইলে তারা অস্বীকার করে। ডাইনিং ও ক্যান্টিন কর্তৃপক্ষকে বলে দিয়েছি, যেন তাদেরকে বাকি ও বিনা টাকায় না খাওয়ায়।’ 

আর দুইজন শিক্ষার্থীর বিনামূল্যে খাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি প্রাধ্যক্ষ হিসেবে যোগদানের আগে থেকে মানবিক বিবেচনায় ওই শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে খাওয়ানো হয়। যদিও এ ব্যাপারে হলের কোনো আইন নেই।’

Link copied!